Editorial

আদানি সুরক্ষা ভায়া মাধবী

সম্পাদকীয় বিভাগ

শেয়ার বাজারে জালিয়াতি ও কারচুপি করে শেয়ার মূল্য কৃত্রিমভাবে অস্বাভাবিক বাড়ানোর যে গুরুতর অভিযোগ আমেরিকার সংস্থা হিন্ডেনবার্গ দফায় দফায় তুলেছিল মোদী ঘনিষ্ঠ আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাতে সঙ্গত করার আরও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সেবি-র চেয়ারপার্সন মাধবী পুরী বুচের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, শেয়ার বাজারে একচেটিয়া প্রাধান্য কায়েম করে সীমাহীন মুনাফা কামানোর যে বন্দোবস্ত আদানিরা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে সেটা কোনও অবস্থাতেই সম্ভব হতো না যদি চেয়ারপার্সন পদ অলঙ্কিত করে বসে না থাকতেন মাধবী। আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে যে মাধবীর ঘনিষ্ঠতা যে গভীর ইদানীং একে একে প্রকাশ পাচ্ছে। তেমনি মাধবীকেই সেবি-র চেয়ারপার্সন হিসাবে মোদী-শাহর বেছে নেওয়ার পেছনের রহস্য নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠে গেছে। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে ভারতের অর্থনীতি একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় মোদী সরকার যেভাবে দু’হাত উজাড় করে আদানিদের উৎসর্গ করছে তেমনি শেয়ার বাজারকে পুরোপুরি আদানিদের কবজায় আনতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাধবীকে। মোদী সরকার, সেবি, মাধবী এবং আদানি গোষ্ঠীই এখন অশুভ মহাজোটের নির্দশন। মাধবী নিজেও স্বার্থের সংঘাতে দীর্ণ। সেবির শীর্ষ পদে বসেও তিনি অবৈধ ও অনৈতিকভাবে টাকা কামিয়ে গেছে। একই দোষে দুষ্ট মোদী-শাহ নিযুক্ত সেবি-র অপর সর্বক্ষণের সদস্য অনন্ত নারায়ণও।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট থেকে জানা গেছে আদানিরা নিজেদের টাকা বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে ঘুর পথে দেশে এনে বিদেশি লগ্নি রূপে ঢেলেছে নিজেদেরই শেয়ারে। এমন জালিয়াতিতে তরতর করে বেড়েছে তাদের শেয়ারের দাম। বিভিন্ন সময় এমন অভিযোগ দেশের অভ্যন্তরে উঠলেও সেবি তাকে আড়াল করে গেছে আদানিদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। পরে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের পর যখন দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয় তখনও মাধবীর নেতৃত্বে সেবি নির্বিকার। পরে সুপ্রিম কোর্ট সেবিকে এবিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে গড়িমসি করে তদন্তে ঢিলেমি করে। শেষে কার্যত কোনও তদন্ত না করেই, আসল গোপন‍‌ রেখে আদানিদের ক্নিনচিট দেয় সেবি।
হিন্ডেনবার্গের পরবর্তী রিপোর্ট পরিষ্কার করে দেয় মাধবী আদানিদের জালিয়াতি ধরবে কীভাবে? তিনি নিজেই তো অবৈধ পথে টাকা রোজগার করেছেন। সেবির সর্বক্ষণের সদস্য এবং পরে চেয়ারপার্সন হয়েও তিনি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন এবং সেখান থেকে মোটা টাকা রোজগার করেছেন। কোথাও ছিলেন শেয়ারের মালিক, কোথাও পদস্থ কর্ত্রী, কোথাও বাড়িওয়ালি। এমন কি সেইসব সংস্থার সঙ্গে তাঁর স্বার্থের সম্পর্ক ছিল যাদের বিরুদ্ধে সেবি তদন্ত করছে। এমন দুরাচার মোদী জমানাতেই সম্ভব।
মাধবীর বিরুদ্ধে এমন অনাচার নিয়ে শোরগোল চলতে থাকায় সঙ্গত কারণেই সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি মাধবীকে দু’দুবার পাঠায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। কিন্তু তিনি হাজির না থাকার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। তিনি যাতে হাজিরা না দেন তার জন্য লাগাতার চেষ্টা করেছেন বিজেপি নেতারা। মোদী-শাহরা কোনোমতেই চাইছেন না মাধবীকে জেরা করুক সংসদীয় কমিটি। তাতে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। বিজেপি কোনও অবস্থাতেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। বন্ধু আদানিকে রক্ষা করছে মাধবীকে সামনে রেখে। একই সঙ্গে বাঁচতে চাইছে নিজেরাও।
 

Comments :0

Login to leave a comment