মলয়কান্তি মণ্ডল : রানিগঞ্জ
রুদ্র প্রকৃতিও তাঁর অভ্যাসে ছেদ ফেলতে পারেনি। মাথায় গনগনে সূর্যের আঁচ নিয়েও কাপড়ের থলে হাতে সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন রানিগঞ্জের গির্জাপাড়ার বাসিন্দা বছর বাহাত্তরের সীতারাম পণ্ডিত। থলেতে এক তাড়া ‘গণশক্তি’-র কাটিং। থাকে তার ‘এনলার্জড ফটোকপি’ আর আঠা। পোস্ট অফিস, ব্যাঙ্ক, বাসস্ট্যাণ্ড, বাজার সর্বত্র জনবহুল স্থানে দেওয়ালে পোস্টারের মতো সেঁটে বেড়াচ্ছেন ‘গণশক্তি’ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের প্রতিলিপি।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সীতারাম পণ্ডিতের দৈনিক কাজ এটিই। উদ্দেশ্য বামপন্থী গণ সংগ্রামের খবর বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। শোষকের শাসন এবং অত্যাচার যে চিরকাল চলতে পারে না সেই বার্তাই সর্বত্র পৌঁছে দিতে চান তিনি। খুঁজে বের করেন দেশ , বিদেশের সেই সব খবর, যেখানে সংঘবদ্ধ মানুষ আন্দোলনের মাটিতে জয় ছিনিয়ে আনেন।
‘মানুষই ইতিহাস তৈরি করেন‘, জ্যোতি বসুর সেই কথাকে কার্যত প্রবাদের মতো ভরসা করেন সীতারাম। সন্ত্রাস কবলিত পাড়াতেও তাঁর যাতায়াত থমকে থাকে না। একজন শ্রমিক হিসেবে দুর্গাপুর মিশ্র ইস্পাত কারখানা থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকেই ‘গণশক্তি’-র কাটিং প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন তিনি।
বিগত দিনে প্রকাশিত ‘গণশক্তি’-র গুরুত্বপূর্ণ খবরও বড়ো আকারে ফটোকপি করে প্রচার করছেন তিনি। অতীতের সঙ্গে বর্তমানের সেতুবন্ধন করছেন তিনি।
নতুন প্রজন্ম যাতে পুরনো ঘটনা থেকে রসদ সংগ্রহ করতে পারে সে কাজই নীরবে করে চলেছেন তিনি। বামপন্থার আদর্শের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে একাজ করছেন। না, সিপিআই(এম)’র কোনও নেতা একাজ করতে বলেননি তাঁকে।
এ কাজেও হুমকি এসেছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। অভিযোগ, রাজারবাঁধের ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শাসিয়েছেন। কিন্তু কোনোকিছুর পরোয়া করেন না গীর্জাপাড়ার বাসিন্দা সীতারাম পণ্ডিত । অনেকেই ‘গণশক্তি’ সংগ্রহ করে পড়তে পারেন না। তাঁদের জন্যই খবরকে পৌঁছে দেওয়া, তার কাছে, অস্থির সময়ে শুধুমাত্র আদর্শের টানে বামপন্থাকে বাঁচিয়ে রাখা। তিনি নিজেই যেন বামপন্থী আন্দোলনের চলমান ভাষ্য। খবরের কাটিং নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন কয়লাঞ্চলের গলি মহল্লা থেকে বাজারের ফুটপাতে।
Comments :0