প্রতীম দে
মোদী-দিদিকে কাটমানি দিলে স্যালাইনের নামে যে কোনও কিছু দেওয়া হতে পারে। এই ড্রাগ কন্ট্রোল কিছু বলবে না। স্যালাইনের জন্য মানুষ মরে যাচ্ছেন, অথচ এই সংস্থা তা স্বীকার করবে না।
বৃহস্পতিবার কলকাতার নিজাম প্যালেসে কেন্দ্রীয় ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের দপ্তরের সামনে একথা বলেছেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি।
এদিন ডিওয়াইএফআই, এসএফআই, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি এবং পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি একযোগে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সরকারি হাসপাতালে জাল স্যালাইন সরবরাহের প্রতিবাদে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অপরাধ চক্রের মাথাদের আড়াল করে চিকিৎসকদের হেনস্তার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিক্ষোভ অবস্থান। উঠেছে রাজ্যের স্বাস্থমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি।
মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘ড্রাগ কন্ট্রোলের কাছে অভিযোগ আসছে। তাও জাল ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করছে না। রাজ্য সরকার এই স্যালাইন সরবরাহ করতে দিয়েছে। গরিব মানুষ যান সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য, তাঁদের শরীরে যে বিষাক্ত স্যালাইন চলে যাচ্ছে তার দায় কে নেবে?
মীনাক্ষী বলেন, ‘‘জাল স্যালাইন সরবরাহে দায়ী ওষুধ কোম্পানি বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। মেটিয়াব্রুজে কয়েকজন দর্জিশিল্পী অন্ধ হয়েছেন এই চিকিৎসা করাতে গিয়ে। যারা জাল ওষুধ বানাচ্ছে আর যারা তার অনুমোদন দিচ্ছে, তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।’’
মীনাক্ষী জানিয়েছেন এরপর রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল দপ্তরেও অভিযান হবে। এদিন মীনাক্ষীর সঙ্গে প্রতিনিধিদল অভিযোগ বিশদে জানাতে যান কেন্দ্রীয় ড্রগা কন্ট্রোল কর্তৃপক্ষের কাছে। বেরিয়ে এসে বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।
মীনাক্ষী বলেন, ‘‘ড্রাগ কন্ট্রোলের একাধিক পদ খালি। নিয়োগ হচ্ছে না। মানুষকে মারার জন্য এই সংস্থা গুলো তৈরি করা হয়নি।’’
পিপলস রিলিফ কমিটির সম্পাদক চিকিৎসক ফুয়াদ হালিমও ছিলেন প্রতিনিধিদলে। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে বিষাক্ত স্যালাইন তৈরি করার সংস্থা বাড়ছে কেন সেটা আজ এখানে এসে জানা গেল। ব্যাঙের ছাতার মতো ভুয়ো সংস্থা বাড়ছে আর বরাত পাচ্ছে। এই ড্রাগ কন্ট্রোল কোনও নোটিশ, রিপোর্ট মানুষের সামনে আনে না। কেন আনে না তা জানা নেই। ড্রাগ কন্ট্রোল বলছে যে তারা রাজ্য সরকারকে ভুয়ো সংস্থার বিষয় জানিয়েছে। প্রসূতি মৃত্যু নিয়ে রাজ্য সরকার সেন্ট্রাল ড্রাগ কন্ট্রোলে কোনও রিপোর্ট দেয়নি এখনও। বিষাক্ত স্যালাইন ফেরাতে পারেনি রাজ্য এবং কেন্দ্রের ড্রাগ কন্ট্রোল। কেন রিপোর্ট পেশ করা হলো না, তা নিয়ে জানতে চেয়েছি। কিন্তু কোনও উত্তর নেই।’’
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার কী করে এই স্যালাইন চালাচ্ছে জানা নেই। মানুষের জন্য কাজ করবে সরকার। তার বদলে এই সরকারের জন্য মানুষ মারা যাচ্ছেন। ড্রাগ কন্ট্রোল বলছে লোক নেই যে গোটা বিষয়টি দেখবে। কিন্তু মানুষ কী করবেন? তাঁরা কী করে বুঝবেন কোনটা ভালো কোনটা খারাপ। রাজ্য কেন কোনও পদক্ষেপ নিল না।’’
এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, ‘‘কালো তালিকায় থাকা সংস্থা কী করে স্যালাইন দিচ্ছে? এই সংস্থার থেকে টাকা কারা খেলো? কোথায় গেল টাকা, সব বার করতে হবে।’’
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে জাল স্যালাইনে প্রসূতি মৃত্যু হয়েছে। একাধিক প্রসূতি অসুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন কয়েকমাস ধরে এই সংস্থার স্যালাইন ঘিরে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু বরাত কে পাবে তা তাঁরা ঠিক করেন না। করে স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তা-আধিকারিকরা। অথচ জাল স্যালাইন কাণ্ডে মৃত্যু ঘিরে প্রতিবাদের পর চিকিৎসকদের দায়ী করা হচ্ছে। তাঁদের নামে দায়ের হচ্ছে এফআইআর। আড়াল করা হচ্ছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিপুল অঙ্কের দুর্নীতি চক্রকে।
Comments :0