NATUNGRAM WOODEN DOLL

লড়ে যাচ্ছে নতুনগ্রাম, ঐতিহ্য বজায় কাঠের পুতুলের

জেলা

NATUNGRAM WOODENDOLL

আলেক শেখ

পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর নতুনগ্রাম যেন কাঠের পুতুলের দেশ। এই গ্রামে ঘরে ঘরে দিন-রাত এক করে তৈরি হচ্ছে কাঠের পুতুল। নতুনগ্রামের পরিচয় কাঠের পুতুলের জন্যে, যা বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কাঠের পুতুল তৈরি করতে করতে গ্রামের নামই হয়ে গিয়েছে কাঠের পুতুলের গ্রাম। অধিকাংশ গ্রামবাসীই কাঠের পুতুল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কাঠ কেটে তৈরি হয় রাধাকৃষ্ণ, গৌড় নিতাই, জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা, বর-কনে কাঠের পেঁচা আরো নানান রকমের পুতুল। কাঠের পুতুল তৈরিতে বিখ্যাত হয়ে ওঠা পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামে শনিবার শুরু হয়েছে কাঠের পুতুলের মেলা। পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই মেলা চলে রবিবার পর্যন্ত। ৬০ টি স্টলে কাঠের পুতুল সহ অন্যান্য শিল্প সম্ভার প্রদর্শনী ছাড়াও রয়েছে বিপণনের ব্যবস্থাও। এছাড়াও বিভিন্ন লোকসংস্কৃতির প্রদর্শনের আয়োজন।

 উল্লেখ্য অনেক আগে থেকেই নতুনগ্রাম বিখ্যাত হয়ে ওঠে কাঠের পুতুল তৈরি করে। কাঠের পুতুল তৈরি করে এই গ্রামের কারু শিল্পী শম্ভুনাথ ভাস্কর বহু পূর্বেই রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। পরবর্তীতে বামফ্রন্ট সরকারের আমলেও এখানকার শিল্পীরা পুরস্কৃত হন। এই শিল্পীদের উপর করোনা কালের প্রভাব ব্যাপক পড়ে। সেই সময় একটার পর একটা মেলা বন্ধ হয়ে যায়। কলকাতার বড় বড় পুজো প্যান্ডেলগুলো তাদের কাঠের পুতুলের বরাত দেওয়া থেকে বিরত থাকে। তাই শিল্পীদের  হাত-পা গুটিয়ে নিজের বাড়িতেই বসে থাকতে হয়েছে সেই সময়। বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আগের তৈরি ঘরভর্তি পুতুল নিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় তাঁদের। একটার পর একটা পুতুল বিক্রির সোর্সগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের বিনিদ্র দিন কাটে। তবুও রীতিমত প্লাস্টিকের সঙ্গে যুদ্ধ করেই আজও পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামে কাঠের পুতুল তৈরির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তাঁরা। এই গ্রামের ৬০টি পরিবার এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। 

সারা বছর নিজের বাড়িতে কাঠের পুতুল তৈরি করেন তারা। আর এই পুতুল অগ্রদ্বীপের মেলা, কাটোয়ার মেলা, মালদার মেলা এবং তারকেশ্বর প্রভৃতি মেলায় বিক্রি করেন। মেলা ছাড়াও কলকাতার বড় বড় প্যান্ডেলগুলো থেকেও তাদের কাছে কাঠের পুতুলের বরাত আসে। এই ভাবেই সুখে দুখে কাঠের পুতুল তৈরি করার কাজ অব্যাহত রেখেছেন নতুন গ্রামের কাঠের পুতুল শিল্পীরা। তাদের কাঠের পুতুল শিল্পকে আরও প্রচারের আলোয় আনতে এই মেলার উদ্যোগ বলে জানা গেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন থেকে।
 

Comments :0

Login to leave a comment