America's situation

আমেরিকার হাল

সম্পাদকীয় বিভাগ

দু’দিন পর মঙ্গলবারই আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। একদিকে লিবারাল গণতান্ত্রিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস, জো বাইডেন সরকারের তিনি উপরাষ্ট্রপতিও বটে। অন্যদিকে অতি দক্ষিণপন্থী রক্ষণশীল প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আমেরিকায় প্রধানত দ্বিদলীয় রাজনৈতিক পরিসরে কখনো ডেমোক্রেটিকরা কখনো কনজারভেটিভরা ক্ষমতায় ছিল। যুগ ধরে সক্রিয় এই দলগুলির অবস্থানগত বৈশিষ্ট্যের নানা পরিবর্তন হলেও ২০১৬ সালের আগে তাৎপর্যপূর্ণ তেমন কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হয়েই কনজারভেটিরদের অবস্থানে বড়সড় পরিবর্তন এনে দলকে আরও দক্ষিণ দিকে নিয়ে যান। সাধারণ একটি দক্ষিণপন্থী দল থেকে ট্রাম্পের কনজারভেটিভ দল হয়ে ওঠে ফ্যাসিস্ত প্রবণতা সম্পন্ন একটি অতি দক্ষিণপন্থী দল। কট্টর ও উগ্র জাতীয়তাবাদ ও বর্ণবিদ্বেষ হয়ে ওঠে তাদের প্রধান রাজনৈতিক অস্ত্র। বিপরীতে ডেমোক্রেটিকরা মানবতাবাদী ও গণতান্ত্রিক বলে নিজেদের দাবি করলেও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চাপে বেশি জাতীয়তাবাদী হয়ে ওঠার চেষ্টা করা।
তবে রাজনৈতিক অবস্থান যার যাই হোক না কেন মার্কিন পুঁজির বিশ্ব কর্তৃত্ব এবং সাম্রাজ্যবাদের শিরোমণি হয়ে থাকার প্রশ্নে তাদের কোনও বিরোধ নেই। মার্কিন বহুজাতিক পুঁজির দেশে দেশে দাপট বৃদ্ধিতে দুই দলই সমান দক্ষ। তাই আমেরিকার দুনিয়াদারি বা একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারে যখন যে দেশ রুখে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছে বা বাধা সৃষ্টি করেছে সেসব দেশকে কোণঠাসা করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে দু’দলই। চীন বা রাশিয়া, কিউবা বা ভেনেজুয়েলা সম্পর্কে দু’দলের অবস্থানের বিশেষ কোনও পার্থক্য নেই। বস্তুত দু’দলেরই অর্থের জোগানদার বৃহৎ কর্পোরেট মালিকরা। মার্কিন পুঁজির জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ বৃদ্ধিই মার্কিন রাজনীতির দায়িত্ব। তাই এই দুই দলের কারোর কাছ থেকে মার্কিন শ্রমজীবী মানুষ তাদের জীবন-জীবিকার সমস্যার সন্তোষজনক সমাধান প্রত্যাশা করে না। তেমনি অন্য দেশের সাধারণ মানুষের তাতে কোনও স্বার্থ থাকে না। তাই মার্কিন নির্বাচন নিয়ে ভারতের জনগণের বিশেষ উৎসাহ থাকার কথা নয়।
তবে এবারের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বিস্তর আলোচনার মূলে সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের দুরবস্থা এবং অর্থনীতির ঘোরতর সমস্যা। ২০০৮ সালের সেই বিশ্ব অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর থেকে মার্কিন অর্থনীতি শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এই দেড় দশকে শ্রমিকের মজুরি যেমন বাড়েনি তেমনি ক্রমাগত বেড়েছে মূল্যবৃদ্ধির দাপট। ফলে জীবনযাপনে জেরবার অবস্থা সাধারণ মানুষের। বাইডেন সরকার এই সমস্যার কোনও সমাধান করতে পারেনি। এর থেকে বেরোবার কোনও রাস্তা ট্রাম্পের সামনেও নেই। তাই মানুষের জীবনের মূল অ্যাজেন্ডাকে যথাসম্ভব লঘু করে দু’পক্ষ মজে আছে ব্যক্তি আক্রোশ ও ব্যক্তি কুৎসায়। কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যে ঢেকে যাচ্ছে নির্বাচনী প্রচার। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত, আধুনিক ও সভ্য বলে দাবি করা আমেরিকার নির্বাচনে কলতলার ঝগড়াকেও লজ্জা দিচ্ছে। পুঁজিবাদের সঙ্কট যখন পুঁজিবাদীদের দিশাহীন করে দেয় তখন এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক।
 

Comments :0

Login to leave a comment