দেশের অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বিরুদ্ধে তোলাবাজির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। শুধু অভিযোগই নয়, বেঙ্গালুরুর পুলিশ সীতারামন, বিজেপি’র সভাপতি জেপি নাড্ডা সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর-ও করেছে। আবার এই এফআইআর হয়েছে বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালতের নির্দেশে। নির্মলার বিরুদ্ধে অভিযোগ পদাধিকার বলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইডি-কে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সংস্থাকে হুমকি দিয়ে, ভয় দেখিয়ে, তল্লাশি চালিয়ে, একরকম জুলুম করে অন্তত আট হাজার কোটি টাকা তোলা তুলেছেন। এইভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে মোটা টাকা তোলা তোলার আইনি বন্দোবস্ত করেছিল মোদী সরকার। নরেন্দ্র মোদীর মস্তিষ্কপ্রসূত এই বন্দোবস্ত নির্বাচনী বন্ড নামে কুখ্যাত ও পরিচিত। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ মোদী সরকারের চালু করা এই নির্বাচনী বন্ড বিধিকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি এটাও জানিয়ে দিয়েছে এটা নাগরিকদের সংবিধান স্বীকৃত তথ্য জানার অধিকার এবং বাক্ স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার হরণ করেছে নির্বাচনী বন্ড বিধি।
সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর জনাধিকার সংঘর্ষ পরিষদ নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে আদর্শ আইয়ার অন্তত ১৫টি অভিযোগ পুলিশের কাছে দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন। অবশেষে আদালতের নির্দেশে সেইসব অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এফআইআর করে। অভিযোগ নমুনা হিসাবে দু’টি ঘটনার উল্লেখ করা হয়। যেমন বেদান্ত গোষ্ঠীর কাছ থেকে তিন দফায় (এপ্রিল ২০১৯, আগস্ট ২০২২ ও নভেম্বর ২০২৩) মোট ২৩০.১৫ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। অরবিন্দ ফার্মার কাছ থেকে জুলাই ২০২২ থেকে নভেম্বর ২০২৩-এর মধ্যে তোলা হয়েছে ৪৯.৫ কোটি টাকা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংস্থাগুলি নিজ নিজ উদ্যোগে নির্বাচনী বন্ড কিনে বিজেপি’র তহবিলে জমা দেয়নি। বরং তাদের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তাদের নানাভাবে ভয় দেখানো হয়েছে, ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে, হয়রানি করা হয়েছে। সর্বোপরি ইডি-কে লেলিয়ে দিয়ে তল্লাশি চালিয়ে এমন এক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে যাতে টাকা দেওয়া ছাড়া সংস্থাগুলির কোনও উপায় ছিল না। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো এই অরবিন্দ ফার্মার এক ডিরেক্টরের বয়ান ব্যবহার করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
মোদী সরকার বুক ফুলিয়ে দাবি করেছিল রাজনৈতিক দলকে কর্পোরেট চাঁদা দানে স্বচ্ছতা আনতে তারা নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল। কিন্তু সেই আপাত স্বচ্ছতার আড়ালে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল ভয়ঙ্কর গোপনীয়তা। কে কাকে কত টাকা দিচ্ছে সে তথ্য সম্পূর্ণ গোপন রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। মানুষের জানার অধিকার ছিল না কারা কাকে কত টাকা দিচ্ছে তা জানার। সুপ্রিম কোর্ট একে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করে দেয়। এই বেআইনি অসাংবিধানিক ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়েই চলে ঢালাও তোলাবাজি।
Sitharaman
তোলাবাজ অর্থ মন্ত্রী
×
Comments :0