গল্প — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
ঊনিশে জুলাই
সৌরীশ মিশ্র
রোববারের দুপুর। তিনটে বাজবে কয়েক মিনিট পরেই। বাইরে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। বছর এগারোর মুকুল তার বিছানায় বসে কাঁচি দিয়ে এক মনে গতকালের খবরের কাগজটা থেকে লিওনেল মেসির ছবিটা কাটছিল। বিছানার উপরেই রাখা একটা আঠার শিশি। তার পাশে একটা মোটা খাতা। এই খাতাতেই মুকুল আঠা দিয়ে সেটে রাখবে ঐ মেসির ছবিটা।
মেসির ছবি খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন থেকে সংগ্রহ করা মুকুলের হবি। মেসি যে ওর প্রিয়তম ফুটবলার। তবে শুধু মেসি নন, আরো অনেক ফুটবল প্লেয়ারই আছেন যাঁদের খুব পছন্দ করে মুকুল। আদতে, ফুটবল খেলাটাই বড় ভাল লাগে ওর।
মুকুল এখন আঠা দিয়ে মেসির ছবিটা আটকাচ্ছে খাতাটায়। তখুনি, ঐ ঘরে এসে ঢুকলেন মুকুলের কাকা রৌদ্রবাবু। খাটে মুকুলের পাশটাতেই এসে বসলেন তিনি। মুকুল একমনে তার কাজ করে চলেছে। কয়েকক্ষণ রৌদ্রবাবু কি যেন ভাবলেন মুকুলের দিকে তাকিয়ে। তারপর বলে উঠলেন মুকুলকে, "সারাদিন তো ফুটবল-ফুটবল করিস। একটা প্রশ্নের উত্তর দে তো। দেখি, ফুটবল নিয়ে কতোটা খোঁজখবর রাখিস।" এইটুকু বলেই একটু থামেন তিনি। তারপর ফের বলতে থাকেন, "উত্তর ঠিক দিলে প্রাইজ-ও পাবি।"
মুকুল মেসির ছবিটা খাতায় লাগানো কমপ্লিট করে, এবার তাকায় ওর কাকার দিকে।
"কি প্রাইজ গো কাকাই?"
"আরে, আগে উত্তরটা তো ঠিকঠাক দে। কি, করব প্রশ্নটা?"
"হ্যাঁ করো।"
"গতকাল কতো তারিখ ছিল?"
"এটাই প্রশ্ন?"
"না, এটা প্রশ্ন নয়। তবে প্রশ্নের সঙ্গে এটা কানেক্টেড।"
"নাইন্টিন্থ জুলাই।" বলে মুকুল।
"এবার তাহলে বল্, নেক্সট ইয়ার নাইন্টিন্থ জুলাই ডেটটা ওয়ার্ল্ড ফুটবলের ক্ষেত্রে কেন স্পেশাল?"
"এ মা, এ তো সবাই জানে! ঐ ডেটে তো ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে।" প্রশ্নটা রৌদ্রবাবু শেষ করা মাত্রই বলে ওঠে মুকুল। মুকুলের জিভের ডগাতেই যেন ছিল উত্তরটা!
তাঁর ভাইপো ফুটবল ভীষণই ভালবাসে, সেটা জানেন রৌদ্রবাবু ভালোই। তার সাথে যে ও ফুটবলের খুঁটিনাটি খবরও রাখে, তা বুঝতে পারেন তিনি এখন। ফুটবলের ফ্যান তিনিও কম না। তাই বেশ ভালোই লাগে তাঁর। তিনি মুকুলের পিঠে একটা চাপড় মেরে বলেন, "সাবাশ।"
"তাহলে এবার আমার প্রাইজটা দাও।" বলে মুকুল।
"প্রাইজটা দেব, তবে এখন নয়, বিকেলে। প্রাইজ হিসেবে তোকে খাওয়াবো তোর খুব ফেভারিট একটা খাবার।"
"কি খাওয়াবে কাকাই?"
"যেহেতু তুই এই প্রাইজটা পাচ্ছিস একটা ফুটবল রিলেটেড প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, তাই যে খাবারটা তোকে খাওয়াবো সেটাও ফুটবলের মতোনই আকারে গোল। একটু খানি ওটা ভেঙ্গে তাতে সেদ্ধ আলু ও মশলা দিয়ে মাখা ঝাল-ঝাল পুর আর তারপর টক-টক তেঁতুলের জল পুড়ে সার্ভ করে দোকানদার..."
"ফুচকা?" চেঁচিয়ে ওঠে মুকুল।
"ইয়েস।" হেসে বলেন রৌদ্রবাবু।
"হুররে।" ফের একবার চেঁচিয়ে বলে ওঠে মুকুল।
ভাইপোকে এতো খুশি দেখে রৌদ্রবাবুরও ভাল লাগে খুব। তিনি মুকুলের পিঠে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন সস্নেহে।
Comments :0