ISRAEL PALESTINE CONFLICT

‘হামাসের ১জন পিছু হত্যা মাত্র ২ নাগরিককে’, গণহত্যার সাফাই ইজরায়েলের

আন্তর্জাতিক

israel palestine conflict hamas usa israel iran india bengali news

হত্যা করা হচ্ছে নিরীহ মানুষকে। বিশ্বময় এই সমালোচনার মুখে পড়ছে ইজরায়েল। তার সাফাই হিসেবে মঙ্গলবার ইজরায়েল বলল, হামাসের প্রতি ১ জনের অনুপাতে ‘মাত্র’ ২ জন করে সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে হামলায়। 

ইজরায়েলের এমন বক্তব্যে গণহত্যাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে উঠেছে অভিযোগ। ইজরায়েল যদিও বিশ্ব জনমতের তোয়াক্কা না করেই হানাদারি চালাচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘ এদিনই বলেছে, ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে গাজা।

৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে বেনজির বোমা বর্ষণ করে চলেছে ইজরায়েল। গাজা’র স্বাস্থ্যমন্ত্রক, আল-জাজিরা সহ অন্যান্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ২ মাস ধরে চলা সংঘর্ষে গাজায় ১৬ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। 

মঙ্গলবার গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র চলছে বোমাবর্ষণ। তার মধ্যেই ইজরায়েল বলেছে, প্রতি ১জন হামাসের অনুপাতে মাত্র ২জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। 

গাজায় অবিরাম বোমা বর্ষণকে ধিক্কার জানাচ্ছে গোটা বিশ্ব। গাজা শহর ছাড়িয়ে দক্ষিণ গাজাতেও ছড়িয়েছে সংঘর্ষ। ভূখণ্ডের ২০ লক্ষ মানুষের প্রায় ৮০ শতাংশ আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে। গোটা গাজার ৬০ শতাংশ বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ বলছে, গাজার এক ইঞ্চি জমিও নিরাপদ নয়। কিন্তু তারপরেও ইজরায়েলের তরফে সরকারি ভাবে বলা হয়েছে, ‘‘গাজায় অসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানীর সংখ্যা তেমন বেশি নয়।’’

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএন’র তরফে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে ইজরায়েলী বাহিনীর মুখপাত্র জোনাথান কনরিকাস বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক’’। 

কনরিকাসের দাবি, প্রতি ১জন হামাসের অনুপাতে মাত্র ২জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন ইজরায়েলী হামলায়। 

তাঁর যুক্তি, গাজায় শহরে ঢুকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে ইজরায়েলী বাহিনীকে। সামরিক পরিভাষায় একে ‘আর্বান কম্ব্যাট’ বলা হয়। হামাস সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। সেই অবস্থাতেও প্রতি ১ জন হামাসের অনুপাতে মাত্র ২জন সাধারণ মানুষ ‘কোল্যাটেরাল ড্যামেজ’ হিসেবে প্রাণ হারিয়েছেন। এই পরিস্থিতি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক।’’

তাঁর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাবে ইজরায়েল। ইজরায়েলী সেনার অপর একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া ১৬ হাজারের কিছু বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর সঠিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সেনাকর্তার দাবি, ১৬ হাজারের মধ্যে হামাসের ৫-৬ হাজার লোক রয়েছে। তাঁরও দাবি, অনুপাতের হিসেবে সাধারণ মানুষের ‘তেমন একটা’ প্রাণহানি ঘটেনি। 

যদিও আল-জাজিরা এবং গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূখণ্ডে ইজরায়েলী হামলায় মৃতের ৪০ শতাংশ শিশু। একটা বড় অংশ মহিলা। অপরদিকে ইজরায়েলের তরফে হামাসের প্রকৃত সংজ্ঞা জানানো হয়নি। রেডক্রস, রেড ক্রিসেন্ট সহ একাধিক সংগঠন বলছে, গাজার শাসন ক্ষমতায় রয়েছে হামাস। প্রশাসন চালায় তারাই। হামাস সরকারের অধীনে স্বাস্থ্য, পানীয় জল সরবরাহ সহ বিভিন্ন বিভাগে সাধারণ প্যালেস্তিনীয়রা চাকরি করেন। সেই কর্মচারীদেরও কী হামাস হিসেবে চিহ্নিত করছে ইজরায়েল? এর উত্তর স্পষ্ট নয়। 

অপরদিকে আল-জাজিরা জানাচ্ছে, গাজার আল-শিফা হাসপাতালের পর কামাল আদওয়ান হাসপাতালের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ইজরায়েল। মঙ্গলবার হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় বিমান হানা চালানো হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। 

সোমবার গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুনীর আল-বুর্শ জানিয়েছিলেন, ‘‘হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসা পরিকাঠামো ধ্বংস করছে ইজরায়েলী সেনা। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স দেখলেই গুলি করা হচ্ছে। চাইলেও হাসপাতালগুলি আহতদের চিকিৎসা করতে পারছে না।’’

আল-জাজিরা জানাচ্ছে, গাজার ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ৯টি এখনও সচল। তারমধ্যে কামাল আদওয়ান অন্যতম। কিন্তু সেটি কতদিন সচল থাকবে উঠে গিয়েছে সেই প্রশ্ন। গাজায় ৪০ হাজার মানুষ আহত। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মাত্র ৪০০ জনকে রাফা সীমান্ত পেরিয়ে মিশরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে চিকিৎসার জন্য। বাকিরা গাজার ভিতরেই বিনা চিকিৎসায় ছটফট করছেন।  

Comments :0

Login to leave a comment