RANIGAUNGE PANCHAYAT

দামোদরের বালিচুরি, জলসঙ্কট, লুট
রানিগঞ্জ ক্ষোভ দেখাবে ভোটবাক্সেও

জেলা

নূপুর গ্রামে দেওয়াল লিখেছেন সিপিআই(এম) কর্মীরা।

মলয় কুমার মণ্ডল

জলের সমস্যা বেড়েই চলেছে। মানুষ বাড়ছে, কিন্তু নতুন জল প্রকল্প নেই। উলটে জল টেনে পাশে এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। পঞ্চায়েত ভোটেও রানিগঞ্জে অন্যতম প্রধান দাবি জলসঙ্কট সমাধানের। 

পঞ্চায়েতের টাকা লুটের অজস্র অভিযোগ রয়েছে রানিগঞ্জের ছয়টি পঞ্চায়েত এলাকাতেই। ২০১৮’র লুটের সময়ও, এর মধ্যে, আমড়াসোতায় জিতেছিল বামফ্রন্ট। বোর্ডও গড়েছিল। প্রধানকে হুমকি দিয়ে বছর দুই আগে দল বদলানো হয়। ভোটে হেরেও বিজেপি’র কায়দায় বোর্ডের দখল নেয় তৃণমূল। 

রানিগঞ্জ ব্লকে পঞ্চায়েত মোট ছয়টি। বল্লভপুর, এগারা, আমড়াসোতা, তিরাট, জেমেরি, রতিবাটি। আমড়াসোতা বাদে বাকি পাঁচটি পঞ্চায়েতে বামফ্রন্টকে আটকে দেওয়া যায়নি। ২০১৮’র ভোটে বল্লভপুরের নূপুর গ্রামে বাইরের লোক আনে তৃণমূল। ভোট লুট রুখতে গোটা পাড়া একজোটে আটকে রেখেছিল দুষ্কৃতীদের। পুলিশের সাহায্য নিয়ে পালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। এবার সেসব কথা মুখে মুখে ঘুরছে। গ্রামবাসীরা মনে রেখেছেন, এই গ্রামের বুথে ব্যালট বাক্সে জল ঢেলে ভোট বানচাল করা হয়েছিল। পরের দিন উপনির্বাচন হয়। দুষ্কৃতী বাহিনী কাউকে ভোট দিতে দেয়নি। 

এবার আরও কড়া প্রতিরোধের মুখে পড়বে ভোট লুটতে এলে, বলছেন সিপিআই(এম) নেতা থেকে কর্মীরা। রানিগঞ্জে তিন স্তরে মোট ৯৩টি আসন। তার মধ্যে কেবল বামফ্রন্টই প্রার্থী দিয়েছে ৬৩ আসনে। মনোনয়নের সময় কম রেখে তৃণমূলের সুবিধা করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শুরু হয়েছে দেওয়াল লেখা। লুটের পঞ্চায়েত নয়, মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে হবে- উঠছে স্লোগানও। 

রানিগঞ্জে বামফ্রন্ট সরকারের সময় জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তর পানীয় জল প্রকল্প গড়ে। আর নতুন প্রকল্প হলো না। কয়লা খাদানে জমা জল পরিশোধন করে বাড়ির নানা কাজে ব্যবহারের প্রকল্প ছিল। পানীয় না হলেও সমস্যা অনেকটা মিটতে পারত। সেই প্রকল্প এগয়নি আর। বরং জামুড়িয়া বা পাণ্ডবেশ্বরের জন্য জল নিতে হচ্ছে। 

জলসঙ্কটে তৃণমূল কাঠগড়ায় উঠছে দামোদরে বেলাগাম বালিচুরির জন্য। নেমে যাচ্ছে জলস্তর। নদীর গতিমুখ বদলে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে প্রবাহ। ফলে জল প্রকল্পে নদীর জল যে মাত্রায় থাকার কথা তা-ও থাকছে না। কোটি কোটি টাকা লুটের মাশুল দিচ্ছে রানিগঞ্জ, শুকিয়ে রয়েছে এলাকা। 

গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বনসৃজন ঘিরেও। গাছ লাগাতে যত টাকা খরচ তার চেয়ে ঢালাও টাকা তোলার অভিযোগ সর্বত্র। অথচ গাছ লাগানো জরুরি এলাকায়। একশো দিনের কাজের প্রকল্পেও বনসৃজন ব্যবহারের সুযোগ আছে। কিন্তু কাজ দেওয়া হচ্ছে না। উলটে ভুয়ো মাস্টাররোল করে কাজ দেখানো হচ্ছে। কিছু লোককে জব কার্ড পিছু পয়সা পাঠানো হচ্ছে, ফের তার একটা অংশ কাটমানি হয়ে ঢুকে যাচ্ছে তৃণমূল নেতাদের পকেটে। 

রানিগঞ্জে ঘুরলে এমন অজস্র অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।  সারা রাজ্যের মতো এখানেও অভিযোগ অজস্র আবাস যোজনা ঘিরে। ঘর পাননি গরিব মানুষ। তার ওপর সরকারি ভাতা দেওয়ার ঘোষণা, মুখ্যমন্ত্রী নিয়মিত যেসব করে থাকেন, হাতে পাচ্ছেন না এমন বহু মানুষ রয়েছেন। বার্ধক্য ভাতা থেকে বিধবা ভাতার টাকা পৌঁছাচ্ছেও অনিয়মিত। ক্ষোভ তীব্র হচ্ছে। সিপিআই(এম)’র একের পর এক আন্দোলনে সমানে বেড়েছে মানুষের যোগদান। পঞ্চায়েতে নির্বাচনে তা স্পষ্ট হবে।

Comments :0

Login to leave a comment