Egra Blast

চোর, দালালরা এখানে কেন, মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ গ্রামে

রাজ্য

Egra Blast

বিস্ফোরণস্থলে এসে ‘চোর চোর’ স্লোগান শুনেই ফিরতে হলো তৃণমূলের প্রতিনিধিদলকে। গ্রামবাসীদর ‘চোর হটাও’ স্লোগানে ক্ষিপ্ত মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া সিপিআই(এম)’র বিরুদ্ধে বিষোদাগারও করেন। যদিও তাতে আরও ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীদের উত্তেজিত মেজাজ দেখে শেষমেশ দশ মিনিটের মধ্যেই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয় তৃণমূলের প্রতিনিধিদলকে।
এদিকে যার কারখানায় মঙ্গলবার বিস্ফোরণ ঘটেছে, এগরা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা ভানু বাগ, তাঁর স্ত্রুী-ছেলে সহ ফেরার। পুলিশ কোনও হদিশ পায়নি। একদিন পরেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বিস্ফোরণের ঘটনায়। অথচ মঙ্গলবার গ্রামের মধ্যে পুলিশি মদতে, টাকার বিনিময়ে চলা বোমা তৈরির কারখানায় এমন বিস্ফোরণের ঘটনার পরে পুলিশকে ঘিরে সাধারণ গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখানোয়, এদিন দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরে গ্রামবাসীরাই উদ্ধারকাজে হাত লাগান, পরে পুলিশ এবং দমকল এলে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ। এমনকি এগরা থানার আইসি’র উর্দি ছিঁড়ে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা বলেছেন, ‘ভানু বাগের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নিত এই পুলিশ।’ আর এই ঘটনাতেই দু’জনকে এদিন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও চারজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে জেরা চলছে অথচ মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা ভানু বাগ ও তাঁর পরিবার বেপাত্তা!


বুধবার সন্ধ্যায় গ্রামে আসে ছয়জনের মরদেহ। কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা গ্রাম। শোকের পাশাপাশি নতুন করে ক্ষোভের পরিবেশ তৈরি হয়। গ্রামবাসীদের ক্ষোভ আরো বাড়ে যখন দেখা যায় সেই অভিযুক্ত আইসি’র তত্ত্বাবধানেই শেষকৃত্যের কাজ চলে। আইসি মৌসম চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেই গ্রামবাসীদের মূল অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে এই বোমা তৈরির কারখানা চলতে সাহায্য করতো পুলিশই। সেই পুলিশ আধিকারিককে ফের দেখে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। ফেরার ভানু বাগ ও তাঁ স্ত্রী-ছেলের নামে আইপিসি’র ১৮৮, ৩০৪, ২৮৬ ও ফায়ার সার্ভিসেস অ্যাক্টের ২৪ ও ২৬ ধারায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। যদিও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে কোনও মামলা দেয়নি পুলিশ যা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে বহু জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ, তাহলে কি প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা চলছে, উঠছে প্রশ্ন।


কয়েকবছর আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় এক তৃণমূল নেতার বাড়ি লাগোয়া বোমা তৈরির কারখানাতে বিস্ফোরণে একাধিকজনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন বিয়েবাড়ির বাজি তৈরি হচ্ছিল সেখানে। পরে সিআইডি রিপোর্টেও সেই বিয়েবাড়ির বাজি তত্ত্বই প্রতিষ্ঠা হয়। ফলে পিংলার মতো এই ঘটনাকেও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেই অভিযোগ গ্রামবাসীদের। 


এদিন দুপুরে এগরার খাদিকুল গ্রামে আসে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, বিপ্লব রায়চৌধুরি, সৌমেন মহাপাত্র, দোলা সেন, এলাকার বিধায়ক তরুণ মাইতি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি মৃতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা ছিল এই প্রতিনিধিদলের। কিন্তু গ্রামে আসতে দেখেই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন এলাকাবাসী। ভিড় জমে যায়। এলাকার সাধারণ তৃণমূল কর্মীরাও গ্রামবাসীদের মেজাজ দেখে থমকে যায়। পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যেই মন্ত্রীদের দেখে গ্রামবাসীরা চোর চোর বলে চিৎকার করতে থাকেন। এলাকাবাসীদের বলতে শোনা যায়- ‘এখানে দালালরা কেন? এদের জন্যই এই ঘটনা। চোর তৃণমূল হটাও’। 
এই ঘটনা যখন চলছে তখন এগরা থানার ঐ আইসি মৌসম চক্রবর্তী তৃণমূল নেতাদের ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন। আইসি-কে বলতে শোনা যায় ২০২০ সালে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তা আর রিনিউয়াল করেনি।’ প্রশ্ন এখানেই, তাহলে এতদিন ধরে কী করে লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও এই কারখানা চলছিল ? তার উত্তর কিন্তু প্রশাসনের কেউ দিতে পারেনি।
মানস ভুঁইয়াকে আবার বলতে শোনা যায় ৫০ বছরে সিপিএমের অনেক বিক্ষোভ দেখেছি। আমাকে এসব করে ভয় দেখানো যাবে না। দোলা সেন বলতে থাকেন, মানবদরদি মুখ্যমন্ত্রীর হয়েই আমরা এসেছি। কিন্তু গ্রামবাসীদের ক্ষিপ্ত মেজাজ দেখে মানবদরদি মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হয়ে দশ মিনিটেই গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন তাঁরা। 


এলাকাবাসীদের একটাই দাবি। এমন বেআইনি কারখানা এই গ্রামে কেন এই জেলাতে যেন না থাকে আর। অভিযুক্ত ভানু বাগকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি এগরা থানার আইসি সহ যে সমস্ত পুলিশ ও প্রশাসনের লোকেরা জড়িত তাদেরও শাস্তি দিতে হবে। 
এদিন ঘটনাস্থলে সিপিআই(এম) নেতা সুব্রত পন্ডা সহ অন্যান্যরা উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁদের কাছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন এলাকাবাসী। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। গ্রামবাসীরা সিপিআই(এম) নেতৃত্বের কাছে এই বোমা তৈরির কারখানা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ জানান।


 

Comments :0

Login to leave a comment