শ্রুতিনাথ প্রহরাজ
আর জি করকাণ্ডে তিলোত্তমার ন্যায় বিচার এখনো অধরা। পেশাদার অপরাধীরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিকল্পনামাফিক সংগঠিত অপরাধ করলে তার মাত্রা কতটা গভীরে যেতে পারে, গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আমরা তার সাক্ষী। সুপ্রিম কোর্ট যখন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই মামলার দায়ভার নেয় তখনই আশঙ্কা ছিল বিচারের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার। হয়েছেও তাই। ইতিমধ্যে সিবিআই মারফত জানা গেছে, অপরাধের তথ্য প্রমাণ অধিকাংশই সুকৌশলে লোপাট করা হয়েছে। এমনকি হাতের ছাপটুকও সব জায়গা থেকে সযত্নে মুছে ফেলা হয়েছে। মেয়েটির মরদেহ শাসক দলের বিধায়ক, কাউন্সিলর ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ তৎপরতায় দ্রুততার সঙ্গে পুড়িয়ে ফেলা এই তথ্য প্রমাণ লোপাটের আরও একটি বড় কাজ। যিনি ময়নাতদন্তের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন সেই চিকিৎসকের এখন কি অবস্থা, কোথায় তিনি— এর কোনও কিছুই তো আমরা জানতে পারছি না। টালা থানার ওসি’র হঠাৎ করে অসুস্থতা বাড়লো কেন তাও জানা দরকার। মেয়েটিকে ধর্ষণ ও খুন করা থেকে শুরু করে তার তথ্য প্রমাণ লোপাট করার অপরাধের সঙ্গে আগাগোড়া যারা যুক্ত রইলেন,তাদেরকে এখনো হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না কেন? এরা বাইরে থাকার কারণেই যত দিন যাচ্ছে, নতুন নতুন কায়দায় সমগ্র তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে, প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে নিচের স্তর পর্যন্ত। সঙ্গত কারণে নাগরিক আন্দোলন থেকেই দাবি উঠেছে, তিলোত্তমার ন্যায় বিচার পেতে “আর জি কর-এ মাথা ধর”। আর এ মাথা একা সন্দীপ যে নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদের শিকড় বাকড় সমেত উপড়াতে না পারলে ভবিষ্যতে আবার কোনও অসহায় তিলোত্তমার জন্য পথে নামতে হবে আমাদের। তাই গোটা সিস্টেমটাকে ভেঙে নতুন করে গড়তে, দিকে দিকে প্রতিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন জারি আছে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সর্বস্তরের জাতি ধর্ম লিঙ্গ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ, বর্তমান সময়কে সঙ্গী করে।
তিলোত্তমার খুনের তদন্ত চলাকালীন 'স্বাস্থ্য সিন্ডিকেট' তথা 'ভয় সিন্ডিকেট'- এর কথা জানতে পারলেন রাজ্যবাসী। এমনিতে সিন্ডিকেট কথাটা যদিও নতুন করে শুনতে হচ্ছে না। শাসক দলের আশ্রয়ে এবং প্রশ্রয়ে থাকা একদল মানুষের বেপরোয়া দখলদারির লক্ষ্যে গড়ে ওঠে সিন্ডিকেট। এর পেছনে থাকে যেমন অর্থনৈতিক স্বার্থ একই সাথে থাকে রাজনৈতিক দখলদারির লক্ষ্য। এই অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি কোনও নৈতিক উপায়ে নয় বরং অসৎ পথে পরিচালিত হয় সিন্ডিকেট। বিনা পরিশ্রম বা স্বল্প পরিশ্রমে অনৈতিকভাবে বিপুল অর্থ উপার্জনের নেশা বেপরোয়া করে তোলে সিন্ডিকেটের মালিকদের। এর জন্য ওরা মানুষ খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। যেখানে সিন্ডিকেট রাজ চালু হবে সেখানে পুলিশ বা সাধারণ প্রশাসন হয় বকরার ভাগ নিয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকায় থাকবে নতুবা শাসকদলের মদতে নিজেরাই সিন্ডিকেটের অংশ হবে। বিকল্প যা, অর্থাৎ জনগণের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে পুলিশ বা প্রশাসনের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা, সেই সুযোগ এখন এ রাজ্যে নেই বলা যেতে পারে। সাহস করে সিন্ডিকেট রাজের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষে যারাই মুখ খুলেছেন বা পদক্ষেপ নিয়েছেন তাদের বিস্তর হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
এ রাজ্যে, প্রথমে রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের ইট বালি স্টোনচিপ সিমেন্ট সহ লেবার সাপ্লাই সিন্ডিকেটের কথা আমরা শুনেছি। তারপর এল শিক্ষা সিন্ডিকেট। ২০১১ সালে বর্তমান সরকার আসার পর প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বস্তরের শিক্ষা প্রশাসনে দলীয় দখলদারি সুনিশ্চিত করতে যা যা করবার তাই করেছে। গণতান্ত্রিক প্রশাসনের মধ্য দিয়ে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের যে সুযোগ থাকার কথা ছিল তা এখন আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই। সেই জায়গা নিয়েছে সিন্ডিকেট। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে এই ভয় সিন্ডিকেটের আবহ বিরাজ করছে। বিদ্যালয় স্তরে নতুন কোন কাজের বরাত দিতে গেলে প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ তা হাড়ে হাড়ে টের পান। বিড়ম্বনার ভয়ে সব খবর বাইরে আসে না। আর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে এই সিন্ডিকেট যে কতটা ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে তার সবটা অনুমান করাও সম্ভব না। বড় কিছু ঘটলে সংবাদ মাধ্যম তার প্রকাশ করে। অধিকাংশ খবর চাপা পড়ে যায়। অদ্ভুত এক ভয়ের আবহে কাজ করতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষা কর্মী সহ প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের। এরা যে সবাই এই অনাচার বা নৈরাজ্যের পক্ষে তা নয়। অধিকাংশই চান না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই নৈরাজ্য চলুক। তাদের সাফ কথা, উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলুক মুক্ত শিক্ষা ও মননের অঙ্গন হিসাবে, শিক্ষক ছাত্র শিক্ষা কর্মীদের মিলিত উদ্যোগে, গণতান্ত্রিক প্রশাসনিক কাঠামোর সাহায্যে কলুষমুক্ত পরিমণ্ডলে। সরকারে যেই আসুক, সমাজ ও জাতি গঠনের লক্ষ্যে শিক্ষা বাঁচাতে এই অনুশাসন তাদের মেনে চলতেই হবে।
এই কদিন আগে শাসক দলের ছাত্র সমাবেশে তৃণমূলের দ্বিতীয় অধিনায়ক সদর্পে ঘোষণা করলেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ৫৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে ছাত্রীদের জন্য। যথারীতি প্রচুর হাততালি পড়লো এই ঘোষণায়। অথচ সবাই জানি আমরা বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। নৈরাজ্যের সিন্ডিকেট চালু রাখতে এটাই এখন এ রাজ্যের দস্তুর। ভয় সংক্রামিত করে, ছাত্র সংসদের নির্বাচন বন্ধ রেখে এলাকার শাসক দলের রাজনৈতিক দখলদারি সুনিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে এই ব্যবস্থা জারি আছে। ভর্তি থেকে পরীক্ষা এবং তারপর সার্টিফিকেট নেওয়া সবটাই নিয়ন্ত্রণ করে ওই সিন্ডিকেট। এর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস ওনাদের নেই। যারাই চেষ্টা করেছেন, চরম হেনস্তার স্বীকার হতে হয়েছে তাদের। ছাত্র সংসদের নির্বাচন দাবি করতে গিয়ে মহানগরে খুন হয়েছে সুদীপ্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট রাজের বিরুদ্ধে শুধু মুখ খোলা নয়, প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলার অপরাধে খুন হতে হয়েছে আনিসকে। শারীরিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন এবং হচ্ছেনও বহু উপাচার্য, অধ্যক্ষ, অধ্যাপক অধ্যাপিকা, আধিকারিক শিক্ষা কর্মী সহ অগণিত ছাত্র-ছাত্রী। কলকাতার সমাবেশে আসার জন্য শাসক দলের ছাত্র নেতাদের ধার্য করা চাঁদা না দেওয়ার অপরাধে মালদার একটি কলেজের অধ্যাপিকাকে এমনও শুনতে হয়েছিল,'কলেজের ছাদের ওপর নিয়ে গিয়ে তোকে রেপ করে ঠেলে দেবো তলায়'। এদের সবার অপরাধ একটাই, শিক্ষাক্ষেত্রে এই ভয় সিন্ডিকেটকে অগ্রাহ্য করে নৈরাজ্য রুখতে মুখ খুলেছেন। এ রাজ্যে এখন প্রতিদিনই কোনও না কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও না কোনও ছাত্র শিক্ষক শিক্ষা কর্মী আধিকারিক এই ভয় সিন্ডিকেটের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। যেহেতু সংগঠিতভাবেই এই অপরাধ হচ্ছে তাই বাইরে যাতে এ খবর কোনোভাবে আসতে না পারে তার ব্যবস্থাও পাকা করে রেখেছে এই ভয় সিন্ডিকেটের লোকজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মূলত ছাত্র নামধারী অছাত্ররাই পরিচালনা করে এই সিন্ডিকেট, যেখানে শাসকদলের সমর্থক বা সুবিধাভোগী শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীগণ সমর্থন জোগান। আর সুবীরেশ বা মানিকের মতো অধ্যক্ষ বা উপাচার্য হলে তো কথাই নেই। সোনায় সোহাগা! শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগকে কেন্দ্র করে যে বিরাট দুর্নীতির পর্দা ফাঁস হয়েছে তার পেছনেও আছে এই সিন্ডিকেট— ছোট থেকে বড় সবকটা। সেখানেও এখনো মাথা ধরা পড়েনি, তদন্তের নামে দীর্ঘসুত্রিতা চলছে। ফলে বিপদ থেকেই গিয়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে জেল থেকে ছাড়া পাবে একের পর এক অপরাধী।
প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ‘কে কে’ কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এসে ওইরকম অসহায়ভাবে প্রাণ না হারালে আমরা কতজনইবা জানতে পারতাম যে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংসদ না থাকলেও তাদের নামে ৭০ লক্ষ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত সোশালের জন্য বরাদ্দ হয়। এই টাকা কোথা থেকে আসে, কাদের মাধ্যমে খরচ হয়, সরকার নির্ধারিত ব্যয় নীতি মেনে খরচ হয় কিনা এইসব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? অথচ এর উত্তর জানা জরুরি কারণ, এর পেছনেও লুকিয়ে আছে অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপার্জনের পথ। আমরা জেনে বুঝে আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েগুলিকে অসৎ পথে ঠেলে দিচ্ছি না তো? আমার বিশ্বাস, আর জি করকাণ্ডের পর তিলোত্তমার ন্যায় বিচারের দাবিতে সারা রাজ্য সহ দেশের মানুষ যে জনআন্দোলনের চেহারা দেখেছেন এবং তাতে অংশ নিয়েছেন, আগামী দিনে শিক্ষা ব্যবস্থায় এই সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য একইরকম আন্দোলন গড়ে উঠবে কলকাতা মহানগরী সহ সারা রাজ্যের গ্রাম শহরে। কারণ মানুষের ভয় কাটছে। যারা বাংলার মেয়েকেই মুখ্যমন্ত্রী বানিয়ে ছিলেন তাদের একটা বড় অংশ বাংলার বাকি মেয়েদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বেড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরির তাগিদে এখন রাজপথে কোনও না কোনও আন্দোলনের ভিড়ে হেঁটে চলেছেন, একের পর এক প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। বর্তমানের এই আন্দোলনের এটাই অন্যতম শিক্ষা। তবে, এর জন্য আবার একটা তিলোত্তমার মরদেহের অপেক্ষায় যাতে থাকতে না হয় তা সুনিশ্চিত করাটাই আমাদের জরুরি কর্তব্য।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সমগ্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চালু থাকা যে সিন্ডিকেটের খবর আমরা এখন পাচ্ছি তার সঙ্গে সাধারণ শিক্ষায় যে সিন্ডিকেটের কথা আমি আগে বললাম তার কিছু মিলতো আছেই। ছাত্র সংসদ না থাকা, শাসকদলের ছাত্র প্রতিনিধিদের দাদাগিরি, টাকা নিয়ে ভর্তি, অসৎ উপায়ে পরীক্ষার খাতায় নম্বর বাড়িয়ে নেওয়া— এসব দু’জায়গাতেই কমবেশি দেখতে পাওয়া যাবে। যদি কোনও মিডিয়া এরমধ্যে কোনও একদিন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এ রাজ্যের চালু সিন্ডিকেট রাজের তুলনামূলক ঘণ্টাখানেক আলোচনা করে, সব না হলেও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। তবে স্বাস্থ্য সিন্ডিকেট কিছু বিষয়ে শিক্ষা সিন্ডিকেটকেও ছাড়িয়ে গেছে। জানিনা এ পাড়ার দাদারা আগামী দিনে অনুপ্রেরণায় ঠেলায় ঐসব কাজকর্ম অনুকরণ করবে কি না। এই যেমন একজনের লেখা থিসিস জোর করে অন্যজনকে দিয়ে দেওয়া। ঠিক যেমনটা ঘটেছে তিলোত্তমার ক্ষেত্রে। ফেল করা ছাত্র ওর থিসিস নিয়ে দিব্যি উতরে গেল, আর প্রাণ দিতে হলো টপার তিলোত্তমাকে। অনার্স নিয়ে পাশ করলেও শাসক দলের অনুগত না হওযয় হাউসস্টাফশিপ না দেওয়া, কথা না শুনলে ফেল করিয়ে দেওয়া। ডাক্তারি পরীক্ষায় এসব হতে পারে কেউ কি ভেবেছিলাম আমরা আগে? মেয়েটা প্রাণ দিয়ে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে তাই জানতে পারছি এসব। তারপর দেখা গেল কনভোকেশনে উপাচার্য বা আচার্যের উর্দি গায়ে চাপিয়ে দিব্যি ডিগ্রি বিলোচ্ছে স্বাস্থ্য সিন্ডিকেট তথা ভয় সিন্ডিকেটের পরিচালক শাসক দলের দাদারা। এ জিনিস এখনো পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় দেখা যায়নি। জানিনা আগামী দিনে কলকাতা যাদবপুর বা রাজ্যের অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে কনভোকেশনে তাও দেখতে হবে কি না।
সরকারের অন্যান্য দপ্তরেও এ ধরনের সিন্ডিকেট রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগেকার খাদ্যমন্ত্রী এখন জেলে। আরও কারা ঢুকবেন কে জানে। সেই কারণে সরকার ও শাসক দল বিষয়টিকে রাজ্যবাসীর মানিয়ে নেওয়ার জায়গায় নিয়ে যেতে চাইছে। ব্যাপারটা এই যে, এমনটা তো হতেই পারে। এতে আবার অবাক হবার কি আছে! অনেকটা সেই রেশ টেনেই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে প্রতিবাদ প্রতিরোধের পথ ছেড়ে উৎসবের আঙিনায় আসতে বলেছেন! কতটা অমানবিক বা নিষ্ঠুর হলে এমন কথা বলা যায় ভেবে দেখুন। এক মাসের উপর মেয়েটা খুন হয়েছে অথচ এখনো জানা গেল না কে বা কারা কি কারণে তাকে খুন করল। সুপ্রিম কোর্টে ‘তারিখ পে তারিখ’ চলতে থাকবে। সিবিআই হাতড়ে বেড়াবে নতুন কোন তদন্তের ক্লু খোঁজায়। আর আমরা আমাদের সন্তানের খুনের ন্যায় বিচার বাকি রেখে ফিরে যাবো উৎসবের আঙিনায়? এ জিনিস কখনো হতে পারে? এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার তিলোত্তমা যে আমাদেরই বাড়ির মেয়ে। আমরা তাকে বাঁচার জন্য একটা সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী দিতে পারিনি। তবে তার ঐ রক্তে ভেজা চোখ আর ক্ষতবিক্ষত মুখ দেখে শপথ নিয়েছি, এর শেষ দেখে ছাড়বো। আমাদের বাড়িতে বড় হতে থাকা ছেলেমেয়েগুলোর নিরাপত্তার কথা ভেবে এই আন্দোলনে আমাদের শামিল থাকতেই হবে। ভয় দেখিয়ে আর লাভ হবে না। ভয় সিন্ডিকেট ভাঙতেই এ লড়াই চলবে। মুখ্যমন্ত্রী উৎসবে মাতুন, আমরা তিলোত্তমার দ্রুত ন্যায় বিচার ও সমস্ত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দিন এবং রাত এক করে পাহারা দেব রাস্তায়। স্বাস্থ্য পরিষেবার বিঘ্ন ঘটুক আমরা কেউ চাই না। নিশ্চয়ই সচেতন জুনিয়র ডাক্তার বাবুরা সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে বিকল্প কোনও আন্দোলনের পথ খুঁজবেন, ঠিক যেভাবে এখন অভয়া ক্লিনিক পরিচালনা করছেন। কথা দিলাম,আমরা আছি তাদের পাশে।
Comments :0