SANDESHKHALI RESISTANCE

মমতার নির্দেশে অবরুদ্ধ দ্বীপে এখন পুলিশি-রাজ

রাজ্য

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP

অবরুদ্ধ সন্দেশখালি। অবরোধ করেছে সরকার। 
একটি দ্বীপ সন্দেশখালি। পৌঁছাতে হলে নদী পেরোতেই হবে। প্রতিটি গেটওয়েতে পুলিশ, র্যা ফ মোতায়েন। তৃণমূল নেতা, কর্মীরা সিঁটিয়ে আছেন। ঘৃণিত তারা। দ্বীপকে তৃণমূলের জন্য অবাধ রাখার দায়িত্ব নিয়েছে পুলিশ। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র (পুলিশ) মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিই।
শনিবার মাঝেরপাড়ায় যখন ডিওয়াইএফআই নেতৃত্ব গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলছেন, তখন মহিলারাই দেখিয়ে দিলেন কারা পুলিশ, যারা সাদা পোশাকে ভিড়ে মিশে নজর রাখছে। মহিলাদের দেখেই সেই পুলিশ কর্মীরা দূরে দূরে সরে যাচ্ছিলেন। কী করে চিনলেন এই পুলিশদের? মহিলারা জানাচ্ছেন, ‘প্রতিদিন এই পুলিশরা পাড়ায় টহল দিচ্ছে। কে কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে কথা বলছে— সব নজর রাখছে। বাইরে থেকে আত্মীয়রা এলেও বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসা করছে, কারা এল, কেন এল ইত্যাদি।’
এদিন ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মানুষ এখানে আতঙ্কিত হয়ে আছে। পুলিশ আর তৃণমূল একসঙ্গে রাতের বেলায় গ্রামে গ্রামে যাচ্ছে। আর মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। ডিজি বলছেন সন্দেশখালিতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। উনি মুখ্যমন্ত্রীর শেখানো বুলি বলে বেড়াচ্ছেন। ৫০দিনের বেশি হয়ে গেল কেন শেখ শাহজাহান গ্রেপ্তার হলো না? আমাদের সংগঠনের কর্মীরা সন্দেশখালির অত্যাচারিত মানুষের পাশে থেকে কাজ করবে। তাদের যেন কোনও অসুবিধা না হয়। তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে এসপিকে।’’
সন্দেশখালিতে গত ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল তৃণমূল নেতা শাহজাহানের রাজত্ব। এখন অঘোষিত পুলিশ-রাজ কায়েম করেছেন মমতা ব্যানার্জি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ তাই।
শনিবার পলাশ দাস, মীনাক্ষী মুখার্জি, ধ্রুবজ্যোতি সাহাদের মত যুব আন্দোলনের প্রাক্তন, বর্তমান নেতৃত্বকে বাধা দিয়েছে পুলিশ। উদ্দেশ্য, যাতে তাঁরা গ্রামবাসীদের কাছে যেতে না পারেন। মানুষের অভিযোগ শুনতে না পারেন। পুলিশের অজুহাত— ‘১৪৪ধারা জারি আছে।’ অথচ সেই সন্দেশখালিতেই এদিন তৃণমূল সভা করেছে। সেই সভায় লোক আনা হয়েছে নদীপথে, অন্য দ্বীপ থেকে। সেই সভায় পুলিশ পাহারা দিয়েছে। সভার পর দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু বলেছেন,‘‘আমরা জমি কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে ২৫৪জনের অভিযোগ পেয়েছি। সবার জমি ফেরতের ব্যবস্থা হচ্ছে।’’ প্রশ্ন করেছেন গ্রামবাসীরা,‘‘যে জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই জমিতে আর চাষ করা সম্ভব নয়। সেই জমিকে চাষের জন্য তৈরি করা হবে কী করে?’’
এদিন সন্দেশখালি থেকে বসিরহাটে পুলিশ সুপারের অফিসে যান যুব নেতৃত্ব। সেখানে ডেপুটেশনের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে পুলিশ আধিকারিক এজেএ রহমান আমাদের ধারাবাহিকভাবে অপমান করে গেছেন। তিনি পুলিশের পোশাক পরিয়ে তৃণমূলের লোক নিয়ে ঘুরছেন। আমরা ওই পুলিশ আধিকারিকের শাস্তি চাই। ১৪৪ধারা জারির কথা বলে পুলিশ আমাদের আটকানোর চেষ্টা করেছে। অথচ রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসুরা সপার্ষদ ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ সন্দেশখালিতে জমি ফেরানোর ব্যবস্থা করছেন বলে দাবি করছেন। তাহলে তো প্রমাণ হয়ে গেল জমি জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমরা সন্দেশখালিতে দিনের পর দিন যে অত্যাচার হয়েছে তার ন্যায় বিচার চাই।’’
এদিন জমি ফেরতের কথা বলে মমতা ব্যানার্জির সরকারের মন্ত্রী মেনে নিয়েছেন যে, তাদের দলের নেতারা জোর করে জমি দখল করেছিল। এই কাণ্ডের মাথা সেখ শাহজাহান। তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? প্রশ্ন সন্দেশখালির প্রতিটি মানুষের। সন্দেশখালি ফেরিঘাটে দাঁড়িয়ে যুব নেতৃত্বের অবস্থানের গতিপ্রকৃতি দেখতে দেখতে কাঠখোলার বাসিন্দা এক প্রৌঢ় বললেন,‘‘শাহজাহানের গ্রেপ্তার চাই। শাস্তি চাই। ওরা যা অত্যাচার করেছে ভাবা যায় না। সন্ধ্যার পরে মেয়েরা বাড়ি থেকে বেরোতে পারে না টিএমসি’র কর্মীদের ভয়ে। পুলিশ না থাকলে ওদের মেরে তাড়াবে সব গ্রামের মানুষ।’’
গ্রামবাসীদের অভিযোগ শুধু সন্দেশখালি দ্বীপে আবদ্ধ নয়। মূল ভূখণ্ডে, সন্দেশখালি থেকে সরবেড়িয়া যাওয়ার পথে বেড়মজুর-১, বেড়মজুর-২ নং পঞ্চায়েত এলাকার মানুষেরও প্রবল ক্ষোভ। এদিন বেড়মজুরে তৃণমূলের নেতা বিনয় সর্দারকে ক্ষুব্ধ মানুষ মারধর করেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বেড়মজুর-১ এবং বেড়মজুর-২ পঞ্চায়েতের আদিবাসীদের কয়েকশো বিঘা জমি ও পুকুর দখল করে নিয়েছে তৃণমূল নেতা সিরাজউদ্দিন। তারই শাগরেদ অজিত মাইতি। এছাড়াও তেভাগা আন্দোলনের পিঠস্থান হিসাবে বেড়মজুরের কাছারি পাড়ায় বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতি সৌধ বানানো হয়েছিল। সেই জায়গাও নিজের সিরাজউদ্দিন নিজের স্ত্রীর নামে করে নেয় বলে জানান বিক্ষোভকারীরা। সরবেড়িয়ায় সেখ শাহজাহান মার্কেটের মতো অন্যের জমি দখল করে বেড়মজুর কাঠপোলে সেখ সিরাজউদ্দিন নিজের নামে গড়ে তুলছে নতুন বাজার।
এদিন মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ‘‘যতদিন না শেখ শাহজাহান সহ বাকিরা গ্রেপ্তার হচ্ছে এবং শাস্তি হচ্ছে, ততদিন সন্দেশখালিতে শাস্তি ফিরবে না পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থাও ফিরবে না। অবস্থা পরিবর্তন না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবো।’’
এদিন থেকে গ্রামে গ্রামে ক্যাম্প করে অভিযোগ নেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রথম দিন তেমন কোনও সাড়া নেই সন্দেশখালিতে।


 

Comments :0

Login to leave a comment