Post editorial

দিশাহীন বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

উত্তর সম্পাদকীয়​

বাসব বসাক
                 
সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত হলো রাষ্ট্রসঙ্ঘ আয়োজিত ২৯ তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন, যা কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ নামে সমধিক পরিচিত। কথা ছিল এই সম্মেলন চলবে ১১ থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু নানা টানাপোড়েন, নানা বিতর্কজর্জর সম্মেলন চলল নির্ধারিত সময়ের পরে আরও অন্তত ৩৬ ঘণ্টা। শেষ পর্যন্ত ২২-এর পরিবর্তে কোনোক্রমে সম্মেলন শেষ হলো ২৪ নভেম্বর ভোরে। ২৯তম জলবায়ু সম্মেলন ভোর বেলা শেষ হলো বটে, কিন্তু প্রশ্ন হলো এই সম্মেলন জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আদৌ কোনও নতুন ভোরের হদিশ দিতে পারলো কি বিশ্বকে! 
রাষ্ট্রসঙ্ঘের এই মহা সম্মেলনে বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধি ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আগ্রহী একাধিক অসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি এবার হাজির ছিলেন দু’হাজারেরও বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পক্ষে জোরালো সওয়ালকারী, যাদের কি না অবাধে অংশ নিতে দেখা গেছে দ্বিপাক্ষিক ও বহু পাক্ষিক একাধিক সভায়। ফলত ২৯তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু বিজ্ঞানের সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানিওয়ালাদের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হারই মানতে হলো বিজ্ঞানকে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে ২৪ নভেম্বরের শেষ রাতে হাজারো বিরোধিতার মধ্যে কোনও মতে যে চুক্তিপত্র শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষরিত হলো তা, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলির পক্ষে, যারপরনাই হতাশাব্যাঞ্জক। 
২৪ নভেম্বর ভোর সাড়ে চারটেয় বাকুর অলিম্পিক স্টেডিয়ামের মঞ্চে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক পরিকাঠামোগত সভার (ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ সংক্ষেপে ইউএনএফসিসিসি) পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, “উন্নয়নশীল দেশগুলিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে শিল্পোন্নত দেশগুলির পক্ষে দেয় বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে পূর্বতন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল, তাকে তিনগুণ বাড়িয়ে ২০৩৫-এর মধ্যে বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলার করার প্রশ্নে উন্নত দেশগুলি সহমত হয়েছে”। শুধু তাই নয়; ওই বিবৃতির ঠিক পরের অনুচ্ছেদেই উল্লেখ করা হলো, “নতুন চুক্তি মোতাবেক ২০৩৫-এর মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দিতে সরকারি ও বেসরকারি যাবতীয় উদ্যোগকে নিশ্চিত করা হবে”। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষয়ক্ষতি রুখতে উন্নয়নশীল দেশগুলি বহুদিন ধরেই উন্নত দেশগুলির কাছে বছরে ন্যূনতম ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি ফান্ড গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু ২৯তম জলবায়ু সম্মেলনের অন্তিম লগ্নে ইউএনএফসিসিসি পরিবেশিত বিবৃতির সঙ্গে বাস্তবে যে প্রস্তাবটি তালে গোলে পাশ করানো হয়েছে তার বিস্তর ফারাক। প্রস্তাবটিতে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির ৯ নম্বর ধারার উল্লেখ ক’রে বলা হয়েছে তার ৫৩ নম্বর অনুচ্ছেদে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাটি প্রসারিত ক’রে উন্নত দেশগুলির নেতৃত্বে ২০৩৫-এর মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জলবায়ু অভিঘাত ব্যবস্থাপনার জন্য বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ ভাণ্ডার গঠনের প্রশ্নে সকলে ঐকমত্যে পৌঁছেছে এবং এই অর্থ সরকারি, বেসরকারি, দ্বিমুখী, বহুমুখী বা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যাঙ্কের মতো যে কোনও ধরনের বিকল্প উৎস থেকে সংগৃহীত হতে পারে। তার ওপর উন্নত দেশগুলির জন্য এ কোনও বাধ্যতামূলক বিনিয়োগ নয়; বহুলাংশে তাদের সদিচ্ছার ওপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এই অর্থ সংস্থানের দায়। অর্থাৎ কিনা ইউএনএফসিসি’র বিবৃতিতে উন্নয়নশীল দেশগুলির দাবির সঙ্গে তাল রেখে এই অর্থের উৎসের প্রশ্নে প্রথমে যা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল তার সঙ্গে মূল প্রস্তাবের কোনও মিল থাকলো না। কেননা ইউএনএফসিসিসি’র বিবৃতি শুনলে মনে হতে পারে উন্নত দেশগুলি সরকারি অর্থেই বার্ষিক ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ ভাণ্ডার গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে। অথচ বাস্তবে দেখা গেল আদৌ তা নয়। বরং বিপুল কর্পোরেট পুঁজির বিনিয়োগ থেকে শুরু ক’রে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য করা অথবা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ব্যাপক হারে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় লাগাম পরানোর চেষ্টাকে ওই ৩০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ ভাণ্ডার গড়ার কাজে ব্যবহারের জন্য ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে সম্মেলন চলাকালীন একটা সময়ে তেল সাম্রাজ্যের অন্যতম অধীশ্বর সৌদি আরবের প্রতিনিধি কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই তেল লবির স্বার্থে খসড়া প্রস্তাবটির শব্দ বদলে ফেলেছে বলে ব্যাপক উত্তেজনাও তৈরি হয়েছিল।
দেশে দেশে কর্পোরেট পুঁজির রক্ষক দক্ষিণপন্থী সরকারগুলি চিরকালই সহনশীল উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে চরম অনীহা দেখিয়ে এসেছে। খোলাবাজার অর্থনীতির ধামাধারী এই সব দক্ষিণপন্থী সরকারগুলো দীর্ঘদিন ধরেই জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতাকে কার্যত অস্বীকার করার পথে হাঁটতে চেয়েছে। ২৯তম জলবায়ু মহা সম্মেলন শুরু হওয়র দু’-একদিনের মধ্যেই আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়, সন্দেহ নেই সম্মেলনকে বহুলাংশে প্রভাবিত করেছে। সম্মেলনের তৃতীয় দিনের মাথায় হঠাৎই আর্জেন্টিনার মাইলাই সরকার সে দেশের প্রতিনিধিদের দেশে ফিরিয়ে নেয়। অর্থাৎ কিনা ২৯ তম জলবায়ু সম্মেলন বয়কট করে আর্জেন্টিনা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সদ্য নির্বাচিত মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের সঙ্গে মাইলাইয়ের এক বৈঠকের পরেই আর্জেন্টিনার পক্ষ থেকে এহেন বয়কটের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মনে রাখা ভালো, কিছুদিন আগেই এই মাইলাই মন্তব্য করেছিলেন জলবায়ু পরিবর্তন নাকি সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির বানানো এক মস্ত ধোঁকার টাটি। শুধু তাই নয়, মাইলাই তাঁর দেশের সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রকটিকেই তুলে দিয়েছেন। ট্রাম্পের জয়ের ফলে আবিশ্ব পুঁজির দালাল সরকারগুলির দ্বারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞানকেই অস্বীকার করার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক জলবায়ু বোঝাপড়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জোন্না ডেপলেজ সঠিক ভাবেই বলেছেন বাকি উন্নত দেশগুলি ইতিমধ্যেই বুঝে গেছে ট্রাম্প এই জলবায়ু ব্যবস্থাপক অর্থ ভাণ্ডার গড়ে তুলতে একটা ফুটো কড়িও দেবেন না। ফলে সেই ঘাটতি পূরণ করতে হবে অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশগুলিকেই। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে  ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সংঘাতও ২০২৪-এর ২৯তম জলবায়ু সম্মেলনের ওপর যথেষ্ট ঋণাত্মক প্রভাব ফেলতে সমর্থ হয়েছে।
তৃতীয় দুনিয়ার উন্নয়নশীল দরিদ্র দেশগুলির এহেন ক্ষোভ খুবই সঙ্গত। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার এবং অর্থনৈতিক সহযোগ ও উন্নয়ন সংস্থার হিসাবে দেখা যাচ্ছে চলতি বছরে বিশ্বের আর্থিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা মাত্র ৩.২ শতাংশ; যা কিনা বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতে ২০১০  আর্থিক বৃদ্ধির হারেরও কম থাকতে চলছে। শুধু তাই নয়, গত বিশ বছর ধরে দক্ষিণ গোলার্ধের উন্নয়নশীল দেশগুলিই বিশ্ব অর্থনীতির ৮০ শতাংশ ভার বহন ক’রে চলেছে। তার ওপর দেখা যচ্ছে ২০০০ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র তলের উচ্চতা বৃদ্ধি, সাইক্লোন, বন্যা, তাপপ্রবাহ ইত্যাদির অভিঘাতে অন্তত ৫৫ টি দেশে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫২৫ বিলিয়ন ডলার; যদিও দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ওই দেশগুলির কার্বন উদ্গীরণের পরিমাণ বিশ্বজুড়ে মোট উদ্গারিত কার্বনের মাত্র ৪ শতাংশ। সত্যি বলতে কি জলবায়ু পরিবর্তনে ওই দেশগুলির কার্যত কোনও দায় না থাকা সত্ত্বেও গুণেগার দিয়ে যেতে হচ্ছে তাদেরকেই। ঋণ জর্জর বিপন্ন এই দেশগুলি শিল্পোন্নত দেশগুলির অতিভোগ ও চরম মুনাফা লিপ্সার জন্য যে সর্বনাশা সঙ্কটের চড়া মাশুল গুনে চলেছে তাকে টাকার অঙ্কে পরিবর্তিত করলে দেখা যাবে আসলে তারাই উত্তমর্ণ, তাদেরকে নানা আঙ্গিকে ঋণের ফাঁদে বেঁধে ফেলা শিল্পোন্নত দেশগুলিই আসলে এই গরিব দেশগুলির কাছে ঋণী। একেই বলা হয় জলবায়ু ঋণ। কেবলমাত্র কার্বন উদ্গীরণের হিসাবটুকুই যদি ধরা হয় তাহলেও শিল্পোন্নত ধনী দেশগুলির কাছে উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রাপ্য দাঁড়ায় বছরে ১৯২ ট্রিলিয়ন ডলার। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনকে যদি হিসাবের বাইরেও রাখা হয় তাহলেও গরিব দেশগুলি থেকে উন্নত দেশগুলি যে বিপুল পরিমাণ জমি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও সস্তা শ্রম আহরণ ক’রে মুনাফার পাহাড় গড়ে চলেছে শুধু সেই কারণেই তাদের এই দরিদ্র দেশগুলির কাছে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে অন্তত ১০ ট্রিলিয়ন ডলার। তাই মাত্র ৩০০ বিলিয়ন নয়, অন্তত বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের জলবায়ু ফান্ড গড়ে তোলার যে দাবি উন্নয়নশীল দেশগুলি সোচ্চারে জানিয়ে আসছে তা অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত। ইউএনএফসিসিসি-ও কিন্তু এই দাবিকে মান্যতা দিয়েছে। অথচ কার্যক্ষেত্রে যে প্রস্তাব পাশ করানো হলো তাতে স্বভাবতই এসব কথা উহ্য থেকে গেলো। বরং পরিচ্ছন্ন উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার বকলমে সেই কিয়োটে প্রোটোকল স্বাক্ষর করার সময় ধনী দেশগুলিকে উন্নয়নশীল দেশে তথাকথিত কম উদ্গীরণকারী প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে কার্বন আমানত লাভের মতো ফক্কিকারির সাহায্যে প্রাকৃতিক সম্পদ লুটের ছাড়পত্র দেওয়া অথবা প্যারিস চুক্তিতে উল্লিখিত তথাকথিত গ্রিন প্রজেক্টে বিনিয়োগকারীদের সরকারের পক্ষ থেকে ভরতুকি দানের আজব ব্যবস্থার মতই এবারেও ঘুরপথে বাজারের হাতেই কার্যত তুলে দেওয়া হল বছরে ওই ৩০০ বিলিয়ন অর্থ সংস্থানের ভার। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে গরিব দেশগুলিকে এই অর্থ পেতে হলে তা পেতে হবে বাজারের শর্তেই, অথবা তাদের ঘাড়ে সেই অর্থ শেষ পর্যন্ত বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতই ঋণ হিসাবে চেপে বসবে।
এ বছর জলবায়ু সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী পর্যায়ের কাউকে অংশ নিতে দেখা যায় নি, যা থেকে এ কথা মনে করার যথেষ্ট কারন আছে যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের কাছে জলবায়ু পরিবর্তনের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়তো ঠিক ততখানি অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য নয়। ২০২৩ এর ২৮ তম সম্মেলনে অবশ্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ২০৪৭ এর মধ্যে তথাকথিত ‘বিকশিত ভারত’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০৩০ এর মধ্যে ৫০০ গিগা ওয়াট অচিরাচিত শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার শস্তা, অবাস্তব ও অপরিণামদর্শী ঘোষণা ক’রে এসেছিলেন। বাস্তব ছবিটা কিন্তু একেবারেই অন্য রকম। অপ্রচলিত শক্তিক্ষেত্রে প্রভূত বিনিয়োগ ও সেই কর্পোরেট বিনিয়োগ টানতে সরকারি কোষাগার থেকে প্রচুর পরিমান ভরতুকির ব্যবস্থা করা সত্বেও এখনো ভারতের প্রয়োজনীয় শক্তির ৭০ শতাংশেরই উৎস কয়লা। তার ওপর ২০২৪-এ ভারতের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পরিমান কয়লা আমদানি ও সর্বাধিক কয়লা উত্তোলন – দুইই করেছে ভারত। শুধু তাই নয় এর মধ্যে আবার ২০৩১এ শক্তির ব্যবহার ৪৬% বাড়িয়ে ২৫২৪ টেরাওয়াটে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ক’রে বসে আছেন মোদী জী। একটা দেশের সরকারের মুখ হিসাবে প্রধানমন্ত্রী যদি, এমন কি আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়েও, ক্রমাগত এহেন বাগাড়ম্বর ক’রে যান তাহলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে করা এই সব অঙ্গীকার ও আভ্যন্তরীণ আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মধ্যে ভারসাম্য রাখা সেই দেশের সরকারের পক্ষে স্বভাবতই খুবই মুশকিল হয়ে যায়। তবে এ বার ভারতের পক্ষে যারা সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন তারা অবশ্য মোদী জীর মত ফাঁপা কথার ফানুস ওড়ানোর পথে হাঁটেন নি। বরং সম্মেলন মঞ্চে সোচ্চারেই শুনিয়ে এসেছেন জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল অর্থনীতির স্বার্থে আগামি সাত বছরের মধ্যে কম ক’রে ২১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথা। তবে ২৯ তম জলবায়ু সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে উত্থাপিত চূড়ান্ত প্রস্তাবে বাধা দেয় নি ভারত; যদিও প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যাওয়ার পর ভারত সেই প্র্স্তাবের বিরুদ্ধে তার উষ্মা জানিয়েছে সোচ্চারেই। হয়তো এই ভাবে সুকৌশলে শ্যাম ও কুল – উভয়ই রক্ষা করতে চেয়েছেন ভারতের প্রতিনিধিরা। 
শেষ পর্যন্ত ২৯ তম জলবায়ু সম্মেলন আদতে ব্যর্থতার এক দলিল হিসাবেই চিহ্নিত হয়ে থাকল। উন্নত দেশগুলির পক্ষে ফি বছর যে স্বেচ্ছামূলক ৩০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ সংস্থানের কথা শোনানো হল তা আসলে বুলেট বিদ্ধ ক্ষতে লিউকোপ্লাস্ট লাগানোর মতই হাস্যকর। সম্মেলনে উপস্থিত গ্রিনপিসের প্রতিনিধিদের পক্ষে জ্যাসপার ইনভেন্টর যথার্থই বলেছেন ২৯ তম জলবায়ু সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে কার্যত প্রকৃতির বেপরোয়া ধ্বংসকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার বিশ্বজনীন ব্যবস্থাটিকেই পাকা করা হল। 

Comments :0

Login to leave a comment