নিজেকে গর্বিত ভারতীয় মুসলিম বলে দাবি করে যিনি গান্ধী, আজাদ, আম্বেদকরকে নিজের নেতা হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন ইতিহাসের সেই মেধাবী গবেষক উমর খালিদকে দেশের ঐক্য-সংহতি ও নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক এক দেশদ্রোহী হিসাবে চিহ্নিত করে পাঁচ বছর ধরে জেলে বন্দি করে রেখেছে নরেন্দ্র মোদীর হিন্দুত্ববাদী সরকার। জেএনইউ’র প্রাক্তন ছাত্র নেতা ২০১৯ সালে এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ। দিল্লি সহ দেশে অন্যত্র এনআরসি এবং নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে যে দুর্বার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তাতে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল খালিদের। এই আন্দোলনকে দমন করার এবং নির্মূল করার জন্য যে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হয়েছিল তারই শিকার উমর খালিদ সহ অনেক মুসলিম তরুণ। দিল্লির শাহিনবাগ সহ নানা জায়গায় টানা চলতে থাকা এই আন্দোলন মোদী সরকারকে শুধু অস্বস্তিতে ফেলে দেয়নি রীতিমত শঙ্কিত করেছিল। তাই যেভাবেই হোক আন্দোলন দমন করতে বেপরোয়া ও মরিয়া হয়ে ওঠে সরকার। রাজধানীর বুকে এই আন্দোলনের মূল শক্তি ছিল সংখ্যালঘু মুসলিমরা। আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও মোদী সরকারের ভাবমূর্তিতেও আঘাত লাগতে থাকে। দলের কর্মীদের ও পুলিশ দিয়ে হামলা করে হুমকি দিয়েও যখন আন্দোলন থামানো যাচ্ছিল না তখন আরএসএস-বিজেপি কর্মীরা মিশ্র এলাকায় গিয়ে উসকানি ও প্ররোচনা সৃষ্টি করে, বিদ্বেষ ও ঘৃণা ভাষণ দিয়ে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করতে থাকে। দিল্লির দাঙ্গা এমন ষড়যন্ত্রেরই পরিণতি।
তারপর দাঙ্গার প্ররোচনার দায় চাপিয়ে একে একে গ্রেপ্তার করা হয় উমর এবং তার সহযোদ্ধাদের অনেককে। সাধারণ কোনও আইনে নয় একেবারে ভয়ঙ্কর কালা আইন ইউএপিএ’র ধারায় তাদের দেশদ্রোহী বলে বন্দি করা হয় মিথ্যা মামলা সাজিয়ে। বিভিন্ন সময়কার বক্তৃতার টুকরো টুকরো অংশ হাজির করে প্রমাণ করার চেষ্টা হয় তারা হিংসা, মারদাঙ্গা, রক্তপাতের ষড়যন্ত্রে ছক করেছিল। এমন কি বক্তৃতায় ইনকিলাব জিন্দাবাদ বলাটাকেও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র বলে চালানো হয়। ৪০ পাতার চার্জশিটের ছত্রে ছত্রে এটাই প্রতিপন্ন করার চেষ্টা হয়েছে যে খালিদ একজন উগ্রপন্থী। একটা বক্তৃতায় ‘চাক্কাবন্ধ’ শব্দকে পুলিশ উগ্রপন্থী হামলার ইঙ্গিত বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।
নিম্ন আদালত, দিল্লি হাইকোর্ট এমনকি সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকবার খালিদের জামিনের আবেদন খারিজ করা হয়েছে। যদিও গত পাঁচ বছর ধরে বিচার প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। তার বিরুদ্ধে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ আনা হলেও নির্দিষ্টভাবে কোনও প্রমাণ হাজির করতে পারেনি পুলিশ। বারবার নানা কৌশলে জামিন আটকে জেলে রাখারই চেষ্টা করে চলেছে পুলিশ। এমনটা অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। গণতান্ত্রিক দেশে একজন স্বাধীন নাগরিককে শুধু সন্দেহের বশে বছরের পর বছর আটকে রাখা যায় না। আসলে হিন্দুত্ব রাজনৈতিক স্বার্থে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়াতেই মোদী-শাহরা এই জঘন্য পথ নিয়েছে। যাতে তাড়াতাড়ি ছাড়া না পায় তারজন্যই ব্যবহার করা হয়েছে ইউএপিএ। বস্তুত মোদী জমানায় মুড়িমুড়কির মতো ইউএপিএ-তে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সরকারের সমালোচক ও প্রতিবাদীদের। যারাই সরকার বিরোধিতায় মুখর হয় তাদের বিরুদ্ধেই প্রয়োগ হয় ইউএপিএ। সংখ্যালঘু হলে তো কথাই নেই।
Editorial
৫বছর পরেও খালিদ জেলে
×
Comments :0