DA Budget

মুখ্যমন্ত্রীর চিরকূটে ৩% ডিএ

রাজ্য

 আন্দোলনের আঁচ টের পেতেই চিরকূটে ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। 
এতদিন সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বকেয়া নেই বলে জানিয়ে আসছিলেন খোদ মমতা ব্যানার্জি। বুধবার বিধানসভায় বাজেট পেশের সময়ই নাটকীয়ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে চিরকূট নিয়ে ডিএ ঘোষণা করতে হয়েছে অর্থ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে। যদিও বাজেটে এ সংক্রান্ত কোনও লিখিত বক্তব্য নেই। 
কিন্তু সরকার ডিএ ঘোষণা করে ক্ষোভের আঁচে প্রলেপ দিতে চেয়েছিল। ফল হয়েছে ঠিক তার উলটো। এদিন ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণার সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ জানাতে শুরু করেন আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীরা। শহীদ মিনারে অবস্থান আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। একইভাবে ১৭ ফেব্রুয়ারি বকেয়া ডিএ’র দাবিতে মিছিল হচ্ছে। ডিএ’র ঘোষণায় এদিন বিধানসভাতে কর্তব্যরত পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যেও সরকারের ঘোষণা নিয়ে শুরু হয়ে যায় ঠাট্টা, তামাশা। রাজ্যের এক মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীকে বিধানসভা চত্বরেই সহকর্মীর উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘‘খুব সমস্যা হয়ে গেল। ডিএ পাওয়ার পর ইনকাম ট্যাক্সের আওতায় চলে এলাম।’’
৩ শতাংশ ডিএ খবরে কর্মচারীরা খুশি হননি। যৎসামান্য প্রাপ্তি তো আছেই। কিন্তু তার থেকেও কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ সরকারের ডিএ ঘোষণার পদ্ধতি নিয়ে। এদিন অধিবেশনে বাজেট বিবৃতি পড়া প্রায় শেষ পর্যায়ে এনে ফেলেছিলেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ঠিক তখনই নিজের আসনে বসে কাগজে কিছু একটা লিখতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। তারপর সেই চিরকূট মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে নেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সেই চিরকূট তিনি বাড়িয়ে দেন বাজেট পাঠরতা অর্থমন্ত্রীর দিকে। তখনই চিরকূট হাতে নিয়ে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেন। 
এরাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ষষ্ঠ বেতন কমিশনের হিসাবে এখন ডিএ বকেয়ার পরিমাণ ৩৫শতাংশ। কেন্দ্রের সঙ্গে ডিএ’র ফারাক কমে দাঁড়ালো ৩২শতাংশে। গত ২০২২সালে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ডিএ খাতে এক টাকাও বরাদ্দ করেনি মমতা ব্যানার্জির সরকার। এই মুহূর্তে মুদ্রাস্ফীতির যা হার তাতে খুব শীঘ্রই কেন্দ্রীয় সরকার ৪ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করতে চলেছে। ফলে রাজ্যের ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা হলেও ফারাক শেষ পর্যন্ত দাঁড়াবে ৩৬ শতাংশ। 
শহীদ মিনারে টানা অবস্থান-অনশন শুরু করেছেন সরকারি কর্মচারীদের মঞ্চ। ডিএ’র দাবি নিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি এরাজ্যের কর্মচারীদের বৃহত্তর সমাবেশ হতে চলেছে কলকাতার বুকে। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরও ১৭ ফেব্রুয়ারি ডিএ’র দাবিতে বিধানসভা অভিযানে অনড় থেকেছে ১২ই জুলাই কমিটি। রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্তচৌধুরি জানান,‘‘ মুদ্রাস্ফীতিজনিত কারণে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন করে ৪ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করতে চলেছে। সেখানে ৩ শতাংশ ডিএ দিয়ে কি মুখ্যমন্ত্রী ভিক্ষা দিতে চাইছেন? এই ডিএ প্রাপ্তিতে আমাদের সন্তুষ্ট হওয়ার কোনও কারণ নেই। বকেয়া ডিএ’র দাবিতে আমরা ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনে নামছি।’’ 
এদিন রাজ্যের বাজেটে কার্যত কোনও ডিএ দেওয়ার সংস্থান রাখা হয়নি। সরকারি কর্মচারীদের বেতন খাতে ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে সরকার ৬৪ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব রেখেছে। গত বছর যা ছিল ৬২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। গত বছরের থেকে ২ হাজার কোটি টাকা বেশি। এমনিতেই ফি বছর জুলাই মাসে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ৩ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট হয়ে থাকে। ফলে বাড়তি টাকা ওই খাতের জন্য রাখা হয়েছে। এখন চিরকূটে ডিএ ঘোষণা করে টাকার সংস্থান করবে রাজ্য সরকার।
সরকারি কর্মচারীরা ডিএ ঘোষণার এই পদ্ধতি নিয়েই ক্ষোভ গোপন করেননি। শহীদ মিনার ময়দানে অবস্থান মঞ্চ থেকে সংগ্রামী যৌথ কমিটির অনশনরত আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা কোনও বাড়তি পাওনা চাইনি। আমাদের যা ন্যায্য পাওনা আমরা বুঝে নিতে চাই। তার থেকে ১ শতাংশ বেশি নয়, কমও নয়। তার জন্য যে লড়াই আমরা লড়ছি, তা অব্যাহত থাকবে। এরাজ্যের কর্মচারীরা একজোট হয়ে তাদের হকের দাবি বুঝে নেবে।’’ 
অতীতে সরকার যৎসামান্য ডিএ ঘোষণা করার পর কর্মচারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও খুশির রেশ ধরা পড়ত। কিন্তু দীর্ঘ দশক ধরে বঞ্চিত হয়ে থাকার পর পরিস্থিতির বদল ঘটে গেছে। সরকার যে ডিএ দেওয়ার নাম করে কর্মচারীদের কাছে ভিক্ষা ছুঁড়ে দিতে চাইছে, সেটাই মনে করছেন কর্মচারীরা। বিশেষ করে চিরকূটের প্রসঙ্গ জানার পর ক্ষুব্ধ কর্মচারীরা বলছেন,‘‘ সরকারটা তো চিরকূটেই চলে। চিরকূটে টাকা নিয়ে মন্ত্রী জেলে যায়। চিরকূট দিয়ে ভুয়ো নিয়োগ হয়। চিরকূটে মন্ত্রী বরখাস্ত হয়। চিরকূট দিয়ে সেভাবেই ডিএ ঘোষণা করে। সেই ধারাবাহিকতা চলছে।’’
রাজ্যের কর্মচারী আন্দোলন মনে করছে, আকস্মিক ডিএ ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকার আন্দোলন প্রত্যাহার করার চাপ তৈরি করতে চাইল। একইসঙ্গে আগামী ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার চূড়ান্ত শুনানির আগে ৩ শতাংশ ঘোষণা করে কোর্টের সুনজরে পড়তে চাইছে। সরকারের ডিএ নিয়ে মামলকারী কর্মচারী সংগঠন কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সভাপতি শ্যামল মিত্র জানিয়েছেন,‘‘ বাজেট বইতে ছিল না। চিরকূট হাতে নিয়ে অর্থমন্ত্রী ডিএ ঘোষণা করলেন। এটা কি জমিদারি প্রথায় সরকার চলছে ? ৩৯ শতাংশ ডিএ বকেয়া। সেখানে ৩ শতাংশ দিয়ে কর্মচারীদের অপমান করা হয়েছে।’’ ১২ই জুলাই কমিটির আহ্বায়ক সুমিত ভট্টাচার্য এই ঘোষণায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

Comments :0

Login to leave a comment