Heatwave in India

দাবদাহে ভারতে অকেজো হচ্ছে ২৫% টিকা, রিপোর্ট বিশ্বব্যাঙ্কের

জাতীয়

Heatwave India

তাপপ্রবাহের তীব্রতা কেবল বাড়ছে না। কমছে দু’টি তাপপ্রবাহের ব্যবধানও। সঙ্কটে শ্রমজীবী, কাজে বেরনোর অবস্থায় থাকছেন না তাঁরা। সঙ্কটে ওষুধ এবং টিকা সংরক্ষণের কারিগরি শৃঙ্খল। কেবল ওষুধ এবং টিকা অযোগ্য হয়ে পড়ায় বছরে ৩১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে ভারতকে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাখ্যা করে এভাবেই বিপদের উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিবেদনে। বুধবার, ৭ ডিসেম্বর থেকে দু’দিন তিরুবনন্তপুরমে ‘ইন্ডিয়া ক্লাইমেট অ্যান্ড ডেভেপমেন্ট পার্টনার্স মিট’ শুরু হচ্ছে। বিশ্বব্যাঙ্ক জানিয়েছে কেরালা সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্কট এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে এই সম্মেলনে। 

 

ভারতে তামমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সম্ভাবনা সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘খাদ্য এবং ওষুধপত্র পরিবহণ ব্যবস্থায় সামান্য এদিক-ওদিক হলেই বিপজ্জনক প্রভাব পড়ে। ভারতে তাজা সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা এমনিতেই দুর্বল। মোট উৎপাদনের মাত্র ৪ শতাংশ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত সংরক্ষণ কাঠামোয় রাখা হয়। তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে সবজি এবং অন্য সামগ্রী নষ্ট হওয়ার ফলে মোট লোকসান পৌঁছাতে পারে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।’’ 

ওষুধ এবং টিকা ক্ষেত্রে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদক দেশ ভারত। বিশ্বব্যাঙ্কের হিসেব, কোভিড-১৯ সংক্রমণের আগেই ভারতে ২০ শতাংশ বা পাঁচভাগের একভাগ তাপমাত্রা সংবেদন ওষুধ সামগ্রী নষ্ট হয়েছে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রার স্তরে এই ধরনের ওষুধ রাখতে হয়। কিন্তু সেই কাঠামো ভারতে দুর্বল। আরও বলা হয়েছে, মোটের চারভাগের একভাগ বা ২৫ শতাংশ টিকা নষ্ট হয়েছে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষিত না হওয়ার কারণে। 

রিপোর্টে প্রান্তিকতম শ্রমজীবী অংশের বিপন্নতার উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘‘তাপপ্রবাহের তীব্রতা বাড়ছে। বারবার তাপপ্রবাহ হচ্ছে। ২০২২’র এপ্রিলেই দেখা গিয়েছে বিভিন্ন শহরে তাপপ্রবাহের কারণে বেড়ে যাচ্ছে তাপমাত্রা। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রার দিন বাড়ছে। কয়েক হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন, প্রতি বছর, অস্বাভাবিক গরমের কারণে। তাঁদের তাপপ্রবাহ এড়িয়ে কাজ করার উপায় নেই। অনেকে কাজে বেরতে পারছেন না। স্বাস্থ্যহানি বা কাজ করতে না পারার কারণে শ্রমসম্পদ অব্যবহৃত থাকছে। তার অঙ্ক ভারতের বার্ষিক মোট অভ্যন্রীণ উৎপাদনের ৪.৫ শতাংশে পৌঁছে যাচ্ছে। 

সেই সঙ্গে প্রতিবেদনে মনে করানো হয়েছে যে ভারতে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের আয় দিনে ২ ডলার বা ১৬০ টাকার কম। মাত্র ৮ শতাংশ ব্যক্তিগতভাবে এয়ার কন্ডিশনার কিনতে পারেন। এয়ার কন্ডিশনারের চাহিদা বাড়লেও বিপুল অংশের কেনার উপায় নেই। 

সরকারি এবং বেসরকারি স্তর থেকে বিনিয়োগের পাশাপাশি এই ধরনের মতবিনিময় কর্মসূচিতে নাগরিক সমাজকেও শামিল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক। তিরুবনন্তপুরমের সম্মেলনেও সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা বিচারে রেখে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনা আলোচনা করবে বিশ্বব্যঙ্ক।

রিপোর্টে তুলে বিভিন্ন বিষয়ে সহমত হলেও বিশ্বব্যাঙ্কের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পরিবেশবিদদের বিভিন্ন স্তরে। বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণের দিকটিই গোড়ার কথা স্মরণ করিয়ে বিভিন্ন অংশই বলছেন, উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্যাসের বাতাসে মেশা ঠেকাতে হবে। ফসিল জ্বালানির বিকল্প শক্তি উৎপাদনে জোর দিতে হবে। তাপমান নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র এই সঙ্কটের সমাধান নয়।    

Comments :0

Login to leave a comment