West Midnapore Lynching

শবরদের ঘর দখল করতেই সবঙে নাবালক হত্যা

রাজ্য

West Midnapore Lynching

 

 ‘‘সকালে খাবার জোগাড়ে বেরিয়ে সন্ধ্যার মুখে খিদার জ্বালায় ছটফট করছিল। সে কিনা বিষ কিনবে?’’ সবঙে তৃণমূল নেতা ও তার সঙ্গীদের মারে নিহত নাবালক কিশোরের মা বালিকা নায়েক ভাঙা ঘরের উঠোনে বসে দমবন্ধ করা কান্নায় বলতে বলতে জ্ঞান হারালেন। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে শুক্রবার কাজ ছেড়ে বাড়িতে এসেছেন বাবা বাতাস নায়েক। মামিমা দেবী পরামানিক ভাঙাচোরা তিনটি খুপরি দেখিয়ে বলেন,  একটায় ওর বাবা, মা থাকে। মা, বাবা মজুর খাটতে চলে যায়। ছেলেটা ছোটবেলায় আমাদের কাছে থাকতো। এখন ঐ সরকারি ঘরটায় থাকে। ঐ ঘরটা ওদের লোভ। ক্লাব বানাবে। ছেলেটা ঐ ঘরে থাকে বলে মদের আসর বসাতে অসুবিধা  হয়। তারপর ক্লাব বানালে সরকারি টাকা পাবে, পঞ্চায়েত মদত দেয়। মদের কারবার বসাতে অসুবিধা হয় ওদের। 
বাকি দু’টি খুপরিতে ত্রিপল টাঙিয়ে বাস করে দুই দাদা। বড় দাদা পরমেশ্বর ঘরে থাকে। মেজ দাদা ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক। পরিবারের লোকজন খুনিদের শাস্তি চায়। পুরো গ্রাম যেন খাঁ খাঁ করছে। 
সবং থানার বটচাহারাতে লোধা সম্প্রদায়ের ১৩বছরের কিশোরকে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য সহ তার দলবল পিটিয়ে খুন করে। পুলিশ ঐ তৃণমূলী পঞ্চায়েত মনোরঞ্জন মাল সহ উদয় মল্লিক, সনাতন মল্লিক, শম্ভু নায়েক, সত্যজিৎ নায়েক, জয়দেব মানা, বরেন মল্লিক মোট সাত জনকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার। শুক্রবার মেদিনীপুর আদালতে তোলা হয়। পঞ্চায়েত সদস্য সহ তিন জনের পুলিশি হেপাজত হয় তিন দিনের জন্য। বাকিদের জেল হেপাজত হয়েছে।
ঘটনার মোড় ঘোরাতে সকাল থেকেই কিশোরের বিষ খেয়ে আত্মহত্যার গল্প ছড়ানো হয়। কিন্তু আসল রহস্য উঠে এল একটি ১১ফুট বাই ৯ফুট সাইজের দরজা-জানালাবিহীন আবাস যোজনার পাকা ঘরের দখল নিতে মিথ্যা চুরির অভিযোগে জরিমানা ধার্য করে সেই ঘর দখল নিয়ে ক্লাব ঘর বানানোর ষড়যন্ত্র। উল্লেখ্য, শবর জনজাতির মানুষদের মেদিনীপুরে লোধা এবং পুরুলিয়ায় খেড়িয়া বলে থাকেন স্থানীয় মানুষজন। 
জানা গেছে, ক্লাব ঘর দেখাতে পারলে সরকারি অনুদান সহ শবর জনজাতির নামে নানান প্রকল্পের লোভ দেখিয়ে তৃণমূলের ঐ পঞ্চায়েত সদস্য সহ তার সঙ্গীরা এই চুরির গল্প ফেঁদে পিটিয়ে খুন করেছে। সরাসরি এই অভিযোগ তোলেন মৃত নাবালকের মা বালিকা নায়েক ও তার মামিমা দেবী পরামানিক। রাতে আবার সালিশি সভা বসিয়ে চুরির নানা অভিযোগ তুলে তাদের ছেলেকে ফুটবল খেলার মতো করে মারে। তাতেই তার মৃত্যু হয়। তারপর ঘরের সামনে ফেলে দিয়ে চলে যায় ভোররাতে।  সেই স্থানেও এখনও মুখ থেকে গড়িয়ে পড়া গ্যাঁজলা জমাট বেঁধে আছে। বিষ খেলে তো বিষের গন্ধ থাকতো, প্রশ্ন মা ও মামিমার।
বুধবার সন্ধ্যার মুখে খাবার দোকান থেকে খাবার তুলে নেওয়ার ঘটনায় মারধর সহ মাথা ন্যাড়া করে আবারও গাছে বেঁধে মারধর করে এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য মনোরঞ্জন মাল সহ তার দলবল। তারপর ঐ রাতে আবার সালিশি সভা বসে পাড়ায়। সালিশি সভায় একের পর এক কারো বাড়ির হাঁড়ি, কারো বাড়ির দা, কোদাল চুরি, এমন নানা অভিযোগ তোলা হয়। তাতে ১৩বছরের এই নাবালক শুভ নায়েককে ‘স্বীকারোক্তি’ করিয়ে জরিমানা বাবদ ঐ আবাস যোজনার ঘরটা বিক্রি করেছে বলে লিখে দিতে হবে। তা না মানায় মিটিং বসিয়ে ছেলেটাকে ফুটবল খেললো ওরা। এই অভিযোগ খুন হয়ে যাওয়া ঐ নাবালকের মায়ের। 
মৃত নাবালকের মা বালিকা নায়েক বলেন, ‘‘মোরা শুধু আকুতি-মিনতি করলি। ছেলেটাকে ছেড়ে দে বাপ। ওর বাবা আসুক, তোদের কথা শুনবে। না কোনও কথা শুনল না। ছেলেটাকে নিয়ে ফুটবল খেলল। সেই সালিশি সভায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মনোরঞ্জন মাল ছিল। খুন করে এখন মিছা কথা বলছে ওরা। ছেলেটা নাকি বিষ খেয়েছিল। এত রাতে বিষ কোথায় পাবে? যার পকেটে এক টাকাও নেই সে বিষ কিনবে কী করে।’’ হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকেন বালিকা নায়েক। 
এদিন আদিবাসী অধিকার মঞ্চ এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের নেত্রী গীতা হাঁসদা বলেন, আগামী রবিবার সবং থানা অভিযান সহ বিক্ষোভ ডেপুটেশন হবে। পরিবারটিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment