এসআইআরের শুনানি প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনার অভাবে সাধারণ মানুষদের হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইলেকশন কমিশনের চরম গাফিলতি নজরে এসেছে। কাগজপত্রের নাম করে সহ নানাভাবে সাধারণ গরীব মানুষদের অযথা হয়রানি করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হবে। মঙ্গলবার দুপুরে হিলকার্ট রোডে অনিল বিশ্বাস ভবনে সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানান পার্টির জেলা সম্পাদক সমন পাঠক। ছিলেন পার্টি নেতা দিলীপ সিং ও চা বাগানের মহিলা নেত্রী সুষমা লাকড়া।
সমন পাঠক এদিন বলেন, জমির কাগজ, ডিট অন্য নথির নাম করে এসআইআরের শুনানিতে যেভাবে গরীব মানুষদের হয়রানি হতে হচ্ছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। এসআইআরের শুনানি নিয়ে মানুষের মধ্যে ভোগান্তি ও আতঙ্ক বাড়ছে। বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষেরা সমস্যায় পড়ছেন। এসআইআর শুনানির প্রক্রিয়ার কাগজপত্র নিয়ে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। হয়রানি বাড়ছেই। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। রাতে নোটিশ দিয়ে সকালে শুনানির জন্য আসতে বলা হচ্ছে। অন্তত ৭২ঘন্টা সময় দিয়ে শুনানিতে ডাকা উচিৎ। এরপর শুনানিতে এসেও সময়ের কোন ঠিক থাকছে না। সকাল থেকে ঠাঁয় লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষজন। শুধু তাই নয়, অসুস্থ, বয়ষ্ক, প্রতিবন্ধী মানুষজনও এই প্রবল ঠান্ডায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে ঘন্টার পর ঘন্টা। কখন শুনানি প্রক্রিয়া হবে কিছু জানা নেই।
সমন পাঠক অভিযোগ করেন, শুনানি প্রক্রিয়া চলাকালীন আধিকারিকরা অত্যন্ত অমানবিক আচরন করছেন। ১১টি সুনির্দিষ্ট কাগজপত্র দেখানোর পরেও জমি, ডিট, অন্য কাগজপত্র আনার জন্য বলা হচ্ছে। একজন মানুষকে তিন চারবার করে ঘোরানো হচ্ছে কাগজপত্রের নাম করে। অজস্র গরীব হিন্দি ভাষী মানুষ যারা দীর্ঘ ৩০/৪০বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন, যাদের এখানকার ভোটারকার্ড ও অন্যান্য নথি রয়েছে, সেই সমস্ত মানুষদের বাবা মা বিহারের কোন প্রত্যন্ত গ্রামে মারা গেছেন সেই শংসাপত্র আনার জন্য তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের এই সমস্যার মধ্যে ফেলা হচ্ছে। নোটিশ জারি করে বলা হয়েছে ৮৫বছর বা তার উর্ধে বয়ষ্কদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে শুনানির কাজ করা হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ৭০বছরের উর্ধে বহু বয়ষ্ক অসুস্থ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। বসার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। জলের সুব্যবস্থা নেই। এসআইআরের নামে অবিচার করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের মানুষ যাদের ঠিকমতো চলা ফেরার ক্ষমতা নেই তারাও ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। অনাথ যাদের বাবা মা বা কোন পরিচয় নেই। তাদেরকেও হয়রানির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। ২০০২তে নাম থাকা সত্ত্বেও কিছু লজিক্যাল ক্রুটির জন্য তাদের আবার ডেকে নিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বংশ পরম্পরায় চা বাগানের জমিতে বসবাসকারী বাগিচা শ্রমিকদের কোন জমি বা বাড়ি কিছুই নেই। তাদের ডাক নামেই বাগানে খাতা চলে। কিন্তু হয়তো আধার কার্ডে ভালো নাম রয়েছে। আদিবাসীরা ২০০বছর ধরে চা বাগানগুলিতে বসবাস করছে। কিন্তু এদের জন্যও কোন সুরাহা ইলেকশন কমিশন এখনও পর্যন্ত দিতে পারেনি।
বলেন, এসআইআর শুনানি প্রক্রিয়া চলাকালীন যেখানে সাধারন মানুষদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, সেখানে দাঁড়িয়ে ২০২৬—র বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল আর বিজেপি রাজনৈতিকভাবে ভোটের ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। সিএএ ফরমও একই সঙ্গে পূরনের জন্য বলছে বিজেপি। আমরা এসআইআরের বিরুদ্ধে নই। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের বিএলএ সব জায়গাতে থাকছেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে যারা আমাদের দেশের নাগরিকদের একজনেরও নাম বাদ দেওয়া চলবে না। শুনানি প্রক্রিয়ায় নিয়জিত কিছু কিছু আধিকারিকদের মনোভাব সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে বাদ দিতে হবে। এসআইআর শুনানি প্রক্রিয়া চলাকালীন আমাদের পর্যবেক্ষন আমরা ইলেকশন কমিশনের কাছে জানাব।
CPIM Darjeeling
শুনানি প্রক্রিয়ায় হয়রানি, দার্জিলিঙ-এ কমিশনকে চিঠি দেবে সিপিআই(এম)
×
Comments :0