প্রতীম দে
গাড়ি ধরার তাড়ায় ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় নামলেই আসছেন ওঁরা।
খাকি জামা পড়া, বলছেন, ‘ফুট দিয়ে যান’।
প্রথম মনে হবে কলকাতা পুলিশের কর্মী।
না, এঁরাও 'পুলিশের লোক', তবে এই পাঁচ দিনের জন্য।
বছর ১৯‘র সুমিত শর্মা। কলকাতার একটি কলেজে কমার্স নিয়ে পড়েন। এনসিসি করেন। তাই পুজোর সময় তাদের কলকাতা পুলিশ ‘ডিউটিতে’ নেয়।
কাজ কী?
পুলিশের সঙ্গে ট্র্যাফিক সামলাতে হবে তাঁদের। পুজোয় আনন্দে মেতে ওঠা মানুষের কোন বিপদ যাতে না হয়। গাড়ি চলাচল যাতে ঠিক থাকে এই পাঁচ দিন, সেদিকে নজর রাখা তাঁদের কাজ।
ভিড় সামাল দিতে থাকা সুমিত প্রথমে খুব একটা কথা বলতে চাননি। তারপর কিছুটা ‘চাপ’ মুক্ত হওয়ার পর রাজি হলেন কথা বলতে।
ভালো লাগে পুজোর সময় কাজ করতে?
- না লাগে না। কিন্তু করতে হবে। শুধু পুজো নয়, গঙ্গাসাগর মেলার সময়েও আমরা ডিউটি করি বাবুঘাটে।
বোঝা গেলো কাজে ফাঁক রাখতে রাজি নন একেবারেই।
শুধু সুমিত একা নন। কলকাতা শহরের প্রতিটি রাস্তায় অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের দেখা যায় এই সময়। তাঁরা কেউ হয়ত জানে না পরে পুলিশে কাজ করবেন নাকি সেনায়। কিন্তু যে সময় গোটা শহর জুড়ে তাদের বয়সী ছেলে মেয়ে রাস্তায় আনন্দে মাতছে তখন তাঁরা ব্যস্ত থাকছে তাদের সুরক্ষার জন্য।
সুমিতের সঙ্গে কথা বলতে বলতে দেখা হলো আরও একজনের সঙ্গে। না। এই ব্যাক্তি এনসিসি করেন না। তার বয়সও সুমিতের মতোই। নাম রাহুল রায়।
রাহুল যে জামাটা পড়ে আছে তাতে লেখা কলকাতা পুলিশের স্বেচ্ছাসেবক। এঁরা এনসিসি সদস্য নন।
কলকাতা পুলিশ পারিশ্রমিক দেয়। কত, জানা যায়নি। বলা ভালো দু'জনের মধ্যে কেউ সেটা বলতে চাইলেন না।
রাহুলের এই কাজে এটা দ্বিতীয় বছর। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমবার মনটা খারাপ হয়েছিল। এবার আর সেটা নেই। সব সময় তো আর ডিউটি করতে হয় না। যখন ফাঁকা থাকি তখন একটু ঘুরে নেই।’’
একটু থেমে সে তার পকেট থেকে ফোটা বের করে বলে, ‘‘এই যে এটা তো আছে, ফেসবুকে তো সব দেখতি পাই।’’
আবার ভিড় হতে শুরু করল, রাস্তায় গাড়ির আওয়াজে কান ঝালাপালা হতে শুরু করলো। আর সেই ভিড়ের মধ্যে আস্ত সূর্যের মতো হারিয়ে গেলো শহরের বুকে কাজ করতে থাকা ‘পাঁচদিনের পুলিশ’।
ছবি: রবীন গোলদার
Comments :0