Digha Jagannath temple

বাড়ি হচ্ছে জগন্নাথের, বেঘর গরিব পূর্ণিমারা

রাজ্য

রাধাগোবিন্দ মান্না: দীঘা
 

বাড়ি হচ্ছে ‘জগন্নাথ’র। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে, মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়। তাই উচ্ছেদ করা হয়েছে অনেকগুলি পরিবারকে। তাদের একাংশ, ১৯টি পরিবারের ঠাঁই হয়েছে হাসপাতাল এলাকায়, দুর্গন্ধময় জায়গায়। এই প্রবল শীতে তাঁদের ঝুপড়িতে বসবাস। মাথার ওপর ছাদ বলতে পলিথিন, কিংবা টিন।
ঘটনাস্থল দীঘা লাগোয়া পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর বিধানসভা এলাকার পদিমা- ১ পঞ্চায়েতের ভোগীব্রহ্মপুর গ্রাম। দীর্ঘদিন বালিয়াড়ির ওপরে কিংবা নিচে, ছোট্ট ছাউনি দিয়ে যে যার মতো করে ঘর নির্মাণ করে দীর্ঘদিন বসবাস করছিলেন প্রায় ৩০টি পরিবার। ২০১৮-র ডিসেম্বরে পূর্ব মেদিনীপুরের এক সভায় প্রথম দীঘায় বিশাল মন্দির তৈরির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি ক্ষেত্র’। প্রকল্প খরচ প্রাথমিকভাবে ছিল ২৩০ কোটি টাকা। ২০১৯-র আগস্টে দীঘায় গিয়ে মন্দির প্রকল্পের জমি ঘুরে দেখেন মমতা ব্যানার্জি। তাঁর সঙ্গে তখন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী তথা বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রমুখ ছিলেন। 
সেই পরিকল্পনায় পদিমা-১ পঞ্চায়েতে ভোগীব্রহ্মপুর গ্রামে ডিএসডিএ-কে দিয়ে জায়গা অধিগ্রহণ করে। ডিএসডিএ সেই জায়গা জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের জন্য হিডকোকে দেয়। হিডকো এখন জগন্নাথ মন্দির বানানোর দায়িত্ব নিয়েছে। মন্দির প্রায় সম্পূর্ণ। ওই জায়গায় কুড়ি বাইশটি পরিবার বসবাস করত। তাদের উঠিয়ে দিয়ে প্রথমে রাখা হয়েছিল হাসপাতাল চত্বরের দুর্গন্ধময় এলাকায়। বামপন্থীরা সেই গ্রামবাসীদের বাসস্থানের দাবি তোলে। ডিএসডিএ হাসপাতালের পাঁচিলের কাছে জায়গা দেওয়া হয়েছে মাত্র কুড়ি বাই কুড়ি ফুট, পরিবার পিছু। মাথার ওপর টাঙানোর কিছুই দেওয়া হয়নি। ওই এলাকার রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী বছর ২১-র পূর্ণিমা জানা বলেন, ‘‘ছোট থেকে এই জায়গায় আছি। ডিএসডিএ আমাদের নতুন ঘর দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখনও পর্যন্ত মাথা গোঁজার আস্তানাটুকু দিতে পারেনি। অথচ ঝকঝকে পাথর দিয়ে ঘেরা বাথরুম বানিয়ে দিয়েছে। মন্দির হচ্ছে কোটি কোটি টাকায়। অথচ আমাদের ঘর দেয়নি। মাঝে মধ্যে এই হসপিটালের বাউন্ডারি থেকে উঠে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে কখনো কখনো।’’  
সেই উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলির সদস্য গণেশ জানা বললেন, ‘‘অটো চালিয়ে সাতজনের সংসার চালানো কঠিন। এখন উঠে যেতে বলছে। কোথায় যাবো? জিনিসের দাম রোজ বাড়ছে। কী করব, কোথায় যাবো?’’ তাঁর স্ত্রী লোকের বাড়িতে কাজ করেন। বাপি শ্যামল প্রহরীর কাজ করেন। স্ত্রী চা বিক্রি করেন। নির্মল দুয়ারী গাড়িতে কাজ করেন। স্ত্রী হোটেলের বাসন মাজার কাজ করেন। সুমিতা পাত্র সকাল বিকাল মশলা মুড়ি ও চা বিক্রি করে করেন বালিয়াড়িতে। দীঘার সমুদ্র সৈকতে বোতল প্লাস্টিক কুড়িয়ে যা হয় সেইটাই পঞ্চানন জানার সম্বল। তাঁরা বুধবার জানালেন, প্রায় তিন বছর আগে দীঘা শঙ্করপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ডিএসচডিএ)-র পক্ষ থেকে তাঁদেরকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ৬ মাস এখানে থাকতে হবে। তারপরে ‘আমার বাংলায়’ ঘর দেবে। কত ছ’মাস পেরিয়ে গিয়েছে, কিন্তু ঘর দেয়নি।’’ সুমিতা পাত্র এবং বরুণ জানা অভিযোগ জানালেন, ‘‘উলটে এখন আমাদের ওই কুড়ি ফুট বাই ২০ ফুট মাথা গোঁজার যে ঠাঁইটুকু সেটা থেকে উঠে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে মন্দির হচ্ছে। বলছে পর্যটক আসবে। ভালো। কিন্তু আমাদের কী হবে? আমাদের ঘরের লোক ঠিকমত কাজ পায় না। বালির ঠান্ডায় অসুস্থ হয় বয়স্করা, বাচ্চারা। আমাদের ঘর নেই। এই শীতে এইভাবে বেঁচে আছি। থাকা যায়? আমাদের কথা সরকার ভাববে না?’’ 
সিপিআই(এম) নেতা আশিস প্রামাণিক এবং ডিওয়াইএফআই নেতা উৎপল মাইতি জানালেন, ‘‘ডিএসএসডিএ এবং তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা ঘর দেবে বলে দিনের পর দিন এই পরিবারগুলিকে বঞ্চিত করেছে। নিউ দীঘা, ওল্ড দিঘা সমস্ত জায়গায় স্টল বানিয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। গরিব মানুষের কথা এরা ভাবছে না। অস্থায়ীভাবে এই মানুষগুলোকে রেখে দিয়ে জগন্নাথ মন্দিরে কিসের সার্থকতা?’’

 

Comments :0

Login to leave a comment