মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার দিনাজপুরের এক পরিবার। ডাইনি অপবাদে একই পরিবারের ৪ জনকে বেধড়ক মারধর ও জোর করে মল খাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে। ঘটনা দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ব্লকের বাসুরিয়া পঞ্চায়েতের ভাদ্রারায় পাড়াতে। ঘটনার পর পুলিশ গ্রামে পৌঁছে আক্রান্তদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এলাকায় চাঞ্চল্য।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে ভাদ্রা রায়পাড়াতে গত দুই মাসে বেশ কিছু মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। গ্রামের কিছু লোক এক তান্ত্রিকের সঙ্গে পরামর্শ করলে ওই গ্রামের এক পরিবারের মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দেয় সে। তান্ত্রিকের কথা মতো বৃহস্পতিবার গ্রামের শ্মশানে পুজো দেন গ্রামবাসীরা। ওইদিন রাতেই ওই পরিবারের উপর আক্রমণ নেমে আসে এবং ভীষণ মারধর শুরু করে কিছু গ্রামবাসী। অভিযোগ এমনকি আক্রান্তদের মলও খাওয়ানো হয়। রাতেই খবর পেয়ে ছুটে যায় গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ। আক্রান্তদের উদ্ধার করে গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বত:প্রণোদিতভাবে মামলা রুজু করে পুলিশ গ্রামের ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার তাদের গঙ্গারামপুর মহকুমা আদালতে পাঠায়।
কুসংস্কার কি, অল্প কথায় উত্তর, যুক্তিহীন বিশ্বাস বা অসার যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত মতবাদে বিশ্বাস, এক কথায় -অন্ধবিশ্বাস। যেখানে কোনো বিষয় বা ঘটনা সত্য কি মিথ্যা, তাহা যাচাই করিবার মতো জ্ঞানের অভাব, সেখানেই কুসংস্কারের বাসা। যাবতীয় কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাসের উৎসই হল আমাদের নিজেদের ঘর। ঘরের প্রিয়জনেরা। ছোটোবেলা থেকেই বড়োদের মুখে আমরা ভূতের গালগল্প শুনে এসেছি। বড়োদের প্রয়োজনে ছোটোদের ভয় দেখানোর জন্য, তাঁদের শান্ত করানোর জন্য নানারকম আজগুবি সব বিষয় ছোটোদের সামনে তুলে ধরেছি, অস্তিত্বহীন জিনিসের অস্তিত্বকে বড়ো করে দেখিয়েছি। শুধু আমাদের দেশ নয়, এমন হাজার কুসংস্কার ছড়িয়ে আছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। উন্নত দেশ হোক বা অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে থাকা গরীব জনপ্রান্তর - কুসংস্কারের খোঁজ একটুও মিলবে না, এমন জায়গা পাওয়া ভার। এই কুসংস্কার যা প্রতিনিয়ত মানুষ কথায় ও কাজে ব্যবহার করে থাকে। কিছু মানুষ অন্ধবিশ্বাসে এগুলোকে লালন করে। তাই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরী।
অসভ্য, অর্ধসভ্য, অশিক্ষিত ও শিশু মনেই কুসংস্কারের প্রভাব বেশি। কিন্তু কুসংস্কার এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে যে, সম্পূর্ণ কুসংস্কারমুক্ত মানুষ অল্পই পাওয়া যায়। যাহারা নিজেদের কুসংস্কারমুক্ত বলিয়া গর্ববোধ করেন, হয়তো কোনো না কোনো রূপে তাহাদের ভিতরেও কিছু না কিছু কুসংস্কার লুকিয়ে থাকিতে পারে বা আছে। সমাজে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য কুসংস্কার রয়েছে।
যেমন বাড়ি থেকে বাইরে গেলে হলে সে সময় বাড়ির কেউ পেছন থেকে ডাকলে অমঙ্গল হয়। স্বামীর নাম বলা জাবে না। বাম চোখ কাঁপলে খারাপ। দা, কাচি বা ছুরি ডিঙ্গালে খারাপ। কেনা বেচায় জোড় সংখ্যা রাখা যাবে না। আমাদের সমাজে আরও অসংখ্যা প্রচলিত কুসংস্কার রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের গঙ্গারামপুর বিজ্ঞান কেন্দ্রর সম্পাদক ড. অমিত ঘোষ জানান,‘‘সম্প্রতি এই ধরনের ঘটনা পতিরাম ও বালুরঘাটে ঘটেছে। মূলত যে সমস্ত পরিবার বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করেন বা একা বাস করেন, তাদেরকে লক্ষ্য করে এবং তাদের সম্পত্তি হাতানোর জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়। আবার অনেক সময় কোনও পরিবারের সদস্যদের মানসিক সমস্যা থাকলে সেটাকে কেন্দ্র করে এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়। কুসংস্কারের জন্য একঘরে করে দেওয়া হয়। যেসব পরিবারের উপরে এসব ঘটানো হয়, তারা মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হন। এনিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা আগামী দিনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনসচেতন বৃদ্ধি করতে কাজ করব।’’
Dakshin Dinajpur
ডাইনি অপবাদে বালুরঘাটে আক্রান্ত একই পরিবারের ৪ জন

×
Comments :0