সম্প্রতি নাগাড়ে বৃষ্টি, হড়পাবান ও ধসে জেরবার প্রতিবেশী রাজ্য সিকিম আরো একবার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ভূ-বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা সত্যি প্রমানিত করে সিকিমের এনএইচপিসি তিস্তা স্টেজ ভি পাওয়ার হাউসে বড় ধরনের ধস নামলো। সোমবার রাত থেকে টানা ভারি থেকে অতি ভারী বর্ষনের কারণে মঙ্গলবার সকালে পাহাড়ের গা বেয়ে হুড়মুড়িয়ে ধস নামে সিকিমের সিংটামে তিস্তা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর। ভূমিধসের জেরে ক্ষতি হয়েছে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রেটির। পাশাপাশি বাঁধের একাংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জানা গেছে, পূর্ব সিকিমের সিংটামের দীপু দারার কাছে বালুতারে এনএইচপিসি তিস্তা স্টেজ ভি পাওয়ার হাউজে প্রবল ভূমিধসে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পাহাড়ের বড় একটি অংশ ভেঙে পড়ায় চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায়। পাহাড় সংলগ্ন ন্যাশনাল হাইড্রো ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশনের তিস্তা স্টেজ ভি বাঁধটি ভেঙে গেছে ভূমিধসের কারণে। স্থানীয় বাসিন্দারাই ক্যামেরা বন্দী করেছেন সেই ভূমিধসের দৃশ্য। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্যামেরা বন্দী ভয়ঙ্কর ভূমিধসের দৃশ্যে দেখা গিয়েছে পাহাড়ের গা বেয়ে প্রবল বেগে পাওয়ার হাউসের দিকে ধেয়ে আসছে বড় বড় পাথরের চাই, গাছগাছালি সহ পাহাড়ের টুকরো। সিকিমের সোরেও এলাকায় সম্প্রতি গত ৯ আগস্ট ৪.৪ মাত্রার ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছিলো। সেই ভূমিকম্পের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেই এই প্রবল ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে বলেই অনুমান সংশ্লিষ্ট মহলের। এছাড়াও গত বেশ কয়েক সপ্তাহে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাগোয়া এলাকায় একাধিক ধসও নেমেছে। ক্রমাগত ধস নামার কারণে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আগেই ৫১০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ওই কেন্দ্রের কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। তবে এদিন সকালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রেটির ওপর ভয়ঙ্কর ভূমিধস আঘাত হানার ঘটনায় হতাহতের কোন খবর নেই। বড় ধরনের ভূমিধসে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। আগে থেকেই কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিলো।
সিকিমের এনএইচপিসি তিস্তা স্টেজ ভি পাওয়ার হাউসে ভূমিধস নামার প্রসঙ্গে এনএইচপিসি’র শিলিগুড়ির রিজিওনাল ডিরেক্টর (টিএলডিপি ৫ ও ৬—র অধিকর্তা) এ কে দাস বলেন, ’’ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারন করা সম্ভব হয়নি। তবে ভূমিধসের কারণে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধার কার্য শুরু করা হয়েছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’’
যদিও ভূ-বিশেষজ্ঞদের তরফে আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিলো সিকিম পাহাড়ে লাগাতার ভূমিধসের নামার বিষয়ে। সিকিম পাহাড়ে ভূমিধসের অন্যতম কারণ হিসেবে হাইডেল প্রজেক্টের কথা উল্লেখ করে সম্প্রতি ভূ-বিশেষজ্ঞদের জাতিস্বর ভারতী জানিয়েছিলেন,‘‘তিস্তার জলকে অতি উচ্চতায় সারা বছর ধরে আটকে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বছরের পর বছর জলে ভিজে থেকে পাহাড় নরম হয়ে যাচ্ছে। নির্বিচারে গাছ ছেদন করা হচ্ছে। এসবের ফলশ্রুতিতেই ভূমিধস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ বেড়েই চলেছে সিকিমে।’’
২০২৩ সালে সিকিমের লোনাকে হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ বিস্ফোরণের ঘটনায় দুর্যোগ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমে। সেই দূর্যোগে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলেও ক্ষতির মুখে পড়েছিলো বালুতারে তিস্তার বাঁধটি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত হয়ে রয়েছে সিকিম। ধসের কারণে এক মাসেরও বেশী সময় ধরে বন্ধ থাকা বাংলা সিকিম লাইফ লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে এখনও যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এরই মাঝে আবার সিংটামের ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনায় আতঙ্কিত সিকিমবাসী।
Landslide in Sikkims
ফের বিপর্যয়ের মুখে সিকিম, ক্ষতিগ্রস্ত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখুন ভিডিও
×
Comments :0