Post editorial

জিএম ফসল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং কৃষক স্বার্থে বামপন্থীদের ভূমিকা

উত্তর সম্পাদকীয়​

রানা মিত্র

জিএম ফসল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্ক নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্ট গত ২৩ জুলাই, ২০২৪ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। যদিও সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ জিএম ফসল নিয়ে সম্পূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি (মূলত জিএম সর্ষের ক্ষেত্রে), তবুও এই রায়ে বলা হয়েছে, এই গোটা বিষয়টি এখন জনগণের বৃহত্তর মঞ্চে বিতর্কের জন্য উপস্থিত করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের পরিবেশ, অরণ্য, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত মন্ত্রককে স্পষ্টভাবে বলেছে জিএম ফসল নিয়ে আগামী চার মাসের মধ্যে এই ব্যাপারে একটি সুসংহত নীতি প্রণয়ন করতে হবে সংশ্লিষ্ট সমস্ত অংশের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে। যদিও গোটা বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের একটি অন্য বেঞ্চের কাছে পাঠানো হয়েছে, যা তৈরির দায়িত্ব স্বভাবতই প্রধান বিচারপতির কাছেই দেওয়া হয়েছে। এই বিতর্কের পটভূমিতেই ২০১২ সালে নির্দিষ্টভাবে জিএম বেগুন ও সাধারণভাবে জিএম ফসলের প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাসুদেব আচারিয়ার সভাপতিত্বে গঠিত কৃষিক্ষেত্রের যৌথ সংসদীয় কমিটির অতুলনীয় ভূমিকা আবার আলোচনার কেন্দ্রে এসে পড়েছে।

বাসুদেব আচারিয়ার নেতৃত্বাধীন কৃষি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির ভূমিকা
২০১২ সালে সংসদের কৃষি বিষয়ক যৌথ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি হিসাবে ভারতের গোটা কৃষি ব্যবস্থাকে এক সমূহ বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে কমরেড বাসুদেব আচারিয়া নজিরবিহীন উদ্যোগ ও ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিষয়টি ছিল, ভারতে কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে চলা একটি বিতর্ক। বিতর্কটি হলো, কৃষিক্ষেত্রে জিনগতভাবে পরিবর্তিত জৈবিক (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম, জিএমও) ফসলের প্রয়োগ। এই ধরনের জিনগতভাবে পরিবর্তিত জৈবিক উপাদানের প্রয়োগ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে এলেও, পরিবেশ, সমাজ, সর্বোপরি জীবজগতে প্রয়োগের ক্ষেত্রে তার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রভাব আজ এক বহু আলোচিত বিষয়। কৃষিক্ষেত্রে এর প্রয়োগ নানা সুনির্দিষ্ট রক্ষাকবজের সাহায্য ব্যতিরেকে করলে এর পরিণাম ভয়ংকর হতে বাধ্য। যেহেতু, এই জিনগতভাবে পরিবর্তিত ফসলের পেটেন্টের মালিকানা অনেক ক্ষেত্রেই বহুজাতিক কোম্পানির করায়ত্ত, তাই এই ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই জনস্বার্থের বদলে অতি মুনাফার বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। ভারতে ১৯৯১ সালের পর থেকে, নয়া উদারবাদী নীতি প্রয়োগের ফলস্বরূপ জীবন ও অর্থনীতির সবক্ষেত্রেই বহুজাতিক কোম্পানি ও ফিনান্স পুঁজির দাপট বেড়েছে। কৃষি হলো একটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেখানে এই ফিনান্স পুঁজির দাপটের বিরুদ্ধে আমাদের দেশের শ্রমিক, কৃষক, বাম-গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল শক্তি দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। এই আন্দোলনের একনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে কমরেড বাসুদেব আচারিয়া, কৃষি ক্ষেত্রের সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসাবে, তাঁর সমস্ত সাংগঠনিক, বৌদ্ধিক শক্তিকে প্রয়োগ করেছিলেন মানুষের এবং ভারতের কৃষির স্বার্থে।   
২০১২ সালের ৯ আগস্ট ভারতের জিএম ফসলের প্রয়োগ নিয়ে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি বিষয়ক যৌথ স্ট্যান্ডিং কমিটির সর্বসম্মত প্রতিবেদনটি সংসদের কাছে জমা পড়ে, যা ৩৭তম প্রতিবেদন হিসাবে পরিচিত। ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই প্রতিবেদনটি একটি মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ করতে কমিটি দলমত নির্বিশেষে বহু রাজ্য সরকার, কৃষক সংগঠন, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, প্রখ্যাত সাংবাদিক, সরকারি আমলা, রাজনীতিক সহ অসংখ্য মানুষের সাথে কথা বলে। ২০১০ সালের ৪ মার্চ থেকে ২০১২ সালের ৩ আগস্ট পর্যন্ত এই কমিটি মোট ২৭টি মিটিংয়ে ৬০ ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করে সংশ্লিষ্ট মহলের মতামত সংগ্রহ করে। কমিটির কাছে ১৫ হাজার পাতার মোট ৪৬৭টি প্রতিবেদন জমা পড়ে, যা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এই কমিটি খতিয়ে দেখে। এর মধ্যে ছিলেন ৫০ জন বিশেষজ্ঞ, যাঁরা জিএম ফসলের উপর ৮৬৩ পাতার প্রতিবেদন জমা দেন। 
এই গোটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করার পর কমিটি কতগুলো সুদূরপ্রসারী সুপারিশ করে। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হলো, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আইনসিদ্ধ জৈবপ্রযুক্তি নিয়ন্ত্রক সংস্থা (স্ট্যাটুটরি বায়োটেকনোলজি রেগুলেটর)’র বদলে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আইনসিদ্ধ জৈব-নিরাপত্তা সংস্থা (স্ট্যাটুটরি বায়োসেফটি রেগুলেটর) গঠন। কমিটি আরও বলে, সেই সময় যে নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাগুচ্ছ জৈব-প্রযুক্তি বিষয়ে বিরাজমান ছিল, তা একেবারেই গণতান্ত্রিক, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয়। কমিটি মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে আত্মহননকারী কৃষক পরিবার, বিটি কার্পাস চাষ করা কৃষক ও অন্যান্য বহু বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, যেমন- পি সাইনাথ, জয়দীপ হার্দিকার এবং অনেক কৃষক নেতাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে। 
কমিটি খুঁজে বের করে যে, বিটি কার্পাস, বিটি বেগুন চাষের অনুমতি দেওয়ার আগে এই ব্যাপারে যতগুলি পরীক্ষা হওয়ার দরকার ছিল, তা বহুজাতিক সংস্থার সাথে যোগসাজশে সরকার এড়িয়ে যায়। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট বহুজাতিক কোম্পানি নিজেই করে এগুলি নিরাপদ বলে শংসাপত্র দিয়ে দেয়। এক শ্রেণির সরকারি আধিকারিক একেই এরপর নিরাপদ বলে কৃষকদের মধ্যে প্রচার করে। যার ফল হয় মারাত্মক। কমিটি অকাট্য তথ্যপ্রমাণ সহ তাদের প্রতিবেদনে দেখায় যে ব্যবহৃত বিটি কার্পাস আদতে চাষের ক্ষেত্রে পোকামাকড়ের আক্রমণকে ত্বরান্বিত করছে। এর কারণ, এই পোকামাকড় ইতিমধ্যেই বিটি কার্পাসের বিশেষ জিনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের নিয়মেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়ে গেছে। ফলত, যত বেশি বিটি’র চাষ বেড়েছে, তত বেশি পোকামাকড়ের আক্রমণে ফসল নষ্ট হয়ে, আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত কৃষক বাধ্য হয়ে নির্মম আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। 
২০০৭ সালের অন্ধ্র প্রদেশের সুনির্দিষ্ট উদাহরণ তুলে এনে কমিটি দেখায় যে, খেতে এই বিটি ফসল খেয়ে বিষক্রিয়ায় বহু গবাদি পশুর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। অর্থাৎ, জীবজগৎ , প্রাণীদের সার্বিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার দিকটি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো প্রায় সম্পূর্ণ অবহেলা করেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোও এই বিষয়ে চোখ বন্ধ করেই ছিল। 
প্রসঙ্গত, বাসুদেব আচারিয়া কমিটির এই সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করেই এরপর তৎকালীন ইউপিএ-২ সরকারের পরিবেশমন্ত্রী, জয়রাম রমেশ বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক চাষের উপর সার্বিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। দিল্লিতে ব্যক্তিগত আলোচনায়ও কমরেড বাসুদেব আচারিয়া বলতেন, আমাদের দেশে ২০০০ রকমের বেগুন চাষ হয়। এই জীববৈচিত্রকে রক্ষা করতে হবে। মনসান্টোর মতো বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফার যূপকাষ্ঠে একে বলি দিতে দেওয়া যাবে না। এই সময়োপযোগী অসাধারণ উদ্যোগের ফলে ভারতীয় কৃষি ও কৃষকেরা এক মারাত্মক বিপদ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেয়েছেন। 
এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, ভারতীয় কৃষিকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে এই কমিটি, বিশেষ করে তার সভাপতি, বাসুদেব আচারিয়া, একজন প্রকৃত বিজ্ঞানীর অনুসন্ধিৎসা, জ্ঞান, বৈজ্ঞানিক সত্যের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ মনন নিয়ে কাজ করেছিলেন। বাসুদেব আচারিয়ার বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বিষয়ে জ্ঞান দেখে প্রখ্যাত কৃষি ও জৈবপ্রযুক্তি বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এই ঘটনা তাঁরা বিভিন্নভাবে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। ভারতে জিএম ফসলের বল্গাহীন, বাণিজ্যিক প্রয়োগের বিপদ সম্বন্ধে আলোচনা করতে গিয়ে এই স্ট্যান্ডিং কমিটি, রাষ্ট্রসঙ্ঘের কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে গঠিত সংস্থার একটি সুবিখ্যাত প্রতিবেদন, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অব এগ্রিকালচার নলেজ, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফর ডেভেলপমেন্ট (আইএএসএসটিডি) খুঁটিয়ে পর্যালোচনা করে। কমিটি জিএম ফসলের নিয়ন্ত্রণহীন প্রয়োগের কুফল সম্পর্কে অকাট্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করে। 
আজও যখন বহুজাতিক সংস্থা নিয়ন্ত্রিত বিটি কার্পাসের (বিটি কটন) ভয়াবহ প্রভাবে মহারাষ্ট্রসহ দেশের বিভিন্ন অংশে কৃষকেরা নির্মম আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে, তখন বাসুদেব আচারিয়ার মতো সাংসদদের অভাব ও লড়াই তীব্রভাবেই অনুভূত হচ্ছে। এই বিষয়ে তিনি নিঃসন্দেহে তাঁর মার্কসীয় প্রজ্ঞার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়েছিলেন, এ কথা জোরের সাথে বলা যায়। তাই আজ নতুনভাবে গোটা বিশ্বে পূর্বে অনাবিষ্কৃত, কিন্তু বর্তমানে অনেকাংশে প্রকাশিত, মার্কসের পরিবেশ বিষয়ক উপলব্ধি ও বিশ্লেষণকে মাথায় রেখে দু’চার কথা আলোচনা করা যেতে পারে। 
পরিবেশ সম্পর্কে মার্কস-এর সুদূরপ্রসারী উপলব্ধি 
পুঁজিবাদী সমাজে নিয়ন্ত্রণহীন উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পরিবেশের উপাদানগুলোকে মাত্রাতিরিক্ত শোষণ ও এর দ্বারা উদ্ভূত সমস্যা সম্বন্ধে মার্কস অনেকটাই নিস্পৃহ ছিলেন – তাই মার্কসবাদীরা, সমাজতান্ত্রিক সমাজেও, উৎপাদন বাড়ানোর স্বার্থে, পরিবেশের সমস্যা নিয়ে অনেকটাই উদাসীন - এমন অভিযোগ মার্কস-এর সমালোচকরা কিছুদিন আগেও জোরালোভাবে করতেন। এদের মধ্যে ছিলেন তথাকথিত পরিবেশবাদীরা, ইউরোপে মূলত যাদের ‘গ্রীন’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। যদিও এই সম্পর্কে অনেকের ধারণা সাম্প্রতিক অতীতে দীর্ঘ ও সুনির্দিষ্ট গবেষণায় অনেকাংশে ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে। (এই বিষয়ে উৎসাহী পাঠকেরা, ১ মে, ২০২৪ ‘লিফলেট’ পত্রিকা ও তার পরে ৩ মে ২০২৪ মান্থলি রিভিউ অনলাইন পত্রিকায় লেখকের বিস্তারিত প্রবন্ধ, ‘‘ইকোলজিক্যাল ক্রাইসিস অ্যান্ড দি রোল অব ওয়ার্কিং ক্লাস’’ পড়ে দেখতে পারেন এই লিঙ্কে গিয়ে : https://mronline.org/guest-author/the-leaflet/)।

আসলে, একথা অনেকদিন অজানাই থেকে গিয়েছিল যে, মার্কস তাঁর অভিন্নহৃদয় বন্ধু, এঙ্গেলস-এর প্রভাবে, জীবনের শেষ দিকের অনেকটা সময়ই বুনিয়াদি বিজ্ঞান চর্চায় অতিবাহিত করেছিলেন। এই বিষয়ে তিনি বিস্তারিত নোটও রেখে যান। মার্কস-এর ইচ্ছা ছিল ‘পুঁজি’ গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে তিনি পরিবেশের উপর পুঁজিবাদী প্রভাব নিয়ে সম্যক আলোচনা করবেন। কিন্তু এটা দুঃখজনক যে মার্কস তাঁর জীবদ্দশায় শুধুমাত্র ‘পুঁজি’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডটির প্রকাশই দেখে যেতে পেরেছিলেন। কিন্তু এখন, এই নোটগুলিসহ মার্কস-এঙ্গেলসর সমস্ত রচনা আমস্টারডামের একটি সুবিখ্যাত মার্কসীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রকাশ করেছে আপাতত ৬৫ খণ্ডে (সর্বমোট ১১৪ খণ্ড প্রকাশিত হবে বলে জানা যাচ্ছে)। এতে পাওয়া যাচ্ছে, মার্কস স্পষ্ট মনে করতেন, পুঁজিবাদ তার অতি মুনাফার তাড়নায়, শুধু শ্রমিককেই উদ্বৃত্ত মূল্যের মাধ্যমে শোষণ করে না, সে পরিবেশের উপাদানগুলোকেও মাত্রাতিরিক্ত শোষণ করে পরিবেশকে বিপর্যয়ের কিনারায় ঠেলে নিয়ে যায়। বিশেষ করে, পুঁজিবাদী কৃষি সম্বন্ধে মার্কস মনে করতেন যে এই ব্যবস্থা শেষ বিচারে বিপাকীয় ফাটলের জন্ম দেবে।

আমরা জানি, কোনও জীবের দেহে সংঘটিত সকল রাসায়নিক বিক্রিয়াকে একত্রে বিপাক বলে। বিপাক দুই প্রকার: বিশ্লেষণ বা ক্যাটাবলিক; যা জৈব পদার্থকে ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে। আর হলো, সংশ্লেষণ বা অ্যানাবলিক, যা অসংখ্য ক্ষুদ্র অংশকে সংযুক্ত করে বৃহৎ অংশ গঠন করে। এখন এই বিপাকীয় ফাটলের ফলে, পুঁজিবাদী কৃষি (নয়া উদারবাদী জমানায়, যা আরও মারাত্মক রূপ নিয়ে এখন কর্পোরেট কৃষির চেহারা নিয়েছে), জমির পরিবেশগত উপাদানগুলোকে মুনাফার স্বার্থে অতিরিক্ত শোষণ করে থাকে– এর ফলে জমির প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো চক্রাকারে আর মাটিতে বা পরিবেশে ফিরে না এসে জমিকে বন্ধ্যায় পরিণত করছে অনেকাংশে। পাশাপাশি, কৃষক ও উপভোক্তাদেরও এক আপাত উত্তরণহীন চক্রে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মার্কস একে অভিহিত করেছিলেন, ‘রাউব্বাউ’ (Raubbau) নামে, যার মানে হলো, ‘কৃষিক্ষেত্রের আধুনিক (পড়ুন, পুঁজিবাদী) ডাকাতি’। পুঁজিবাদী সমাজে পরিবেশের উপর মার্কস-এর এই যুগান্তকারী উপলব্ধি আজ আরও স্পষ্ট  প্রতিভাত হচ্ছে জিএম বীজ, ফসল, কৃষির অন্যান্য উপকরণের উপর বহুজাতিক সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণের সার্বিক প্রয়াস থেকে।

এর বিরুদ্ধে লড়ছেন ভারতের কৃষক সমাজ, লড়ছেন ভারতের মেহনতি জনতা।

 

Comments :0

Login to leave a comment