চিন্ময় কর ও উৎপল মজুমদার
পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় বুধবার জনতার ঢল। চন্দ্রকোণা রোড ধরে বিশাল মিছিলের সামনে জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ। ভয় আর হুমকি উড়িয়ে রাস্তায় শামিল মানুষ। হাতে শক্ত করে ধরা লাল ঝান্ডা।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আক্রমণ করেছেন তৃণমূল এবংপুলিশকে। বলেছেন, ‘‘মানুষের মেজাজ বুঝুন। অধিকার চাইতে পথে নামছেন মানুষ। অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে কড়া প্রতিরোধ হবে। ’’
বুধবারই মালদহে সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বুথরক্ষার আহ্বানই জানিয়েছেন। বলেছেন, মানুষই রক্ষা করবেন বুথ। মানুষের ঐক্যই বুথরক্ষার সবচেয়ে বড় গ্যারান্টি।
গড়বেতার মিছিল বুঝিয়েছে মানুষ কতটা মরিয়া।
কোথাও অঝোরে বৃষ্টির মধ্যে জলকাদা ভেঙে প্রচার। মিছিলে প্রায় সর্বত্র সামনের সারিতে মহিলারা। স্লোগানও সব মিছিলে, সব প্রচারে এক।
মালদহের মানিকচক বা পশ্চিম মেদিনীপুরের মাকলি, স্লোগান জনতার পঞ্চায়েত গড়ার। লাল ঝান্ডার মিছিলে শামিল কংগ্রেস কর্মীরা। আবার বহু জায়গায় মিছিলে শামিল আইএসএফ কর্মীরাও।
মালদহের মানিকচকে এভাবেই চলেছে প্রচার।
লুটেরাদের হটিয়ে জনতার পঞ্চায়েত গড়ার ডাক দিয়ে টানা কয়েকমাস আন্দোলন চালিয়ে বামফ্রন্ট। পঞ্চায়েত ভোটের শেষ বেলায় এখন স্লোগান বুথরক্ষার। স্লোগান বিভাজনের রাজনীতির দুই শক্তি বিজেপি এবং তৃণমূলকে হারানোর।
মালদহের কোণায় কোণায় চলছে প্রচার। এ জেলায় বহু মানুষের ভরসা যেমন আম চাষ, তেমনই ভরসা রেশম চাষও। দুই পেশায় জড়িয়ে থাকা মানুষ ভুগছেন। কারণ বিপণনের কাঠামো নেই। তার ওপর নেই একশো দিনের কাজ। একের পর এক প্রকল্পে দুর্নীতিতে জেরবার জনতা। ছাত্র আন্দেলনের নেত্রী দীপ্সিতা ধর প্রচারে বলেছেন, এসএসসি টেট মাদ্রাসা সব জায়গায় নিয়োগ বন্ধ। কেবল চলছে দুর্নীতি। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন মানুষের মতো মানুষ করার জন্য। তৃণমূল বা বিজেপি সেই রাস্তা বন্ধ করেছে। বাড়ির ছেলেমেয়েদের জন্য ভোট দিন বামপন্থীদের।
মালদহে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা কাজ না পাওয়ার। গ্রাম থেকে দলে দলে যুবরা চলে যাচ্ছেন ভিন রাজ্যে। কোভিড মহামারীর সময় বাড়ি ফিরতে গিয়ে কেবল এই জেলারই অন্তত ২২ শ্রমিক মারা গিয়েছেন রাস্তায়। বিষমদে মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ হয়। পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ মেলে না পরিবারের।
ভুতনীর চরে এভাবেই প্রচার হয়েছে বামপন্থীদের।
তার ওপর রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় থাকেন যাঁরা প্রতিদিন নাকাল হতে হয় তাঁদের। সীমান্ত এলাকায় সমন্বয়ে রাজ্য প্রশাসন এবং বিএসএফ’র যৌথ কমিটি থাকার কথা। মুখ্যমন্ত্রী ভোটের আগে জনসভায় বিএসএফ’কে গাল পাড়েন। কিন্তু তাঁর সরকারের প্রতিনিধিরা সমন্বয় কমিটি বৈঠকে সরব হন না কেন, ক্ষোভ রয়েছে এলাকায়। ক্ষোভের কেন্দ্রে তৃণমূল এবং বিজেপি।
এই জেলায় বামফ্রন্টের সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা সব আসনে না হলেও বহু আসনে হয়েছে। অনেক জায়গায় যৌথ প্রচারে শেষ মুহূর্তে সমঝোতার বার্তা দেওয়া হচ্ছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর এবারের ভোট পর্বে বারবার সামনে এসেছে বেলাগাম সন্ত্রাসের জন্য। মহিলা প্রার্থী সুষমা সাউয়ের মনোনয়ন তোলাতে ব্লক দপ্তরে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। দাসপুরের সে দৃশ্য দেখেছেন সারা রাজ্যের মানুষ। চন্দ্রকোণায় কৃষ্ণপুর গ্রামে সিপিআই(এম) প্রার্থী কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ। জেলেও ভরা হয়েছে, জানিয়েছেন সুশান্ত ঘোষই।
সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, হুমকি সত্ত্বেও লড়াই থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়নি সিপিআই(এম)’কে, বামপন্থীদের। জেলা পরিষদে সব আসনে রয়েছে প্রার্থী, পঞ্চায়েত সমিতিতে আশি শতাংশ ছাড়িয়ে, গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় সত্তর শতাংশ আসনে রয়েছে প্রার্থী।
একদিকে হুমকি, আরেকদিকে মানুষকে ভরসা দিতে মিছিল, জনসভা। বামপন্থীরা লেগে রয়েছেন ভরসা দেওয়ার কাজে। বুথরক্ষার লড়াইয়ে, জনতাকে নিয়ে জনতার পঞ্চায়েতের জন্য।
গ্রাফিক্স: মনীষ দেব
Comments :0