Threat Culture

ভয় পেয়েছেন

সম্পাদকীয় বিভাগ


থ্রেট কালচারের সফল রূপায়ণের মাধ্যমে ভয়ের সাম্রাজ্য গড়ে তুলে চরম দুর্নীতি ও অবাধ লুটতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে। মাথার উপর স্বাস্থ্য মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর ছত্রছায়া না থাকলে, সাংসদ-বিধায়ক-কাউন্সিলরদের অতি সক্রিয় অংশগ্রহণ না থাকলে, অন্ধগত সরকারি পদাধিকারী ও কর্মীদের পূর্ণমাত্রায় সহযোগিতা না থাকলে, সর্বোপরি পুলিশের তরফ থেকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার অভয়বাণী না থাকলে দুর্নীতি ও লুটে খাওয়ার এমন বাস্তবতন্ত্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়। দুর্নীতি ও বেনিয়মের এই নাটের গুরুরাই বকলমে চালায় স্বাস্থ্য ভবন। এহেন দাদাগিরি ও লুটতরাজের হাড়িকাঠে গলা না দিতে মমতা ব্যানার্জির রাজ্যে এখন ডাক্তার হওয়া যায় না। স্বাস্থ্য দপ্তরে সসম্মানে-সমর্যাদায় চাকরিও করা যায় না। যাবতীয় ন্যায়নীতি-মূল্যবোধ ও সরকারি নিয়মনকানুনকে বিসর্জন দিয়ে কেবল চোর-দুর্নীতিগ্রস্তদের বিশ্বস্ত অনুচর হতে পারলেই এবং মোটা অঙ্কের টাকা দিতে পারলেই যে কারো ডাক্তার হতে বাধা নেই। তেমনি পছন্দের জায়গায় বদলি, পদোন্নতি আটকায় কে? দু’হাতে টাকা কামানোরও বিরাট সুযোগ। এমন এক কুৎসিত ব্যবস্থারই শিকার আর জি কর হাসপাতালের তরুণী ‍‌চিকিৎসক। সম্ভবত দুর্নীতির শিরোমণিদের মৌচাকে খোঁচা দিয়ে ফেলেছে বলেই তাকে এমন পৈশাচিকতায় বিদায় নিতে হয়েছে চিরতরে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী এসবের কিছুই জানতেন না মানুষকে এটা বিশ্বাস করতে হবে? তাঁর দলের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে দুর্নীতির এসব কুশীলবরা। তবে কি দলের ভেতরে কি চলছে সে খবরও তিনি রাখেন না? পুলিশও কি তাঁকে কোন খবর দেয় না। তবে কি দলের ভেতরে চলছে সে খবরও তিনি রাখেন না? পুলিশও কি তাঁকে কোনও খবর দেয় না। যদি তিনি কিছুই না জেনে থাকেন তবে স্বাস্থ্য বা পুলিশ মন্ত্রী থাকার তার কোনও যোগ্যতাই নেই। এরপরও তিনি সেইসব পদ আঁকড়ে থাকেন কোন লজ্জায়। আর যদি ধরে নেওয়া হয় তিনি সবটাই জানতেন, তাঁর গোচরেই সবকিছু ঘটত তাহলে তিনি তা চলতে দিলেন কেন? কেন কড়া পদক্ষেপ নেননি? এমন কি ‍চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের পর সব ধামাচাপা দেবার, তথ্য প্রমাণ লোপাটের মরিয়া প্রয়াস চলার সময়ও নীরব থাকলেন কেন? কেন প্রধান অভিযুক্তের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন এবং তাকে সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলেন? তাই কোনও অবস্থাতেই দায় এড়াবার অধিকার নেই মুখ্যমন্ত্রীর।
মুখ্যমন্ত্রী কল্পনাই করতে পারেনি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য উত্তাল হয়ে উঠছে গণপ্রতিবাদে, গণবিক্ষোভে। তিনি ভেবেছিলেন অতীতের সব ঘটনার মতো যাবতীয় সত্য প্রমাণ লোপাট করে সব ধামাচাপা দেবেন। ধমক চমক দিয়ে মানুষকে ভুলিয়ে দেবেন। কিন্তু সেটা হয়নি। আন্দোলন শুধু অপ্রতিরোধ্য হয়নি, তার ব্যাপ্তি প্রবলভাবে ধাবিত হচ্ছে ভবিষ্যতের দিকে। আন্দোলন যত তীব্র হচ্ছে ততই মুখোশ খুলে যাচ্ছে সরকারের। এই আন্দোলনকে ভয় পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী‍‌। ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন তার গদি ওল্টানো অনিবার্য করে তোলে। তাই তিনি চান যেভাবেই হোক এই আন্দোলনের রাশ টেনে বন্ধ করতে। আন্দোলনরত ডাক্তারদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও বিশেষ সুবিধা হয়নি। নজর ঘোরাতে বন্যাকে ইস্যু করে কেন্দ্রের সঙ্গে কলতলার ঝগড়ায় মাতলেন। বন্যাক্লিষ্ট মানুষের মুখ দেখিয়ে আবেগ তৈরি করে চেষ্টা করলেন তিলোত্তমার নৃশংসতাকে চাপা দিতে। কাজ হয়নি। এখন মরিয়া শারদোৎসবে মানুষ মাতিয়ে রেখে আন্দোলনে ইতি টানতে। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভিজছে না দেখে এবার রাষ্ট্রশক্তিকে রাস্তায় নামিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন নিষিদ্ধ করার অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক হুলিয়া জারি করেছেন। আগামী দু’মাস কলকাতায় যাবতীয় মিটিং-মিছিল প্রতিবাদ বিক্ষোভ বন্ধ করতে ১৬৩ ধারা জারি করেছেন। প্রতিবাদ-বিরোধিতায় তিনি প্রবল ভয় পে‍‌‍য়েছেন।, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে শঙ্কিত হয়েছেন। তাই মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কাড়তে তিনি উদ্ধত। মানুষ ছেড়ে কথা বলবেন না। এর মূল্য তাঁকে দিতেই হবে।

Comments :0

Login to leave a comment