গল্প — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
ছুটি-ছুটি
সৌরভ দত্ত
গরমের ছুটি। আমাদের সময়ে সাদা কালো টিভিতে দুরদর্শনে ছুটি ছুটি ছিল অন্যরকম ।নীলকমল,লালকমল দেখতে লাগত বেশ । কথাগুলো বলছিলেন মহানন্দ তার ভাইপো আনন্দকে। তোদের ছুটি তো পড়ছে তো পড়ছেই শেষ আর হচ্ছে না। হ্যাঁ কাকামণি এবারে তো টানা দুমাস ছুটি।খুলবে জুলাইয়ে। সামার প্রোজেক্ট আছে আমাদের। সামার ক্যাম্প।ও তো সেদিন স্যারেরা সবাইকে নদীর ধারে নিয়ে গিয়েছিল।আর খালি ইন্সপেক্টরকে ছবি পাঠাচ্ছিলেন স্যারেরা। সেই তো দেখছি খবরের কাগজে।জানিস আমাদের সময়ে গাবতলায় হাতপাখা নেড়ে পড়াতেন সতীশ বাবু। গরমের ছুটিতে হাতের লেখা ছিল।রাশি রাশি অংকের কাজ ছিল।সুপ্রিম এর রুলটানা দিস্তা খাতা নিয়ে আসত মা।মালাট করে দিত যত্নে। হাতের লেখা না করলে পিটুনি খাওয়ার ভয় ছিল।রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী ছিল সবাই গাছের ফুল তুলে নিয়ে যেতাম। স্কুল শেষে চু কিত ছিল স্কুল মাঠে।হাফ প্যান্টুল পরে ফুটবল খেলা।খেলা শেষে নদীতে ঝাঁপাই ছোঁড়া। ছোট্ট একটা ইস্কুল ছিল আমাদের।এখন পরিসরে বেড়েছে।নীল সাদা ইস্কুল বাড়ি যাওয়া আসার পথে দেখা যায়। তুমি জানো আমাদের বন্ধুরাও তো মাঠে যায়– কিন্তু পাবজি খেলে।মহানন্দ বলে মাঠ আর আছে কোথায় কমিউনিটি টয়লেট হয়েছে।সেই ইউক্যালিপটাস গাছ আর ব্রিটিশ আমলের নিম গাছটাও নেই।হোস্টেলটা ভাঙাচোরা পোড়ো বাড়ি।থরে থরে কত সাইকেল পড়ে আছে।নষ্ট হচ্ছে বস্তা বস্তা চাল। ছুটি শেষ হচ্ছে কবে তোদের ?কি জানি জুনের মাঝামাঝি খোলবার কথা ছিল। কিন্তু সমীর স্যার গ্রুপে মেসেজ করেছেন ছুটি বাড়ছে গরমের জন্য।এটাও হয়ত আবার পাল্টে যাবে। স্কুল খোলার নামই নেই।প্রচণ্ড গরমে চারিদিক থেকে ডিজে বক্স এর তাণ্ডব ভেসে আসে। পাড়ায় পাড়ায় পুজো। বিয়েবাড়ির মতো রাজকীয় খাওয়া দাওয়া। পঞ্চায়েতের কন্ট্রাক্টররা ক্যুইন্টাল ক্যুইন্টাল চাল ডাল পাঠিয়ে দেয়।বিধায়ক ফিতে কাটতে আসেন সাঙ্গপাঙ্গরা বলে– আহা বেশ বেশ বেশ!এভাবেই গরমটা বেশ কেটে যাচ্ছে আনন্দদের পাড়ায়।আনন্দ বলে জানো আজ নাকি প্যান্ডেলে ধামাকা আছে।মহানন্দ বলে আমাদের সময় বাপু ওসব ধামাকা টামাকা ছিল না।ক্যাঙালি ভোজন ছিল বটে কিন্তু সেটা খিচুড়ি আলুর দম। এখন পুঁজির দাপটে সব পাল্টে গেছে রাতারাতি।আজ নজরুল এর জন্মদিন।‘বলো বীর বলো উন্নত মম শির!’ আবৃত্তি করে ওঠেন মহানন্দ।আনন্দ উন্মুখ চেয়ে থাকে কাকুমণির দিকে। শেষটায় গলা মেলায়।
Comments :0