OPPOSITION MEET BENGALURU

বিরোধী বৈঠকে ঠিক হচ্ছে কর্মসূচি, মমতাকে মদত লুকাচ্ছে বিজেপি

জাতীয়

পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বেলা ১২টায় বেঙ্গালুরুতে শুরু হয়েছে ২৬টি বিরোধী দলের বৈঠক। সূত্রের খবর এদিনের বৈঠকে মূলত অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির ওপরেই বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছে বিজেপি বিরোধী দলগুলি। তবে কোন কোন বিষয়কে সামনে রেখে তারা তা ঠিক করবে তা জানা না গেলেও বেকারত্ব, কৃষকদের সমস্যা যে গুরুত্ব পাবে বা পেতে চলেছে তা বোঝা যাচ্ছে।


এদিনের বৈঠকের শুরুতেই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কংগ্রেস কোন ভাবে প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্য লড়াই করছে না। এদিন খাড়গে বৈঠকে বলেন, ‘‘আমরা যেই ২৬টি দল বৈঠকে উপস্থিত রয়েছি তারা ১১টি রাজ্যের সরকার পরিচালনা করছি। বিজেপি একা ৩০৩টি আসন পায়নি, জোট সঙ্গীদের ওপর ভরসা করতে হয়েছে।’’ 
খাড়গে আরও বলেন যে, ‘‘বিরোধী দলগুলি দেশের উন্নতির স্বার্থে, মানুষকে অর্থনৈতিক বৈষম্য, ভেদাভেদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য একসঙ্গে কাজ করবে।’’
বেঙ্গালুরুর বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। রয়েছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। আর এই প্রসঙ্গ টেনে সিপিআই(এম)কে বার বার নিশানা করছে বিজেপি। মগরাহাটে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘এই জোট সিপিআই(এম)’র নিচু তলার কমরেডরা মেনে নেবে না।’’
সোমবারই বেঙ্গালুরুতে বিরোধী দলগুলির বৈঠকের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমে সিপিআই(এম)’র অবস্থান জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি জানিয়েছেন, পঞ্চায়েতের মতো লোকসভা ভোটেও বিজেপি এবং তৃণমূল, দুই শক্তির বিরুদ্ধেই লড়বে সিপিআই(এম)। বিরোধী ঐক্য সারা দেশের সব রাজ্যে একই ধরনের হবে না। ২০০৪ সালেও হয়নি। কিন্তু সে সময় বিজেপি সরকারকে কেন্দ্র থেকে হটানো গিয়েছিল।


বিরোধী বৈঠকের লক্ষ্য ব্যাখ্যা করেন ইয়েচুরি। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার দেশের চরিত্রই বদলে দিতে চাইছে। গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সাধারণতন্ত্র ভারতের চরিত্র। দেশের এই চরিত্র যাতে অটুট থাকে তার জন্যই বিরোধীদের এই উদ্যোগ। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সরকার থেকে দূরে রাখতে হবে বিজেপি’কে।’’ 
পশ্চিমবঙ্গ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস এ রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূল দুই শক্তির সঙ্গেই লড়ছে। লোকসভা ভোটেও বামফ্রন্ট-কংগ্রেস লড়বে তৃণমূল এবং বিজেপি দুই শক্তির বিরুদ্ধেই।’’
কী করতে চাইছেন বিরোধীরা?


ইয়েচুরি বলেন, ‘‘বিরোধী দলগুলি চাইছে যাতে বিজেপি বিরোধী ভোট এমনভাবে ভাগ না হয় যাতে বিজেপি’র সুবিধা হয়। কিন্তু রাজ্যে রাজ্যে বাস্তবতা এক নয়।’’ 
বাস্তবতা আলাদা কেন ব্যাখ্যা করেন ইয়েচুরি। যেমন কেরালায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইউডিএফ এবং বামফ্রন্টের নেতৃত্বাধীন এলডিএফ’র মুখোমুখি লড়াই। আবার জাতীয় স্তরে দুই শক্তিই বিজেপি’কে সরকার থেকে হটানোর জন্য লড়ছে। 
ইয়েচুরি বলেন, ‘‘২০০৪ সালে কেন্দ্রে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে হটাতেও বিরোধীরা লড়াই করেছিল। বামফ্রন্ট ৬১ আসনে জয়ী হয়েছিল। তার মধ্যে ৫৭টি আসনে কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। কংগ্রেসকে হারালেও দেশের স্বার্থে কেন্দ্রে তাদের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিল। সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মনমোহন সিং। টানা দশ বছর আসীন ছিল মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার। সেই অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে।’’
মমতা ব্যানার্জি প্রথমে দাবি করেছিলেন যে তার দল একা লড়বে লোকসভায়। কিন্তু গোটা দেশের সামনে নিজেকে এবং তৃণমূলকে বিজেপি বিরোধী বোঝানোর জন্য পাটনায় বিরোধী বৈঠকে যান তিনি। এবারও তিনি গিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়েও তৃণমূল বিরোধী জোটে ছিল প্রথমে। তারপর অবস্থান বদল করে। আর উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তো ঘুরিয়ে সমর্থন দেয় তৃণমূল। 


রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। প্রতিদানে তৃণমূলও বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের পর আদানি গোষ্ঠীর কেলেঙ্কারি নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবিতে একজোট ছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু তৃণমূল সরে থেকেছে। আবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই, ইডি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নামলেও গতি কমিয়ে দিয়েছে। তদন্ত কবে শেষ হবে তা নিয়ে আদালতেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা। দুর্নীতির দায়ে একশো দিনের কাজ বন্ধ করে গরিবের রোজগার কেড়েছে কেন্দ্র। কিন্তু তৃণমূলের কারও বিরুদ্ধে কেন্দ্রের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
বামপন্থীরা বারবার তৃণমূল-বিজেপি’র এই বোঝাপড়া নিয়ে সরব হয়েছে। তাঁরা বলছেন, গোপন সংযোগ ধরা পড়েছে বলেই বিজেপি’র ভোট কমেছে পঞ্চায়েতে। বামপন্থীরাই গ্রামে গ্রামে আন্দোলন করে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করেছে। শুভেন্দু অধিকারী বামপন্থীদের লড়াইকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছেন। তবে মানুষকে ভুল বোঝাতে পারবেন না।

Comments :0

Login to leave a comment