দীপক ভট্টাচার্য্য
সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদ (ইউসিআরসি) ১২ আগস্ট ২০২৪ নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ৭৫ বছরে পদার্পণ করেছে। স্বাধীনতার পূর্বে পূর্ণ স্বরাজের দাবিতে উত্তাল আন্দোলনের সময়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির চাপে জাতীয় নেতৃত্বের নমনীয় মনোভাবের মধ্যে দিয়ে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ করে ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। দেশের স্বাধীনতা যেমন গর্বের তেমনি দেশভাগ উদ্বাস্তু জীবনে অন্ধকার অধ্যায়ের সূচনা করে। দেশভাগের সময় যেমন জনমত যাচাই করা হয়নি, তেমনি দায়িত্বপ্রাপ্ত সিরিল র্যাডক্লিফ্ বাস্তব পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতি না রেখেই মানচিত্র ভাগ করেন। সেদিন জাতীয় নেতৃত্ব পৃথিবীর ইতিহাসে লক্ষ লক্ষ মানুষের নিজভূমে পরবাসী হওয়ার বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্দাজ করতে পারেনি। দেশভাগের বলি হয়ে শুধু সংখ্যালঘু হিন্দুই নয় মুসলিম, খৃষ্টান, বৌদ্ধ ,জৈন, দলিতরাও এদেশে আসে। সাম্প্রদায়িক দুই শক্তির লুম্পেনদের আস্ফালনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে নিজেদের ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া মানুষের নতুন নামকরণ হয় উদ্বাস্তু। ১৯৪৮ সালে হায়দ্রাবাদে সামরিক হস্তক্ষেপ, ১৯৫০ সালের দাঙ্গা, ১৯৫১ সালের ঝড়, দুর্ভিক্ষ, ১৯৫২ সালে পাসপোর্ট প্রথা চালু ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির আক্রমণের ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে এদেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের স্রোত আসতে থাকে।
পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত পাঞ্জাবের উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সরকারের যে উদ্যোগ ছিল, পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে ছিল তার বিপরীত। জাতীয় নেতৃত্বের আশ্বাস নিমেষেই উধাও হয়ে যায়। অনাহার, মহামারীতে বিধ্বস্ত উদ্বাস্তুদের পাশে বামপন্থী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি ত্রাণের ব্যবস্থা করলেও তা ছিল অপ্রতুল। চুড়ান্ত অব্যবস্থা, জীবন যাপনের অনিশ্চয়তা, অনাহার ও রোগে প্রতিদিন রেল স্টেশন, আলো বাতাসহীন পরিতক্ত গুদামঘরে বিনা চিকিৎসায় শত শত শিশুসহ উদ্বাস্তুদের মৃত্যুর মিছিল চলতে থাকে। এই সময় সরকারের উদাসীনতা দেখে তাদের সম্পর্কে উদ্বাস্তুদের মোহভঙ্গ ঘটে।
পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘু মানুষদের ওপর ক্রমাগত আক্রমণের খবর প্রকাশ্যে আসায় পাকিস্তান সরকার আনন্দবাজার, অমৃতবাজার, স্বাধীনতা পত্রিকা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়, তেমনি ২৫ মার্চ '৪৮ এরাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব স্বাধীনতা পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ করে দেয়। দিশেহারা সরকার ২৫ জুন, ১৯৪৮ ঘোষণা করে এরপর থেকে যারা আসবেন, তাঁদের আর উদ্বাস্তু বলে গণ্য করা হবে না। অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পূর্ববঙ্গ সংখ্যালঘু কল্যাণ সমিতি ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে প্রতিবাদ সভায় ও নিখিল বঙ্গ বাস্তুহারা সমিতি নৈহাটিতে এক সম্মেলনে উদ্বাস্তুদের নাগরিক অধিকার ও ভোটাধিকারের দাবি জানায়। চাপে পড়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্থায়ী প্রায় ৫০০ টি ক্যাম্প তৈরি করে বর্ডার স্লিপ দেওয়া শুরু করলেও অচিরেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও একই সাথে কলকাতার ব্রিটিশ ইন্ডিয়া স্ট্রিটে উদ্বাস্তুদের মধ্যে অনুশীলন ও যুগান্তর দলের প্রায় ৩০০ উদ্বাস্তু সদস্যদের নিয়ে অস্থায়ীভাবে রাজ্য সচিবালয় ও কল্যাণী চাঁদমারিতে অস্থায়ীভাবে একটি শিবির খোলা হয়। অবশ্য এর পর উদ্বাস্তুরা জন্মস্থানে ফিরে যাবে এমন সরকারি মনোভাবের ফলে তা বন্ধ হয়ে যায়।
স্টেশন, রাস্তায় দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে উদ্বাস্তুরা নিজেরাই মাথা গোঁজার জন্য ১৯৪৯ সালে ৬ অক্টোবর গড়ে তোলে নৈহাটী বিজয়নগর জবর দখল কলোনি। একের পরে এক দ্রুত কলোনি পত্তনের সময় জমিদার, জোতদার, প্রশাসনের সার্বিক আক্রমণের বিরুদ্ধে দুর্বার লড়াই জন্ম দেয় উদ্বাস্তু চেতনার। ১৯৫১ সাল থেকেই উদ্বাস্তুদের পরিবার থেকে কর্মী নিয়োগসহ চালু হয় অস্থায়ী বিভিন্ন ধরনের মোট ১৭৪ টি উদ্বাস্তু শিবির। উদ্বাস্তুরা ফিরে যাবে এই আশায় ১০ এপ্রিল, ১৯৫০ নেহরু-লিয়াকত চুক্তি সম্পাদন হলেও তা ব্যর্থ হয়। বারবার শিবিরে ত্রাণ বন্ধ, কর্মীদের ছাঁটাই ইত্যাদি প্রতিবাদ সহ এসময়কালে উদ্বাস্তুদের দাবির সমর্থনে ছাত্র ফেডারেশনের বহু কর্মী মিছিল সংগঠিত করে পুলিশের গুলিতে নিহত ও আহত হন, তেমনি চিকিৎসা দিতে গিয়ে পিআরসি, ডাক্তার, নার্স কর্মীরা বাধাপ্রাপ্ত, রক্তাক্ত হন। কোচবিহারে খাদ্যের দাবিতে সমাবেশে পুলিশের গুলিতে পাঁচ জন নিহত হন। লাঠি, গুলি ,হুমকি, ধরনা, অবস্থান-বিক্ষোভ, অনশনে প্রশাসনিক আক্রমণ , গ্রেপ্তার-জেল ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। চরম দুরবস্থা শিকার ছিল শিশু ও মহিলারা। মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি সহ বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন , স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সমাজসেবীরা উদ্বাস্তুদের সংগঠিত করে পাশে থেকে আন্দোলন সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
ইউনিভার্সিটি ইন্সটিউট হলে বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব , বিশিষ্টজন ও মুসলিম উদ্বাস্তু, বিভিন্ন ক্যাম্প উদ্বাস্তুদের ৮০০ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে প্রথম সম্মেলনে ১২ আগস্ট ১৯৫০ সালে সত্যপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়কে সভাপতি ও অম্বিকা চক্রবর্তীকে সম্পাদক করে গড়ে ওঠে দেশের বৃহত্তম উদ্বাস্তু সংগঠন ইউসিআরসি। এই সংগঠন কোনও শ্রেণী সংগঠন বা শ্রেণী ফ্রন্ট নয়। ছাত্র, যুব ,মহিলা ,কৃষক, শ্রমিক ইত্যাদি সহ সর্বস্তরের গণতান্ত্রিক মানুষ এখানে যুক্ত। বহু উদ্বাস্তুদের আত্মবিসর্জন ও আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠা এই সংগঠন দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ যৌথ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে মর্যাদার সাথে বাঁচার তাগিদে অধিকার আদায়ের ধারাবাহিক লড়াইয়ে সামিল হয়। অনেক টালবাহানা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারকে বাধ্য করে উদ্বাস্তুদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি, ভোটাধিকার প্রয়োগ ও পুনর্বাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে। যদিও সরকার আজও আগত উদ্বাস্তুদের শরণার্থী আখ্যা দিয়ে রেখেছে। ৫০-৬০ এর দশকে স্থায়ী সুষ্ঠু পুনর্বাসনের দাবি নিয়ে বহু আবেদন, বিকল্প পরিকল্পনা সরকারকে পেশ করলেও নীতিগত অবস্থানের বারবার বদল, জাতীয় সমস্যাকে জিইয়ে রেখে প্রলম্বিত করেছে। স্বল্প সময়ের প্রথম ও দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেও তা রূপায়ণ করতে না পারলেও রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে বহু বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অনিচ্ছুক হাত থেকে কিছু কিছু অধিকার ছিনিয়ে আনে।
ছিন্নমূল বা বাস্তুহারা মানুষ এক টুকরো জমি থেকেই শুধু উৎখাত হয় না তার কৃষ্টি , সংস্কৃতি, শিক্ষা , স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান , রুটি রুজি, পরিস্থিতি পরিবেশ এমনকি মানবিক মূল্যবোধও আক্রান্ত হয়। মানুষের স্বভাবজাত প্রক্রিয়ায় বিধ্বস্ততার মধ্যেও মাথা তুলে দাঁড়াবার ও নির্মাণের প্রচেষ্টা থাকে। বামপন্থীদের পাশে নিয়ে দীর্ঘ সংগ্রাম আন্দোলনের ফলে অধিকার অর্জনের সাথে উদ্বাস্তু জীবনেও পুনর্গঠন শুরু হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের ঘৃণ্য শর্তে পুনর্বাসন প্রস্তাব ফিরিয়ে সমর মুখার্জির নেতৃত্বে আরআর কমিটির রিপোর্ট পেশ ও প্রশান্ত শুরের নেতৃত্বে সর্বদলীয় গুচ্ছ প্রস্তাব ও সুষ্ঠু পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক দাবি আজও অমীমাংসিত। জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে নিঃশর্ত দলিল, পর্চা প্রাপ্তি, কলোনি উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, আর্থিক অগ্রগতির মাধ্যমে বিলম্বিত হলেও ১৯৮৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু সহযোগিতায় উদ্বাস্তু জীবনের পরিবর্তন হতে শুরু করে। বামফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটার পর উদ্বাস্তুদের উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের কাজ চরম অবহেলিত হচ্ছে।
কলোনি স্বীকৃতি সহ উন্নয়ন, নিঃশর্ত দলিল ও পর্চা প্রদানের কাজও প্রায় বন্ধ। উদ্বাস্তুদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে জমি অধিগ্রহণ হস্তান্তর না করেই দখলি সত্বের দলিল প্রদান করছে যা প্রতারণামূলক। আজও বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় ৩০০ উদ্বাস্তু পরিবার যৎসামান্য ত্রাণ নির্ভর। তাদের করুণ অবস্থা সত্ত্বেও সরকার নির্বিকার।
শাসক দল, প্রোমোটার চক্র যেনতেন প্রকারে জমি থেকে উৎখাত, সরকারি জমি, মূল্যবান সম্পত্তি লুট, সুস্থ স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে বিপন্ন করে প্রতিবাদী উদ্বাস্তু মহিলা পুরুষের ওপর নগ্ন আক্রমণ শাণাচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতার বাইনারি তৈরি করে আরএসএস, বিজেপির মত ভয়ংকর শক্তিকে উদ্বাস্তু অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত করায় সহযোগিতা করছে শাসকদল। উন্নয়নের নামে বিকল্প পুনর্বাসন ছাড়াই ভিটে মাটি, রুটি রোজগারে বুলডেজার চালিয়ে উচ্ছেদ ঘটাচ্ছে। কলোনির নাম পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে পরিচিতির ইতিহাসকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে সরকারী ভাবেই। উদ্বাস্তুরা মূল স্রোতে মিশে গেছে, তাদের জন্য আর কিছুই করার নেই - এই বক্তব্যের আড়ালে কেন্দ্রীয় সরকার স্বাধীন দপ্তর তুলে দিয়ে বকেয়া পুনর্বাসনের দায় থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে, তেমনি রাজ্য সরকারও পুনর্বাসনের কাজ শেষ করার স্বার্থে নতুন কর্মী নিয়োগ না করে, উল্টে স্বাধীন দপ্তরকে ভূমি রাজস্ব দপ্তরের সাথে যুক্ত করেছে। স্বাভাবিক পুনর্বাসনের কাজকে অর্ধ সমাপ্ত রেখেই উৎপাদন কেন্দ্র সহ দপ্তর গুটিয়ে আনতে চাইছে।
বর্তমানে দুই শাসক দল ধর্মীয় মেরুকরণের আড়ালে প্রশাসন, প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে নতুন প্রজন্মের উদ্বাস্তুদের মনোজগতে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। বর্তমান নতুন প্রজন্মের কাছে উদ্বাস্তু হওয়ার জীবন যন্ত্রণা সম্পর্কে, বামপন্থীদের ও ইউসিআরসির ভূমিকা, ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রামের ফলে জীবন জীবিকার পরিবর্তনের ইতিহাস অজানা। তাই উদ্বাস্তুদের কাছে নতুন বিপদ সম্পর্কে জানার অনীহা, অস্তিত্ব রক্ষায় আগ্রহ কম।
এদিকে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সিএএ, এনআরসি-র ফাঁদে ফেলে নতুন করে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব হরণ করতে চাইছে। দ্বিতীয়বার উদ্বাস্তু করার লক্ষ্যে উইপোকা, ঘুষপেটিয়া , অনুপ্রবেশকারী , শরনার্থী নানা নামকরনে উদ্বাস্তুদের অসম্মান করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে উদ্বাস্তুদের এদেশের বোঝা প্রতিপন্ন করতে চাইছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে উদ্বাস্তু আন্দোলনের ইতিহাসকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। অন্যদিকে বহির্বঙ্গের বাংলার উদ্বাস্তুদের আজও স্থায়ী পুনর্বাসন হয়নি, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিও বিপন্ন ।
সারা বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদী সংকটে, সামরিক আগ্রাসনে, জাতি দাঙ্গায়, উন্নয়নের নামে পরিবেশকে বিপন্ন করে উদ্বাস্তু সংখ্যা বাড়ছে। ব্যতিক্রমী নয় আমাদের দেশ ও রাজ্য। আন্তর্জাতিক সংস্থার দ্বারা সুরক্ষিত উদ্বাস্তু অধিকারগুলো অস্বীকার করে আজও সনদে সই করেনি ভারত সরকার। দ্রুত জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। এদিকে আবার রাজ্য ভাগের চক্রান্ত চলছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ঘটনাবলী যেদিকে যাচ্ছে সেখানে মৌলবাদী শক্তির উত্থানের ফলে এদেশের উদ্বাস্তু ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ উদ্বিগ্ন। নতুন করে সেখানকার মানুষ যাতে বাস্তুচ্যুত না হয় ও দ্রুত সম্প্রীতির পরিবেশ ফিরে আসে, এই প্রত্যাশায় রয়েছে।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং কিছু উদ্বাস্তু গবেষকদের লেখায় প্রকৃত ইতিহাসের বদলে সত্যকে আড়াল করে বিকৃত তথ্য পরিবেশন এবং বিভ্রান্তিকর পুস্তক প্রকাশের ফলে সুস্থ পরিবেশ বিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। অস্বীকার করা যাবে না যে, নতুন প্রজন্মের কাছে উদ্বাস্তু পরিচিতির আগ্রহ কমছে। রাজনৈতিক চেতনার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। নতুন মাত্রায়, নতুন আঙ্গিকে এই আক্রমণকে প্রতিহত করতে ইউসিআরসির দায়িত্ব বাড়ছে। বর্তমান আবহে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল ও গনসংগঠন সমূহ বিভিন্ন ভাবে মেরুকরণকে হাতিয়ার করে নিজেদের প্রসার ঘটাতে বদ্ধপরিকর। এর বিপরীতে দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে ইউসিআরসি তার ঐতিহ্যকে সামনে রেখে ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ও সামাজিক বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিরুদ্ধে এবং বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার দায়বদ্ধতা থেকে সংগঠনকে সময়োপযোগী ও শক্তিশালী করতে বদ্ধপরিকর।
উদ্বাস্তু জীবন যন্ত্রণার অবসানে মানবিক দৃষ্টিতেই জাতীয় সমস্যাটির দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। আমরা চাই না দীর্ঘ টালবাহানায় উদ্বাস্তুদের সমস্যাগুলি আরও জটিল হোক ও শতবর্ষ ধরে টিকে থাক। বকেয়া কাজ, উদ্বাস্তু স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার দাবী নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করা সহ বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন প্রজন্মের কাছে অতীতের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে সচেতন করতে ৭৫ তম বর্ষে সারা বছর ব্যাপী বহুবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সচেতনতা মূলক সেমিনার, সামাজিক কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, মিলন মেলা হবে। এছাড়া উদ্বাস্তুদের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি ও কলোনি অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য ভান্ডার এবং বিকল্প শিক্ষা কেন্দ্র গঠন করা হবে। এছাড়া সংগঠনের ওয়েবসাইট তৈরি, তথ্যচিত্র ও চিত্র প্রদর্শন ,পার্টিশন স্টাডিজ সেন্টার গঠন করে উদ্বাস্তু ও নতুন প্রজন্মকে সংগঠিত করাই এই সময়ের কাজ। দেশের অখন্ডতা বজায় রাখতে উদ্বাস্তু জীবন যন্ত্রণার অবসানে উদ্বাস্তু ও সাধারণ মানুষের ঐক্য গড়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে সকলকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
Comments :0