Post Editorial

আম্বেদকরের আকাঙ্ক্ষা জাতি ব্যবস্থার বিনাশ ও পুঁজিবাদের ধ্বংস

উত্তর সম্পাদকীয়​

Post editorial

অলকেশ দাস

এইটা হচ্ছে সমতার জায়গা /যা সারা জীবনে অনুভূত হয়নি,
কেউ এখানে বড় নয় /কেউ ছোটও নয় 
আমাদের এই অন্তিম গৃহে।এখানে সবাই শান্তিতে ঘুমায় 
এটাই সারা বিশ্বের একমাত্র সমতার জায়গা।
রাজা এখানে ঘুমায় /যে নিঃস্ব সেও।
জ্ঞানী এখানে যাত্রা শেষ করে /অজ্ঞও তাই।
যখন তাদের মৃত্যু হয় ,তারা সবাই এখানে মিলিত হয়
এবং এই ভাবেই 
এইটা হচ্ছে সেই সমতার জায়গা/যা সারা জীবনে অনুভূত হয়নি।

বাংলায় এরকমই এক গান আছে। মরলে সবাই মাটি-কবর দাও বা চিতায় ওঠাও...।
কিন্তু বর্ণ বা জাত ব্যবস্থায় এসব অপ্রায়োগিক। দলিতের মৃতদেহকে ছোঁবে না বলে তাকে দড়িতে বেঁধে ব্রিজের উপর থেকে শ্মশানে নামানো হয়। ২০১৯ এ মাদ্রাজ হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চ ভেলোরের জেলাশাসককে জবাবদিহি করতে বলে যে কেন দলিত সম্প্রদায়ের পৃথক শ্মশানঘাট হবে? কেন সাধারণের শ্মশানঘাট ব্যবহারের জন্য জন্য দলিতদের লড়াই করতে হবে? আম্বেদকর সেই কারণে বলতেন-অস্পৃশ্যতার শিকড় রয়েছে জাতি ব্যবস্থায়।জাতি ব্যবস্থার শিকড় রয়েছে বর্ণাশ্রমে।বর্ণাশ্রমের শিকড় রয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদে।ব্রাহ্মণ্যবাদের শিকড় রয়েছে স্বৈরাচার বা রাজনৈতিক ক্ষমতায়।

একদিন আম্বেদকর ও তার এক দাদা গোরেগাঁও তে যাচ্ছিলেন। গোরুর গাড়িতে চড়ে।  যে মুহূর্তে গাড়োয়ান বুঝতে পারে যে এই যাত্রীরা নিচু জাতির অস্পৃশ্য  মাহার শ্রেণির, সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি উল্টে তাদের রাস্তার মধ্যে ফেলে দেয়। চিৎকার করে বলতে থাকে তারা তাদের গাড়িতে ওঠার পরে গোরু এবং গাড়ি দুটোই অপবিত্র হয়ে গেছে। শেষ অবধি গাড়োয়ান শর্ত দেয় যে গাড়ি আম্বেদকরদের চালাতে হবে এবং গাড়োয়ান পায়ে হেঁটে তাদের অনুসরণ করবে। সন্ধে থেকে মাঝরাত অবধি গাড়ি চালায় ভীমরাও। রাস্তায়  তৃষ্ণা পেলে তাকে কেউ জল দেয় না। বরং পরামর্শ দেয়  ডোবা থেকে জল খেতে। এই হলো আম্বেদকরের সমাজ জীবনের অভিজ্ঞতা।
সারা জীবন আম্বেদকরকে এই অস্পৃশ্যতার দংশন বহন করতে হয়েছে।

আম্বেদকর বোম্বে প্রেসিডেন্সি মাহার সম্মেলনে ১৯৩৬ সালে বক্তৃতায় বলেছিলেন-সোজাভাবে বললে হিন্দু এবং অস্পৃশ্যদের সংগ্রাম চিরস্থায়ী ঘটনা। এটা চিরন্তন তার কারণ ধর্ম তোমাকে সমাজের একদম নিচে নামিয়ে রেখেছে। উচ্চ জাতির মানুষেরা সেটাই বিশ্বাস করে। সময় এবং পরিস্থিতি যাই হোক না কেন এর পরিবর্তন ঘটবে না। তুমি আজ মইয়ের শেষ ধাপে। তুমি সারা জীবনের জন্য নিচেই থাকবে। এর অর্থ দাঁড়ায় হিন্দু এবং অস্পৃশ্যদের সংগ্রাম সবসময়ের জন্যই চলবে। এই 'হিন্দু' অবশ্যই সাধারণ ধর্মবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে নয়। আজকের মোদী-শাহদের, আরও বৃহত্তর ক্যানভাসে সঙ্ঘ পরিবারের 'হিন্দুত্বের' উদ্দেশ্যে। ধর্ম ব্যবসায়ী, ধর্মীয় স্বার্থান্বেষীদের উদ্দেশ্যে।

আম্বেদকরের বিখ্যাত বই- এনিহিলেশন অব কাস্ট। জাতের বিনাশ। এই গ্রন্থেই তিনি লিখেছিলেন— হিন্দু চেতনা বলে সেভাবে কিছু হয় না। প্রত্যেক হিন্দুর মধ্যে যে চেতনার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় সেটা আসলে তার জাতির চেতনা। সেই কারণে হিন্দুরা একটা সমাজ বা একটা দেশ গঠন করেছে এমনটা বলা যায় না। লেখার প্রকাশকাল যদি খেয়াল না করা যায় তাহলে‌ মনে হবে হিন্দুরাষ্ট্রের বেসাতি এখন যারা করছে- তাদের উদ্দেশ্যে মোক্ষম জবাব।

আম্বেদকর মনে করতেন ভারতের শ্রমিক শ্রেণির দুটি শত্রু— একটি ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং আরেকটি পুঁজিবাদ । উভয়েই বৈষম্য প্রসারিত করে এবং একটি সামাজিক শ্রেণি আধিপত্য বজায় রাখে অন্য সামাজিক শ্রেণির উপরে। প্রতিষ্ঠিত হয় কৃত্রিম উঁচু-নিচুর ভিত্তি। সেই ব্রাহ্মণ্যবাদ আজ রাষ্ট্র পোষিত। ২০০২ -এর গুজরাটের সাম্প্রদায়িক মুসলিম নিধনপর্বে দলবদ্ধ ধর্ষণে যে কুখ্যাত ১১ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল তাদের সাজা কমানোর জন্য একটা কমিটি হয়েছিল। তাদের সাজা কমিয়ে মুক্তি দেওয়া হয় অসাধারণ সরকারি তৎপরতায়। তার সদস্য ছিলেন গুজরাটের বিজেপি বিধায়ক সি কে রাউলজি। শাস্তি কমানোর কারণ হিসাবে তার বক্তব্য ছিল-" এরা ভালো মানুষ-ব্রাহ্মণ। আর ব্রাহ্মণরা ভালো সংস্কারে অভ্যস্ত। হতে পারে কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে এদেরকে কোণঠাসা করে শাস্তি দিতে চেয়েছে"। একেবারে মনুস্মৃতির উচ্চারণ। যেমন ... ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্য যে কেউই পরশ্রী গমনের কারণে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবে...।

হিন্দুদের একত্রিত করাটাই বিজেপি’র অস্তিত্বের মূল ভিত্তি। সংসদীয় ক্ষমতার সোপানের মূল চাবিকাঠি। সঙ্ঘ পরিবার খুবই উপলব্ধি করে যে দলিতদের অংশগ্রহণ ছাড়া হিন্দুদের উপরিকাঠামো কখনো টিকে থাকতে পারে না। আবার এটাও ঠিক যে রাজনীতির আঙ্গিনায় উগ্র হিন্দুত্ব এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে তীব্র নয়া উদার অর্থনৈতিক নীতিগুলো অনেকের কাছে প্রিয় হলেও তাদের কাছে হিন্দুত্ব আবার খুব একটা গ্রহণীয় বিষয় নয়। তারা বোঝে যে এই হিন্দুত্ব সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। অর্থনৈতিক উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। তথাকথিত নিচু শ্রেণির মানুষদের যদি হিন্দুত্ব পছন্দ হয় তাহলেও এই হিন্দুত্ব অনুসারী নয়া উদার অর্থনৈতিক নীতির রূপায়ণ কখনো তাদের কাছে সুখকর হতে পারে না। এই দ্বন্দ্ব ক্রমবর্ধমান। এটা বুঝেই শাসক ব্রাহ্মণ্যবাদী স্বৈরাচারী রাষ্ট্র তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। সাধে আর আম্বেদকর বলেননি- "হিন্দুরাজকে যে কোনও মূল্যে রোখা প্রয়োজন।" আসলে হিন্দুরাষ্ট্র মানে ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসনকে পুনরায় চালু করা এবং মনুস্মৃতিকে কেন্দ্র করে জাতিভিত্তিক ভেদাভেদের ন্যায্যতা প্রদান করা।

'উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইনড' লেখেন গোলওয়ালকার ১৯৩৯ সালে। উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইনড' বইয়ের মুখবন্ধে তিনি চতুর্বর্ণ ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।  সময়ের সাথে সাথে বর্ণ ব্যবস্থা থেকে জাতি ব্যবস্থা একটা সংগঠিত স্বনিয়ন্ত্রিত চরিত্র ধারণ করেছে। এর সারমর্ম হলো-স্বাভাবিকভাবেই যারা শ্রেষ্ঠ তাদের প্রশ্নাতীত শাসন এবং সেই শাসনের অধীনে বাকিদের নতি স্বীকার। এখানেই ফ্যাসিবাদী দর্শনের সঙ্গে হিন্দুত্বের ধারণার সুসম্পর্ক। যেমন ঘর ওয়াপসি। যারা ধর্মান্তরিত হয়েছিল তাদের আবার হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। কিন্তু কেন তারা অন্য ধর্মে যেতে বাধ্য হয়েছিল তার কারণ এরা চেপে রাখে। ব্রাহ্মণ্যবাদের সীমাহীন অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার আর কোনও বিকল্প তাদের ছিল না। যে ধর্ম উঁচু নিচুর বন্ধনে চেপে রেখে নিপীড়ন চালায় তার থেকেই তারা মুক্তি খুঁজেছিল।

গোলওয়ালকার হিন্দুরাজের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাকে কাজে রূপান্তরিত করেছিলেন আরএসএস’র আরেক মহাসংঘ পরিচালক বালাসাহেব দেওরস। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে সংসদীয় ক্ষমতার নাগাল পেতে গেলে সংখ্যাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা করতে গেলে ব্রাহ্মণ্যবাদী খোলসের মধ্যে থাকলে হবে না। হিন্দু রাষ্ট্রের লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে পছন্দ না হলেও  অব্রাহ্মণদেরও যুক্ত করতে হবে। তখন থেকেই আদিবাসী ও দলিতদের মধ্যে আরএসএস’র সক্রিয়তা এবং কাজকর্মের প্রচার। কৌশলগত নতুন দিক। তখন থেকেই আম্বেদকরকে মনীষী বানানোর চেষ্টা, তাকে সঙ্ঘ পরিবারের হিতৈষী হিসাবে দেখানো। ফ্যাসিবাদী তত্ত্বের গুঢ় কথা মিথ্যাচার দিয়ে তার জীবনকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা। মোদী সেই কৌশলে তীব্র গতিতে এগিয়েছেন। দলিতদের আরও কাছে টানার জন্য ১৯৯০ সালের জাতীয় সম্মেলনে বিজেপি প্রথমবারের জন্য মঞ্চে মহাত্মা গান্ধী এবং জয়প্রকাশ নারায়ণের ছবির মাঝে বাবাসাহেব আম্বেদকরের ছবিকে স্থান দেয়। অথচ এই তিনজনের রাজনীতি ছিল সঙ্ঘ পরিবারের মতাদর্শের বিরুদ্ধে।
এরকমই এক পদক্ষেপ-আম্বেদকরের মূর্তির গেরুয়া করণ। এমন কি এটাও দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে আম্বেদকর কতটা মুসলমান বিরোধী ছিলেন। তিনি নাকি হিন্দু রাষ্ট্রের সমর্থক ছিলেন। একেবারে সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। আম্বেদকর বরং স্পষ্ট বলেছেন যে সংখ্যালঘুদের দ্বারা ক্ষমতা ভাগাভাগির যেকোনও দাবিকে সাম্প্রদায়িকতা বলা হয়। আর সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা সাম্প্রদায়িকতার একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করাকে জাতীয়তাবাদ বলা হয় ।

আম্বেদকর প্রত্যয়ের সঙ্গে, নিবিড়ভাবে মনে করতেন ভারতের শাসক শ্রেণি সব সময় জাতীয়তাবাদ বা ভারত মাতার বিপদের কথা উচ্চারণ করে যখন শোষিত অংশ বা শ্রেণি ন্যায়ের দাবি করে, সমতার দাবি করে, স্বীকৃতির দাবি করে আইনসভায় প্রতিনিধিত্বের জন্য। প্রশাসনে বা গণপরিষেবায়। শাসক শ্রেণি জানে যে শ্রেণি আদর্শ, শ্রেণি স্বার্থ, শ্রেণি ইস্যু এবং শ্রেণি দ্বন্দ্ব তাদের শাসনকে বিপদে ফেলতে পারে। সেইজন্যে শ্রেণি ইস্যুগুলিকে পাশে রেখে তারা জাতীয় ঐক্যের কথা বলে এবং জাতীয়তার আবেদন তোলে। আম্বেদকর সমসাময়িক ভারতে এই কারণেই এত প্রাসঙ্গিক। রুটি- রুজি, জমি,বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসার দাবি যত প্রকট হচ্ছে তত বেশি ধর্ম আর জাতের প্রাবল্য সরকার প্রযোজনা করছে। একদিকে ওয়াকফ বিল নিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে, অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে মুসলিম মানুষ সমবেত হলে হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেওয়া হচ্ছে-'হিন্দু খাতরে মে হ্যায়।

১৯৪২ সালের ২৭ নভেম্বর আম্বেদকর ছিলেন ভাইসরয় কাউন্সিলে শ্রমিক প্রতিনিধি। এটা ছিল শ্রমমন্ত্রীর প্রায় সমান পদ। একে ব্যবহার করেই তিনি এদেশে প্রথম শ্রমিকের ৮ ঘণ্টা আইনি কাজকে স্বীকৃত করেন। আজ তাকে ধূলিসাৎ করার জন্য শ্রম কোড সংশোধনী আইন লোকসভায়। করোনা পর্বে মোদী নিজে হাতে সেই কারখানা আইনের একান্ন নম্বর ধারাকে সংশোধন করে শ্রমিককে ১২ ঘণ্টা খাটিয়ে নেওয়ার ছাড়পত্র মালিকের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এখন সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজের হুমকি যখন কর্পোরেট দেয় তখন মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করে বসে থাকে সরকার। আম্বেদকরের  উদ্বাহু প্রশংসা এমনকি বিদেশের মাটিতেও মোদী করেন। অথচ এদেশের নয়া উদার অর্থনীতি বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে পরিচালিত। সরকারি ব্যবস্থার অবলুপ্তি হলে সংরক্ষণ ব্যবস্থারও অবলুপ্তি হয় এবং তার পিছনের যে মূল নায়ক মোদী তা হয়তো সকলের চেতনায় ধরা পড়ে না। আবার হিন্দুত্বের আহ্বানে সংবিধানের পরিবর্তন যে আসলে সাধারণের নয় পুঁজিকে প্রতিষ্ঠা করার তাগিদ— সেই ধারণাও কখনো অপসৃত হয়।

১৯৫১-য় হিন্দু কোড বিল সংসদে উত্থাপনের সময় বিতর্কে আম্বেদকার বলেছিলেন-যদি সীতা এবং রামের মামলা আমার কাছে আসতো তাহলে আমি রামকে আজীবনের জন্য কারাবাসের শাস্তি দিতাম। এরকমই চাঁচাছোলা ছিলেন আম্বেদকর। পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। বেঁচে থাকলে দেখতেন এদেশে সরকারি প্রযোজনায় আক্রমণ হচ্ছে ইন্টারফেথ, ইন্টারকাস্ট ম্যারেজের ওপর। প্রাপ্তবয়স্ক লিভ-ইন রিলেশনের উপরও হাত পড়েছে। নগ্ন প্যারেড, খুঁটিতে বেঁধে রাখা, ডাইনি অপবাদ, খাপ পঞ্চায়েত, যৌন হেনস্তা, ধর্ষণ বেড়েই চলেছে মনুবাদের প্রয়োগ।

আম্বেদকর জাত সম্পর্কে বলেছিলেন—এটা শ্রম বিভাজন নয়, এটা শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন। অর্থাৎ ভারতে জাত সম্পর্ক শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন ঘটায়। মার্কস বলেছিলেন- দুনিয়ার মজদুর এক হও । মার্কসবাদী বিপ্লবের স্তরে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব গণতান্ত্রিক বিপ্লব থেকে উত্তরণ। আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটের গণতান্ত্রিক বিপ্লব অর্থাৎ জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব সামন্ততন্ত্র বিরোধী, পুঁজিবাদ বিরোধী এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের অন্যতম মূল ভিত্তি বর্ণভেদ বা জাতিভেদ। ফলে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের অন্যতম উপাদান জাতের বিনাশ। আম্বেদকর এই জাতিভেদ ব্যবস্থার উৎপাটন চেয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল জাতি ব্যবস্থার বিনাশ এবং পুঁজিবাদের ধ্বংস— পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় উপাদান। শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থা অসম্ভব যদি সেখানে জাতের বিভাজন থাকে। আম্বেদকারের বহুল বিক্রিত পুস্তক-'এনিহিলেশন অব কাস্ট'। জাতের বিনাশ। এই আহ্বানই তাকে আলাদা মর্যাদায় রেখেছে।

Comments :0

Login to leave a comment