বাহিনীতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, ট্রেন হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ পলিট ব্যুরোর
জয়পুর মুম্বই সেন্ট্রাল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডকে নিছক এক বিভ্রান্ত মানসিকতার প্রতিফলন হিসাবে দেখা উচিত নয়। প্রেস বিবৃতি দিয়ে মঙ্গলবার এমনটাই জানাল সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো।
মুম্বইগামী জয়পুর মুম্বই সেন্ট্রাল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে গুলি চালনার ঘটনা ঘটে সোমবার। চেতন সিং নামে এক আরপিএফ কনস্টেবল নিজের উর্ধ্বতন অফিসার সহ ৪জনকে গুলি করে খুন করে। সরকারি তথ্য এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, নিজের সিনিয়র অফিসার টিকারাম মীনাকে খুন করার পর দুটি কামরা এবং প্যান্ট্রিকারে গিয়ে ৩জন মুসলিম যাত্রীকে খুন করেছে চেতন সিং।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনার ভিডিও করেন। সেই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, গুলি করে খুন করা ব্যক্তির দেহের সামনে দাঁড়িয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ণ ভাষণ দিচ্ছে চেতন সিং। ভারতে থাকতে গেলে মুসলিমদের মোদী এবং যোগীকে মেনে চলতে হবে, এমন কথাও তাকে বলতে শোনা গিয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সিপিআই(এম)’র পলিটব্যুরোর তরফে প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে পলিটব্যুরো বলেছে, রেলওয়ে পুলিশ বাহিনীর একজন কনস্টেবল মুম্বাইগামী ট্রেনে তার সহকর্মী সহ অন্য তিনজন যাত্রীকে খুন করেছে। ভয়ঙ্কর এই হত্যাকাণ্ডকে নিছক এক বিভ্রান্ত মানসিকতার প্রতিফলন হিসাবে দেখা উচিত নয়। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক ব্যখ্যা তেমনই। অবশ্য এক্ষেত্রে তদন্তটুকু শুরু হয়েছে। নিহত যাত্রীরা সবাই মুসলিম। অভিযুক্ত কনস্টেবল এক কোচ থেকে অন্য কোচে গিয়ে বেছে বেছে মুসলিমদের হত্যা করেছে।
পলিটব্যুরো বলেছে, সরকারি পদে বসে প্রতিদিন বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা দেওয়া হচ্ছে। মুসলিম সম্প্রদায়কে সমাজের চোখে শত্রু বানানো হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক অভিধানের প্রতিটি গালিগালাজ যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, এই ঘটনা তারই প্রত্যক্ষ ফলাফল। একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, যার সত্যতা এখনো যাচাই করা সম্ভব হয়নি। সেই ভিডিওয় স্পষ্ট, কিভাবে অভিযুক্ত কনস্টেবল নির্দিষ্টভাবে মুসলমানরা পাকিস্তানের দ্বারা পরিচালিত হয় বলে উল্লেখ করেছে। সে আরও বলছে, মুসলমানরা যদি ভারতে থাকতে চায় তবে তাদের মোদি এবং যোগীকে ভোট দেওয়াই উচিত। অভিযুক্ত ব্যক্তির কথাবার্তায় কার্যত বিজেপি নেতাদের ব্যবহৃত ভাষারই প্রতিধ্বনি রয়েছে।
গোটা ঘটনা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিপিআই(এম) জানিয়েছে, বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দেশকে বিপর্যয়কর পরিণতির দিকে নিয়ে যায় বলে সুপ্রিম কোর্ট বারবার সতর্ক করেছে। কঠোরভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে বলেও আদালত একাধিকবার মন্তব্য করেছে। এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট, সাম্প্রদায়িক চিন্তা কিভাবে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্যদের প্রভাবিত করছে। যাদের দায়িত্ব নিরাপত্তা দেওয়া। সরকারী সুরক্ষাব্যবস্থায় এমন প্রভাব রীতিমত উদ্বেগজনক বিষয়। হিন্দুত্ববাদী শক্তির বিষাক্ত এজেন্ডা দেশকে কোন অতল গহ্বরে নিয়ে যাচ্ছে, এই নিন্দনীয় ঘটনায় সেই সত্যকেই তুলে ধরেছে । এই ধরণের ঘটনা রুখতে দেশবাসীকে এবার সজাগ হতে হবে।
Comments :0