Post editorial

কর্মচারীদের হকের টাকায় হরির লুট

উত্তর সম্পাদকীয়​

শ্যামল কুমার মিত্র

বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের গৃহীত নীতি ও কর্মসূচি এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি ব্যর্থতা এবং ক্ষেত্র বিশেষে পরিকল্পিত স্বেচ্ছা ব্যর্থতার কারণে। ফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। টাকার প্রকৃত মূল্যকর্মে মজুরি/ বেতনের অবক্ষয় ঘটে। এই অবক্ষয়িত মজুরি/বেতন অবক্ষয়পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে চলতি মুদ্রাস্ফীতির হারে ডিএ দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী নেত্রী হিসাবে সঠিকভাবেই বলতেন, ‘যে সরকার কর্মীদের ডিএ দিতে পারে না তার ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকার নেই।’এবার নিচে প্রদত্ত তালিকা লক্ষ্য করুন।
বর্তমান সরকারের সময় (জুন - ২০১১ থেকে জুলাই-২০২৪ পর্যন্ত) ডিএ বঞ্চনা)

   
পুরানো বেতনে নতুন বেতনে পুরানো বেতনে নতুন বেতনে রাজ্য কর্মী কম পাচ্ছেন যে ডিএ বঞ্চনা (গ্রুপ-সি কর্মী) টাকা  বঞ্চনা (গ্রুপ-বি কর্মী) টাকা রাজ্যের সাশ্রয় কোটি টাকা
মাস ও বছর    কেন্দ্রীয় ডিএ  রাজ্যের ডিএ   বঞ্চনা  (গ্রুপ-বি কর্মী) টাকা
জুন-২০১১      ৫১%          ৩৫%          ১৬%                                 (১,৭৬০ টাকা)   (১,৪০৮টাকা)   ৪০০
জুলাই – ২০১১ ৫৮%       ৩৫%           ২৩%     ১২,৫৫৮         ১৫,৫৯৪ ৩,৪৫০
জানু - ২০১২ ৬৫%       ৪৫%           ২০%  ১০,৯২০         ১৩,৫৬০ ৩,০০০
জুলাই - ২০১২ ৭২%       ৪৫%           ২৭%  ১৫,০৬৬          ১৮,৯৫৪  ৪,০৫০
জানু – ২০১৩ ৮০%       ৫২%           ২৮%  ১৫,৬২৪          ১৯,৬৫৬ ৪,২০০
জুলাই – ২০১৩ ৯০%       ৫২%           ৩৮% ২২,২১৬         ২৭,৩৬০ ৫,৭০০
জানু - ২০১৪ ১০০%       ৫৮%           ৪২% ২৪,৪৪৪        ৩০,২৪০ ৬,৩০০
জুলাই - ২০১৪ ১০৭%       ৫৮%           ৪৯% ২৯,১০৬        ৩৬,৪৪৫ ৭,৩৫০
জানু – ২০১৫ ১১৩%       ৬৫%           ৪৮% ২৮,৫১২        ৩৫,৭১২ ৮,১০০
জুলাই – ২০১৫ ১১৯%       ৬৫%           ৫৪% ৩৩,০৪৮        ৪১,১৪৮ ৮,১০০
জানু – ২০১৬ ১২৫%       ৭৫%           ৫০% ৩০,৬০০        ৩৮,১০০ ৭,৫০০
জুলাই – ২০১৬ ১৩২% ২%      ৭৫%          ৫৭% ৩৫,৯১০        ৪৪,৮০২ ৮,৮৫০
জানু – ২০১৭ ১৩৬ ৪%      ৮৫%          ৫১%  ৩২,১৩০        ৪০,০৮৬  ৭,৬৫০ 
জুলাই – ২০১৭ ১৩৯ ৫%      ৮৫%          ৫৪% ৩৫,৩১৬ ৪৪,০৬৪ ৮,১০০
জানু –  ২০১৮ ১৪২% ৭%      ১০০%         ৪২% ২৭,৪৬৮ ৩৪,২৭২ ৬,৩০০
জুলাই – ২০১৮ ১৪৮%  ৯%  ১০০%  ৪৮% ৩২,২৫৬  ৪০,৩৩২   ৭,২০০
জানু – ২০১৯ ১৫৪% ১২% ১২৫%  ২৯% ৯,৭৪৪ ১২,০৯৩   ২,১৭৫/৯৭,২২৫
জুলাই – ২০১৯                  ১৭%  ০% ১৭% ১৩,৫৩৬ ১৯,৪৪০       ৪,৬২৬
জানু – ২০২০  ২১%  ০% ২১% ১৯,১৭৬ ২৭,৫৪০     ৬,৫৫৩.৫
জুলাই – ২০২০  ২৪%  ০% ২৪% ২৩,৬৮৮ ৩৪,০২০     ৮,০৯৫.৫
জানু – ২০২১  ২৮%  ৩% ২৫% ২৭,০৩২  ৩৮,৮৮০   ৯,২৫২ 
জুলাই – ২০২১  ৩১%  ৩% ২৮% ২৮,২০০ ৪০,৫০০ ৯,৬৩৭.৫
জানু – ২০২২  ৩৪%  ৩% ৩২% ৩১,৫৮৪ ৪৫,৩৬০ ১০,৭৯৪
জুলাই– ২০২২  ৩৮%  ৩% ৩৫% ৩০,০৯৬ ৫১,৮৪০ ১২,৩৩৬
জানু – ২০২৩  ৪২%  ৩% ৩৯% ৩৯,৪৮০ ৫৬,৭০০ ১৩,৪৯২.৫
মার্চ – ২০২৩  ৪২%  ৬% ৩৬% ২১,৯৯৬ ৩১,৫৯০ ৭,৫১৭.২৫
জুলাই – ২০২৩  ৪৬%  ৬% ৪০% ২০,৩০৪ ২৯,১৬০ ৬,৯৩৯
জানু – ২০২৪  ৫০%  ১০% ৪০% ৪৫,১২০ ৬৪,৮০০ ১৫,৪২০
এপ্রিল – ২০২৪  ৫০%  ১৪% ৩৬% ৩০,০৮০ ৩২,৪০০  ১০,২৮০
জুলাই – ২০২৪  ৫৩%  ১৪% ৩৯% ২১,৯৯৬ ৩১,৫৯০  ৬,৯৩৯
সর্বমোট                ৭,৪৯,১৭৭ ১০,৩৭,৭০৯ ২,১৯,১০৭.২৫
তালিকায় স্থানাভাবে গ্রুপ-ডি এবং গ্রুপ-এ কর্মীদের তথ্য দেওয়া সম্ভব হল না। গণনা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বেতনক্রমে সর্বনিম্ন মূল বেতনের উপর। অর্থ দপ্তরের তথ্য: রাজ্যকর্মী ও পেনশনার্সদের ১ শতাংশ ডি.এ দিতে ১ মাসে পুরানো বেতন ক্রম এবং নতুন বেতনক্রমে যথাক্রমে ২৫ কোটি এবং ৬৪.২৫ কোটি টাকা খরচ হয়। তালিকায় এই তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে। জানুয়ারি-২০১৯ পর্যন্ত বর্তমান রাজ্য সরকার কর্মীদের ডিএ না দিয়ে ৯৭,২২৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছিলেন। ষষ্ঠ রাজ্য বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান একটি সংবাদপত্রে (আনন্দবাজার) ‘মহার্ঘভাতা বনাম উন্নয়নের খরচ’ শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছিলেন, ‘‘এই ৯৭,২২৫ কোটি টাকা সরকার কর্মীদের ডিএ না দিয়ে ‘রাজ্যের উন্নয়নে’ ব্যয় করেছেন, রাজ্য এবং রাজ্যবাসী উপকৃত হয়েছেন। গরিব মানুষের উপকার হয়েছে। জনকল্যাণের বৃহত্তর স্বার্থে বেতনভুক রাজ্য কর্মীরা এটুকু ত্যাগ স্বীকার করলে ক্ষতি কি?’’ পরবর্তীতে ববি হাকিম সহ একাধিক ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের বক্তব্যেও একই বক্তব্য উঠে এসেছে। অর্থাৎ জুন-২০১১ থেকে জুলাই-২০২৪ পর্যন্ত সময়কালে ডিএ বঞ্চনার ফলে রাজ্য সরকার যে ২ লক্ষ ১৯ হাজার ১০৭.২৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন তা ‘রাজ্যের উন্নয়নে’ব্যয় করেছে সরকার। সবিনয়ে জানতে চাইব, রাজ্যকর্মীদের ডিএ’র টাকায় ‘উন্নয়ন’, অথচ সেই ‘উন্নয়ন’-এর কৃতিত্ব নিচ্ছেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী!
২০১১-১২ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত রাজ্যকর্মীদের বেতন-ভাতা-পেনশন খাতে বরাদ্দ অর্থের মধ্যে ২৫,২৬২ কোটি টাকা অব্যয়িত অবস্থায় রাজকোষে পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট খাতে কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের ৯,০০০ কোটি টাকাও অব্যয়িত। সব মিলিয়ে এই খাতে ৩৪,২৬২ কোটি টাকা রাজকোষে অব্যয়িত অবস্থায় মজুত আছে, যে অর্থে ১ বছর ৪৪% ডিএ দেওয়াই যায়, বকেয়া ৩৯। অর্থসঙ্কটে ডিএ দেওয়া যাচ্ছে না — সরকারি এই ভাষ্য কি সরাসরি মিথ্যাচার নয়? ‘কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ অ্যান্ড আদার্স ভার্সেস স্টেট অব ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যান্ড আদার্স, (ডিএ মামলা) বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টে ‘তারিখ-পে-তারিখ’সংস্কৃতির খপ্পরে। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের বক্তব্য, ‘‘এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায় কার্যকর করতে রাজ্যের ৪১,৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন, যে অর্থের সংস্থান করা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়। কলকাতা হাইকোর্ট ডিএ মামলার রায় কার্যকর করতে যাতে একলপ্তে বিপুল অর্থ রাজ্য সরকারকে ব্যয় করতে না হয়, তার জন্য রায়ে সংস্থান রেখেছেন। বলা হয়েছে, ‘‘পেনশনার্সদের প্রাপ্য নগদে মিটিয়ে সরকার কর্মরত কর্মীদের প্রাপ্য শর্তসাপেক্ষে কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা রাখতে পারেন।’’ তাই রায় কার্যকর করতে একলপ্তে সরকারকে ৪১,৫০০ কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে না। সরকার সচেতনভাবে সুপ্রিম কোর্টকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজনৈতিক দলের (বর্তমানে প্রায় সবই শাসকদলের) নেতা/নেত্রী পরিচালিত এনজিওগুলিকে ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১ অর্থবর্ষ পর্যন্ত শুধু ৫ বছরে ১ লক্ষ ৬ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ‘অন্যান্য’বর্ণিত খাতে ১০,৮৫৯ কোটি (সর্বমোট ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৬৭৬ কোটি) টাকার সরকারি অনুদান দিয়েছেন (তথ্য সূত্র: সিএজি)। এনজিও অর্থাৎ নন গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন সিএজি এবং রাজ্য সরকারি অডিট ও জবাবদিহির আওতার বাইরে। এই ১,১৭,৬৭৬ কোটি টাকা কোন জনস্বার্থে খরচ করেছে সংশ্লিষ্ট এনজিও, তা জানতে চাওয়ার ‘অধিকার’ টুকুও নেই সরকারের। একথা সহজবোধ্য সামাজিক খাতে বিনিয়োগের নামে যেমন রাজ্যে রাজকোষের অর্থের ‘হরির লুট’চলছে, একই কায়দায় এই ১,১৭,৬৭৬ কোটি টাকা সরাসরি হরির লুটের জন্যই দিয়েছে সরকার। সুনামির কায়দায় সরকারি অর্থে পাইয়ে দেওয়ার দুর্নীতির মাধ্যমে যে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার হরির লুট দেন, সেই সরকার ডিএ মামলার রায় কার্যকর করতে ৪১,৫০০ কোটি টাকার সংস্থান করতে পারেন না, এটা যুক্তিহীন সরকারি ভাষ্য। তথাকথিত ষষ্ঠ রাজ্য বেতন কমিশনের রিপোর্ট যা একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী বাদে অন্য কেউ দেখেননি, এমনকি যা আরটিআই করেও পাওয়া যায়নি। কমিশনের রিপোর্ট তো কোন নিষিদ্ধ দলিল বা দেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন নথি নয় যে তা প্রকাশ্যে আনা যাবে না। কেন্দ্র, সমস্ত রাজ্য, এ রাজ্যেও পূর্বতন সরকার বেতন কমিশনের রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কর্মীসংগঠন ও সংশ্লিষ্ট সকলের হাতে বিনামূল্যে তুলে দিয়েছেন, এটাই প্রচলিত রীতি। তাই সন্দেহ, এই রিপোর্টের আদৌ কোনও বাস্তব অস্তিত্ব কি আছে! তথাকথিত সুপারিশ মোতাবেক সংশোধিত বেতনক্রমে ৪ বছরের বর্ধিত বেতন থেকে কর্মীদের বঞ্চিত করেছেন সরকার, বাড়ি ভাড়া ভাতা ১৫% থেকে কমে ১২% হয়েছে।
সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টের বিচাপতি নিশীথা মাত্রে এবং তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিসন বেঞ্চ রাজ্যকে নির্দেশ দেন, ‘’১০ দিনের মধ্যে অ্যাফিডেফিট করে কেন্দ্র ও রাজ্য কর্মীরা কত শতাংশ ডিএ পাচ্ছেন তা জানাতে।’’ শুনানি পর্বে মাননীয় বিচারপতি দেবাশীষ করগুপ্ত ও শেখরববি শরাফের ডিভিসন বেঞ্চও পূর্বতন বেঞ্চের মতো হলফনামা দিয়ে ডিএ’র কেন্দ্র-রাজ্য ফারাক সংক্রান্ত তথ্য আদালতে জানাতে নির্দেশ দেয়। চাপে পড়ে সরকার ১৯ জুন, ২০১৮ সালে ১০% ইন্টারিম রিলিফ তুলে দিয়ে (০১.০১.২০১৯ থেকে কার্যকর) অতিরিক্ত ২৫% ডিএ দিতে বাধ্য হয়। একথা অস্বীকার করা যাবে না যে রাজ্য সরকার সদিচ্ছা থেকে নয়, স্রেফ আদালতের চাপে এই অতিরিক্ত ৪০% (১৫%+২৫%) ডিএ দিতে বাধ্য হন। আবার জানুয়ারি ২০২৪ এবং এপ্রিল ২০২৪ সালে যে পরপর দু’বার অতিরিক্ত ৪% করে ৮% ডিএ দিল রাজ্য সরকার তার পিছনেও কারণ আছে। রাজ্য যে কর্মীদের সাধ্যমত ডিএ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু রেখেছে সুপ্রিম কোটেরর মাননীয় বিচারপতিদের কাছে তা প্রমাণের ‘দায়’থেকেই এই কাজ করেছে। কলকাতা হাইকোর্ট কর্মীপক্ষের অনুকূলে দুটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে — (১) D.A is a legally enforceable right of the employees ৩১ আগস্ট, ২০১৮ এবং (২) D.A is a legally enforceable fundamental right of the employees (২০মে, ২০২২)। বর্তমানে মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কর্মরত রাজ্য কর্মীদের সর্বভারতীয় গড় পণ্যমূল্য সূচকের নিরিখে ডিএ দেয়। ষষ্ঠ রাজ্য বেতন কমিশন গঠিত হয়েছিল সর্বভারতীয় গড় পণ্যমূল্য সূচকের নিরিখে বেতন ও ভাতা সংশোধনের জন্য। তাই এই সূচককে সরকার মান্যতা দিয়ে বসে আছে। অন্যদিকে ৩১ আগস্ট, ২০১৮ রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে কোনও আপীল করেনি, উলটে এই রায়ের ছোটখাট সংশোধন চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে রিভিউ পিটিশনের মধ্য দিয়ে ৩১ আগস্ট ২০১৮ সালের রায়কে মান্যতা (Legality) দিয়ে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও একই পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। তাই আমরা ১০০% নিশ্চয়তার, সঙ্গে বলতে পারি, ‘D.A is a legally enforceable right of the employees’— কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ের কোন পরিবর্তনের সুযোগ ও সম্ভাবনা নেই। রাজ্য সরকার ২০মে, ২০২২ কলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি দাখিল করেছে, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার মামলাকারী, অর্থাৎ রাজ্য সরকারকে প্রমাণ করতে হবে যে কলকাতা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট রায় ‘ভুল’। ২০ মে, ২০২২ সালের রায় যেহেতু শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন, তাই সে সম্পর্কে কোনও মন্তব্য না করাই উচিত। ২০মে, ২০২২ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিসন বেঞ্চ যে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন, সেই রায়ের আইনগ্রাহ্যতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ না থাকলেও সমস্যা মামলার দীর্ঘসূত্রতা। ২০১৬ সাল থেকে মামলা চলছে। আগামী ৭জানুয়ারি, ২০২৫ সুপ্রিম কোর্টে মামলার ১৪তম তারিখ, যে বছরে মামলা দশম বর্ষে পড়ল। অতিক্রান্ত ৯ বছরে অনেক কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সাথি প্রয়াত হয়েছেন। কর্মরত কর্মীরা তবু বছরে ৩% ইনক্রিমেন্ট পান। কিন্তু অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন বাড়ার একমাত্র ক্ষেত্র ডিআর বৃদ্ধি। স্বল্প পেনশনে অগ্নিমূল্যের বাজারে পেনশনার্সদের অবস্থা যথেষ্ট করুণ। সুপ্রিম কোর্ট কবে মামলা শুনবে তা অজানা। মামলা আরও দীর্ঘায়িত হলে আর্থিক কারণেই মামলা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া কার্যত অসম্ভব। সুপ্রিম কোর্ট বারবার বলেছেন ‘‘Justice delayed, Justice denied.’’ এবং একথা সত্য ২০২২ থেকে সুপ্রিম কোর্টে মামলার তারিখ-পে-তারিখ’এর নির্দেশ ও দীর্ঘসূত্রতা রাজ্য সরকারের হাসি চওড়া করেছে। একদিকে চূড়ান্ত ফ্যাসিস্ত কর্মী বিরোধী সরকার গণতান্ত্রিক নিয়মে সমস্ত ধরনের দাবিপূরণের আন্দোলনকে উপেক্ষা করছেন, সরকার ও কর্মীসংগঠনের আলাপ-আলোচনার দরজা দীর্ঘ ১২বছর ধরে বন্ধ। কর্মী সংগঠনের ছদ্মবেশে শাসক দলের গণসংগঠন এবং শীর্ষ আমলাদের একাংশের যুগল মিলনে পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনে ভয়ঙ্কর থ্রেট কালচার, অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের দীর্ঘসূত্রতা—  সব মিলিয়ে প্রশাসনকে অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে না তো? 
 

Comments :0

Login to leave a comment