অনিন্দিতা দত্ত -শিলিগুড়ি
পাহাড় ও সমতলে লাগাতার ভারি বৃষ্টিতে তিস্তা নদী ফুঁসছে। নর্থ সিকিম ও কালিম্পঙে অবিরাম বর্ষণে তিস্তানদীতে প্রবল জলস্ফীতি ঘটেছে। তিস্তায় লাল সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। কালিম্পঙ ও দার্জিলিঙের সংযোগকারী তিস্তা বাজার রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আগামী কয়েকদিন ওই রাস্তায় সমস্ত ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কালিম্পঙ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বৃষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ক্রমশই উদ্বেগ আরো বাড়বে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে জেলা প্রশাসনের তরফে। নর্থ সিকিমের মঙ্গন জেলাতে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে সকাল থেকে। ফলে তিস্তা আরো ভয়ঙ্করী রূপ নিয়েছে। অন্যদিকে তিস্তানদী খরস্রোতা হয়ে ওঠায় তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের রাতের ঘুম উড়ে গেছে। গত জুন মাসের পর আবার উৎসবের আগে আশ্রয়হীন হবার দুশ্চিন্তা তাড়া করে বেড়াচ্ছে। একেবারে বাংলাদেশ বর্ডার এলাকা পর্যন্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তিস্তার দোমোহনী থেকে একেবারে মেখলিগঞ্জ তিস্তা নদীতে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জানা গেছে, উত্তর সিকিমের রাংরাংয়ে প্রবল বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছে ঝুলন্ত সেতু। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে এলাকায়।
দুদিনের একটানা প্রবল বর্ষণে সিকিম যাওয়ার ১০ নং জাতীয় সড়কের একাধিক যায়গায় ধস নামে।
অবিরাম বৃষ্টিতে ধস প্রবন হয়ে উঠেছে গোটা পার্বত্য এলাকা। প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়েছে পাহাড়বাসী। পাহাড়ের একাধিক জায়গায় ধসের কারণে ফের বাংলাসিকিম লাইফ লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেবকের কাছে জাতীয় সড়কের একাংশ ধসে গেছে। ধস নেমেছে আন্ধেরিঝোরাতে। বিরিকধারা, সেলফিদারা, শ্বেতীঝোরা, মেল্লি, ২৮মাইল এলাকাতে আগেই ধস নেমে রাস্তা বন্ধ ছিলো। কিন্তু বৃষ্টির পরিমান বাড়ায় ফের বড় আকারের ধস নামার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দার্জিলিঙের রিম্বিক—লোধামার সাথে ধোত্রের যোগাযোগা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিজনবাড়ির সাথে দার্জিলিঙের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে রয়েছে। মিরিকে ধসের মুখে থারবুতে ভেঙে পড়েছে বাড়ি। বাসিন্দাদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কালিম্পঙের ইয়াঙমাখুঙ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ধসের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুতের ট্রান্সমিটার। ফলে কালিম্পঙ জেলার একাধিক গ্রাম এলাকা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টি না থামলে আগামী কয়েকদিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন থাকবে বলেই আশঙ্কা স্থানীয় বিদ্যুৎ দপ্তরের। প্রবল বৃষ্টিতে ঘুম সুখিয়াপোখরি রাজ্য সড়কের একাংশে ধস নেমেছে। ঝুঁকিপূর্ন যাতায়াত চলছে।
উৎসবের আগে ধস বিধ্বস্ত হয়ে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাহাড়ের পর্যটন শিল্প ও ব্যবসায় বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশ বিদেশের প্রচুর পর্যটকের ঢল নামে নামে দার্জিলিঙ পাহাড়, সিকিমে। ধস সরিয়ে রাস্তা মেরামতির পরে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক কবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে তা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, পর্যটন সংস্থা, পর্যটন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সকলেই চিন্তিত। গত জুন মাস থেকে চলতি সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলা—সিকিম লাইফ লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বেশীর ভাগ সময়ই বৃষ্টি ও ধসের কারণে বন্ধ ছিলো। মাঝে কয়েকদিন জাতীয় সড়ক খুলে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হলেও বৃষ্টি ও ধসের কারণে দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে কালিম্পঙ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি ঘটছে। একদিকে বৃষ্টি আর অন্যদিকে ধস, তার ওপর বাংলা—সিকিম লাইফ লাইন বন্ধ হওয়ায় উৎসবের সময়ে পাহাড়মুখো হতে ভয় পাচ্ছেন পর্যটকেরা। স্বাভাবিকভাবেই পর্যটকের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
পাহাড় ও সমতলে টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে ফুলেফেঁপে উঠেছে ফুলবাড়ির মহানন্দা ব্যারেজ। খুলে দেওয়া হয়েছে মহানন্দা ব্যারেজের বেশ কয়েকটি লক গেট। লক গেট দিয়ে হু হু করে জল বেরিয়ে যাচ্ছে। সমতলের মহানন্দা সহ বিভিন্ন নদীতে জলস্ফীতি ঘটেছে। নাগাড়ে বৃষ্টিতে শিলিগুড়ি মহকুমার বাগডোগরা এশিয়ান হাইওয়ে জল থৈ থৈ অবস্থা। বাগডোগরা বিহার মোড়ে রাস্তার ওপর জল দাঁড়িয়ে পড়েছে। শিলিগুড়ি শহর ও সংলগ্ন এলাকাতেও রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। শহরের একাধিক ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়েছে। এদিন বৃষ্টি বিরতি ঘটেনি।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে দার্জিলিঙ পাহাড় সহ উত্তরের জেলাগুলিতে। শনিবারের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার সম্ভবনা রয়েছে।
Comments :0