চন্দন মুখোপাধ্যায়
মোদীজি’র নিউ ইন্ডিয়া। ২৮ মে ২০২৩, ভারতের গণতন্ত্রে যার কোনও ভূমিকা নেই, বরং স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্রিটিশদের সহযোগী সাভারকারের জন্মদিনে, নরেন্দ্র মোদী ‘নদস্বরাম’ এর সুর এবং বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ, ধর্মীয় প্রার্থনা, সাধুসন্তদের মন্ত্রোচ্চারণ আর পূজা পাঠের মধ্যে দিয়ে উদ্বোধন করলেন ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের "গণতন্ত্রের মন্দির" নতুন সংসদভবন। ধুমধাম করে সংসদ ভবন উদ্বোধনে যাঁর উদ্বোধন করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, শুধু নিচু জাত বলে দেশের রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণই জানানো হলো না। দেশের ২০টা বিরোধী রাজনৈতিক দল সেই কারণে প্রতিবাদে এই অনুষ্ঠান বয়কট করে। প্রায় ১২০০ কোটি টাকা খরচ করে ৬৫,০০০ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে ৮৮৮টি আসনের একটি বৃহত্তর লোকসভা কক্ষ ,৩৮৪ জন সদস্যের জন্য একটি রাজ্যসভা কক্ষ এবং পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনের জন্য ১২৭২ আসনের আলাদা একটি কক্ষ নিয়ে তৈরি এই নতুন সংসদভবন এই আলোচনার বিষয় নয়। বরং এর মধ্যে দিয়ে এক মারাত্মক পরিকল্পনার যে খসড়া তৈরি হলো, সেটা নিয়ে এই নিবন্ধ। গভীর সত্যিটা না জানলে ভারতের গর্বের অখণ্ডতা, যুক্তরাষ্ট্রীয় চরিত্র এবং গণতন্ত্রের জন্যে ভবিষ্যতের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার প্রকৃত চেহারাটা আমরা দেখতে পাবো না।
২০২৬ সালে আইনানুযায়ী আদমশুমারি হবে এবং তারপর ডিলিমিটেশন করে জনসংখ্যা অনুযায়ী 'এক নাগরিক-এক ভোট-এক মূল্য' নিয়মে গোটা দেশে সংসদ আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাস করার কথা। ২০২১ সালে করোনার কারণে আদমশুমারি করা যায়নি।
স্বাধীনতার পর ১৯৫১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে ১৯৫২ সালে প্রথম ডিলিমিটেশন করা হয়, যেখানে সর্বাধিক ৪৯৪টি লোকসভা আসন সংখ্যা নির্ধারিত হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে রাজ্যগুলির পুনর্গঠনের পর পরবর্তী ডিলিমিটেশন ১৯৬৩ সালে হয়েছিল, যেখানে লোকসভার আসন সংখ্যা সর্বাধিক ৫২২ করা হয়। ১৯৭২-৭৩ সালে ডিলিমিটেশনের পর আসন সংখ্যা সর্বাধিক ৫৫০ করা হয়। সংবিধানের ৮২ এবং ১৭০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভার আসন সংখ্যার পাশাপাশি আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় আসনের পুনর্বিন্যাস প্রতিটি আদমশুমারির পরে করা হবে। এই কাজ 'ডিলিমিটেশন সংসদ’র একটি আইনের অধীনে গঠিত 'ডিলিমিটেশন কমিশন' দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার জন্যে এই ডিলিমিটেশন ২৫ বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। সেই সময়ে একটা বড় কারণ সামনে এসেছিল। জনসংখ্যার হার যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাতে এই বিষয়টাকে আগে গুরুত্ব দিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সময় ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার সংবিধানের ৪২তম সংশোধনী এনে ‘পরিবার পরিকল্পনা’কে সংবিধানের যুগ্মতালিকায় যুক্ত করে, রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথ দায়িত্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যোগী হয়েছিল। পরবর্তীতে সাধারণ মানুষ বিশেষত মহিলাদের শিক্ষা, সামাজিক ও আর্থিক স্বনির্ভরতা এবং মানব উন্নয়ন নিয়ে সঠিক বিজ্ঞান ভিত্তিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে পরিকল্পনা নিয়ে ‘পরিবার পরিকল্পনা’র কাজ করা গেলে এই জনবিস্ফোরণ ঘটতো না। সেদিন বলা হয়েছিল সব রাজ্য ২৫ বছর সময় নিয়ে নিজেদের রাজ্যে এই কাজগুলো করে উন্নয়নের মাপকাঠিতে একটা ভারসাম্যের জায়গায় এলে ডিলিমিটেশনের কাজ করা হবে। সেই হিসাবে ২০০১ সালে আদমশুমারির ভিত্তিতে ডিলিমিটেশন করার কথা হয়েছিল। এটা যে সঠিক ছিল সেটা বাজপেয়ী সরকার অস্বীকার করেনি। তাই ৮৪তম সংশোধনী এনে ওই লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাজপেয়ী সরকার আরও ২৫ বছর সময় দেয়, অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত। কিন্তু এই ৫০ বছর ধরে এক ‘নতুন ভারত’ দেখা গেল। ১০ পেয়ে গোল্ড মেডেল পাওয়া আর ১০০ পেয়ে ফেল করার ভারত। মূল আলোচনা এখানেই।
মোদী সরকার দ্রুত সংসদ ভবন তৈরি করে ২০২৬ এই আদমশুমারি করে, তার ভিত্তিতে সামনের নির্বাচনের আগেই ডিলিমিটেশন করে ২০২৯-এর নির্বাচনে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যেটা অনায়াসেই ২০৩১-এ করা যেতে পারতো। এই আদমশুমারির পর জনসংখ্যা ঠিক কত হবে না জানলেও বিভিন্ন সংস্থা একটা হিসাব দিচ্ছে, কমবেশি ১৪৫ থেকে ১৫০ কোটি। তার ভিত্তিতে লোকসভা আসনের সীমা ও সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে 'এক নাগরিক-এক ভোট-এক মূল্য'-এর ভিত্তিতে। ১৯৭১ সালের ভিত্তিতে দক্ষিণের তামিলনাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশ, কেরালা, তেলেঙ্গানা, কর্নাটক মিলিয়ে সাংসদ সংখ্যা ছিল ১২৯ (২৩.৫৭%), আর বিহার, ইউপি, এমপি(সংযুক্ত), রাজস্থান মিলে ছিল ১৭৪ (৩২%)। বর্তমানের তথ্য অনুযায়ী উত্তর প্রদেশের একজন সাংসদ কমবেশি ৩০ লক্ষ ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করে, বিপরীতে তামিলনাড়ু ১৮ লক্ষ। অর্থাৎ তামিলনাড়ুর একটা ভোট ইউপি’র একটা ভোটের থেকে ১.৭৫% মূল্য বেশি হচ্ছে। এটা পরিবর্তন করে যুক্তিসঙ্গতভাবে ডিলিমিটেশন না করা হয়, তাহলে 'এক নাগরিক-এক ভোট-এক মূল্য' থাকছে না। এই যুক্তিকে সামনে রেখেই মোদীজির আসল মারাত্মক খেলা। এবার আদমশুমারির পর রাজ্যগুলোর আসনের চেহারা আমূল বদলে যাবে। ২০১৯ সালে আমেরিকান অন্যতম প্রধান সংস্থা কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর মিলান বৈষ্ণব এবং জেমি হিন্টসন একটি গবেষণাপত্রে (সেই বছরের জনসংখ্যার অনুমানের উপর ভিত্তি করে) লেখেন, ‘২০২৬ সালে লোকসভা আসনের মোট সংখ্যা আনুমানিক ৮৪৬ হবে। এই অনুমান অনুসারে, উত্তর প্রদেশে বর্তমান আসন ৮০ থেকে ১৪৩-এ গিয়ে দাঁড়াবে এবং বিহারে ৪০ থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৭৯ হবে। অন্যদিকে, কেরালা এবং তামিলনাড়ুর মতো দক্ষিণের রাজ্যগুলি ১৬টি আসন হারাতে পারে।’ বিভিন্ন সংস্থা থেকে যে সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে আসন সংখ্যা ৮০০-র কাছাকাছি হবে। ১৯৫১, ১৯৬১ এবং ১৯৭১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে জনসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৬.৮, ৪৩.৯ এবং ৫৪.৮ কোটি। প্রতি আসনের গড় জনসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭.৩, ৮.৪ এবং ১০.১ লাখ। এবার যে মাপকাঠিই ধরা হোক বিহার, ইউপি, এমপি, ছত্তিশগড়, রাজস্থানের আসন সংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটবে, আর দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিমের কিছু রাজ্যে কমবে অথবা খুবই সামান্য বৃদ্ধি পাবে। সর্বোচ্চ আসন বাড়বে ইউপি আর একই সংখ্যা থাকবে বা কমেও যেতে পারে কেরালায়। এখানেই আছে ভোটের রাজনীতির আসল খেলা। কারণ এই রাজনীতির খেলাটায়, বিজেপি নিজেদের রাজত্ব স্থায়ী করার এক বিধ্বংসী খেলায় নেমেছে সেটা আজ সামনে আনা জরুরি।
দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বিজেপি জোট ছাড়া মাটি খুঁজে পাচ্ছে না। মূলত উত্তর ভারতের রাজ্য এবং হিন্দি বলয়ে বিজেপি’র মুল শক্তি। সেই রাজ্যগুলির বিশাল আসন সংখ্যা বৃদ্ধি বিজেপি-কে ক্ষমতায় স্থায়ীভাবে রাখতে পারে, আর এর মাধ্যমে দক্ষিণের এবং অন্য রাজ্যগুলিকে গলা টিপে ধরা যাবে। দক্ষিণকে তাকিয়ে থাকতে হবে কেন্দ্রের বদান্যতার দিকে অথবা সমঝোতা করে টিকে থাকতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে, মানব উন্নয়নের মাপকাঠিতে যে রাজ্যগুলো সাফল্য পেলো তাদের পুরস্কারের বদলে জুটবে ভয়ঙ্কর বঞ্চনা। এক ভারতের মধ্যে চক্রান্ত করে বিজেপি গড়তে চাইছে অনেকগুলো ভারত। আর্থিক চিত্রের দিকে তাকালে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে।
কেন্দ্রের সরকার রাজ্যগুলি থেকে দু’ধরনের কর পায়, প্রত্যক্ষ আয়কর এবং পরোক্ষকর যা মূলত জিএসটি। রাজ্যবাসীর গড় আয়ের উপর সেই রাজ্যের সংগৃহীত করের পরিমাণ নির্ভর করে, আর যে রাজ্যের গড় আয় যত কম হবে উন্নয়নের মাপকাঠিতে তাকে তত অনুন্নত হিসাবে ধরা হয়। মাথাপিছু গড় আয়ের পরিমাণের উপরেই কেন্দ্রের কর বণ্টন ব্যবস্থা নির্ভর করে। যেমন বিহারে জনপ্রতি গড় আয় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা আর তেলঙ্গানায় সেই গড় আয় তিন লক্ষ টাকা। অর্থাৎ তেলঙ্গানার চেয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে বিহারের বেশি অর্থ সাহায্য প্রয়োজন। সেই কারণেই বিহারে বেশি পরিমাণ কর ফেরত দেওয়া হয়। ২৮টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে চাহিদা, প্রয়োজন অনুযায়ী করের টাকার অংশ ভাগ করে দেয় কেন্দ্র। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে কম কর দিয়ে সবচেয়ে বেশি টাকা ফেরত পায় বিহার। তারা সরকারকে যে পরিমাণ কর দেয়, তার ৭.০৬ শতাংশ বেশি ফেরত পায় আর মহারাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি কর দিয়ে সবচেয়ে কম কর ফেরত পায়, মাত্র ০.০৮ শতাংশ। কেন্দ্রের কর সংগ্রহের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, দেশের ৭০ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর আসে মূলত চারটি রাজ্য থেকে। ২০২২-২৩ সালে কেন্দ্র মোট সাড়ে ১৬ লক্ষ কোটি টাকা কর সংগ্রহ করেছিল। তার মধ্যে মহারাষ্ট্র থেকেই পাওয়া গিয়েছিল ৬.১৪ লক্ষ কোটি টাকা। দিল্লি এবং কর্নাটক থেকে ২ লক্ষ কোটি, তামিলনাড়ু থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকা। কেন্দ্রের কর বণ্টনের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, উত্তর প্রদেশকে ২.৭৩ শতাংশ, অসমকে ২.৬৩ শতাংশ, মধ্য প্রদেশকে ২.৪২ শতাংশ, ঝাড়খণ্ডকে ২.১৫ শতাংশ, ছত্তিশগড়কে ১.৯৬ শতাংশ, হিমাচল প্রদেশকে ১.৪৬ শতাংশ, ওড়াশাকে ১.৩৫ শতাংশ, রাজস্থানকে ১.৩৩ শতাংশ এবং উত্তরাখণ্ডকে ১.২৯ শতাংশ কর ফেরত দেয় কেন্দ্র। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ ০.৮৭ শতাংশ, পাঞ্জাব ০.৬৯ শতাংশ, কেরল ০.৫৭ শতাংশ, অন্ধ্রপ্রদেশ ০.৪৯ শতাংশ, তেলঙ্গানা ০.৪৩ শতাংশ, তামিলনাড়ু ০.২৯ শতাংশ, হরিয়ানা ০.১৮ শতাংশ এবং কর্নাটক ০.১৫ শতাংশ ফেরত পায় কেন্দ্রের থেকে। সর্বোচ্চ কর প্রাপকদের এই তালিকায় থাকা ১১টি রাজ্য ভৌগোলিকভাবে ভারতের উত্তর দিকে রয়েছে। শেষ আটটি রাজ্যের মধ্যে উত্তর ভারতের মাত্র একটি রাজ্য রয়েছে, হরিয়ানা এবং পশ্চিমে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি শাসিত গুজরাত। দক্ষিণ ভারতের সব রাজ্যের নামই তালিকায় শেষের দিকে। সবচেয়ে বেশি কর দিয়েও সবচেয়ে কম অর্থ কেন্দ্রের থেকে ফেরত যায় তাদের কাছে। দক্ষিণের রাজ্যগুলির বক্তব্য, দীর্ঘ দিন ধরে তারা কর বণ্টনে কেন্দ্রের বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। এই ব্যবস্থার কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। কেন্দ্র তাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে।
কেন দক্ষিণের অভিযোগ সত্ত্বেও কেন্দ্র এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করছে না? উত্তর প্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্যগুলির জনসংখ্যা দক্ষিণের রাজ্যগুলির চেয়ে বেশি। এই রাজ্যগুলির ভোটব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে থাকে শাসকদল, নির্বাচনে যা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই এই রাজ্যগুলির জন্য বরাদ্দ কখনওই খুব একটা কমে না। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী গত বাজেট পেশ করার পরেই কর বণ্টন নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে সরব হন দক্ষিণের একাধিক নেতা। মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরে থেকে শুরু করে কেরলের পিনারাই বিজয়ন কিংবা কর্নাটকের ডিকে শিবকুমার, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন সকলেই। এমনকি ওদের জোটসঙ্গী চন্দ্রবাবু নাইডু তো আর এক ধাপ এগিয়ে রাজ্যবাসীর কাছে জনসংখ্যা বাড়ানোর আবেদন জানান। তাঁদের দাবি, দক্ষিণের করের উপর নির্ভর করে ‘উত্তরের গাড়ি চালাচ্ছে’কেন্দ্র। দক্ষিণ তার প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
যদি সত্যি মোদীজি যুক্তরাষ্ট্রীয় চরিত্র এবং গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেন তাহলে তো একটা সঠিক পথ বের করে সমগ্র দেশের এই কাঠামো ঠিক করতে উদ্যত হতেন। ভালো কাজের পুরস্কার কি এই সংসদের আসন সংখ্যা এবং আর্থিক বঞ্চনা? তাহলে আগে নিশ্চিত করা দরকার যাতে রাজ্যগুলো নিজেদের উন্নত করার প্রতিযোগিতায় যুক্ত হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি ফেডারেশনে, হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের (আমাদের লোকসভার সমতুল্য) আসন সংখ্যা ১৯১৩ সাল থেকে ৪৩৫ তে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। দেশের জনসংখ্যা ১৯১১ সালের ৯.৪ কোটি তুলনায় প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে ৩৩.৪ কোটি হয়েছে। রাজ্যগুলির মধ্যে আসনগুলি 'সমান অনুপাতের পদ্ধতির' মাধ্যমে প্রতি আদমশুমারির পরে পুনর্বণ্টন করা হয়। এর ফলে কোনও রাজ্যের কোনও উল্লেখযোগ্য লাভ বা ক্ষতি হয় না। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালের আদমশুমারির উপর ভিত্তি করে, পুনর্বিন্যাসের ফলে ৩৭ টি রাজ্যের আসন সংখ্যার কোনও পরিবর্তন হয়নি। টেক্সাস দুটি আসন এবং অন্য পাঁচটি রাজ্য একটি করে আসন লাভ করেছে। সাতটি রাজ্য একটি করে আসন হারিয়েছে। আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘এক রাজ্য এক মূল্য’ নীতি প্রণয়ন করেছে। আমাদের দেশেও এমন কিছু ভাবতে হবে যাতে সমাজকল্যাণমূলক কাজ করা রাজ্যগুলোকে উৎসাহিত করা এবং আর্থিক সুরক্ষা দেওয়া যায়। এমন ব্যবস্থা করা দরকার যাতে বড় জনসংখ্যার রাজ্যগুলো যেন কম জনসংখ্যার রাজ্যগুলোর ওপর সংসদের আসন সংখ্যার ক্ষমতার জোরে সব কিছু চাপিয়ে দিতে না পারে। গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা দেশের মানুষই তৈরি করেছে। তাই আমাদেরই একে রক্ষা করতেই হবে। আজ সংবিধান, গণতন্ত্র, আম্বেদকরকে অস্বীকার করে স্বঘোষিত ‘বিশ্বগুরু’ ও ’ঈশ্বরের বরপুত্র’ মোদীজি নগ্নভাবে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলে রাখার খেলায় মেতেছেন। তাই সারাদেশব্যাপী দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, অখণ্ডতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আওয়াজ তুলতে হবে। কারণ ‘নতুন সংসদ-আদমশুমারি-ডিলিমিটেশন’কে ক্ষমতায় থাকার জন্যে ব্যবহার করবেন মোদীজি।
Comments :0