SFI KOLKATA

নয়া শিক্ষা নীতি রুখতে রাতভর অবস্থানে এসএফআই

রাজ্য কলকাতা

SFI KOLKATA CALCUTTA UNIVERSITY BENGALI NEWS

ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থবিরোধী যে নয়া জাতীয় শিক্ষা নীতি মোদী সরকার তৈরি করেছে, এরাজ্যে তা কার্যকর করা যাবে না। এই হুঁশিয়ারির বার্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার কলেজ স্ট্রিটে দু’দিনের অবস্থান-বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন এসএফআই’র কর্মী-সমর্থকরা। বৃহস্পতিবার বেলা তিনটে থেকে এই অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। চলবে রাতভর। শুক্রবার এই অবস্থান-বিক্ষোভ শেষে কলেজ স্ট্রিট থেকে মৌলালি পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত করা হবে বলে জানিয়েছেন এসএফআই’র নেতৃবৃন্দ। 

প্রসঙ্গত, মোদী সরকারের এই কালা শিক্ষা নীতি এরাজ্যে  কার্যকর করার জন্য বিশেষ তৎপরতা দেখাচ্ছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। নরেন্দ্র মোদী ও মমতা ব্যানার্জির গোপন বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই তা হচ্ছে বলে অভিযোগ এসএফআই কর্মীদের। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ‘‘এই শিক্ষা নীতি আদতে মোদী-মমতার শিক্ষা নীতি। বড়লোক, দাঙ্গাবাজদের শিক্ষা নীতি। আমরা এই শিক্ষা নীতি এরাজ্যে কিছুতেই কার্যকর করতে দেব না। এই শিক্ষা নীতি চালু করতে গেলে রাজ্যের সরকারকে এসএফআই’র কড়া প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে।’’


উল্লেখ্য, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্পোরেটের হাতে তুলে দিয়ে শিক্ষাকে বাজারি পণ্যের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইছে মোদী সরকার। পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের চিন্তন ও মননের জগৎকে কুসংস্কার ও অবচেতনার অতলে তলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র কষেই আরএসএস নির্দেশিত এই নয়া জাতীয় শিক্ষা নীতি দেশব্যাপী কার্যকর করতে চাইছে মোদী সরকার। 

বিভিন্ন রাজ্যের এই শিক্ষা নীতি কার্যকর করার বিষয়ে ইউজিসি’র সার্কুলার পাঠানো হয়েছে। কেরালা সহ একাধিক রাজ্যি ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থবিরোধী এই নয়া জাতীয় শিক্ষা নীতির বিরোধিতায় সরব হলেও এরাজ্যের মমতা ব্যানার্জির সরকার এনিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। 

শুধু তা নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো সেই সার্কুলারের কপি হুবহু পাঠানো হয়েছে রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। এমনকী এই নীতিকে কার্যকর করার লক্ষ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এই নিয়ে গোটা রাজ্যে লাগাতার বিক্ষোভ শুরু করেছে এসএফআই সহ বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি। 


এদিন কলেজ স্ট্রিট চত্বরে এর বিরোধিতায় অবস্থানরত ছাত্র-ছাত্রীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সবার শিক্ষা গ্রহণের অধিকার কেড়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা মোদী-মমতার এই ষড়যন্ত্রের শিক্ষা নীতি কিছুতেই মানা হবে না। সবার শিক্ষা গ্রহণের অধিকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাখাতে ব্যয়-বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সর্বোপরি শিক্ষাকে সর্বজনীন করার যে লক্ষ্য পূর্বতন ইউপিএ সরকার এবং এরাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার নিয়েছিল, সেই লক্ষ্যকে অটুট রেখে শিক্ষা ব্যবস্থার বিস্তার ঘটাতে হবে। 

নয়া এই জাতীয় শিক্ষা নীতিতে স্নাতক স্তরের মেয়াদ চার বছর করা, কিছু ক্ষেত্রে পাঠ্যসূচির ব্যাপ্তি ঘটানো ও দেশের প্রকৃত ইতিহাসকে সরিয়ে দিয়ে আরএসএস নির্দেশিত মনুবাদী শিক্ষার সংযোজন ঘটানোর যে অপচেষ্টা হচ্ছে, এদিন অবস্থান মঞ্চ থেকে তারও কড়া সমালোচনা করেছেন এসএফআই’র নেতৃবৃন্দ। 

এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য এদিন ধরনামঞ্চে উপস্থিত হয়ে নয়া এই জাতীয় শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে স্নাতক স্তরের পঠনপাঠনের সময় বাড়ানোর অর্থ লেখাপড়ার খরচকেও বাড়িয়ে দেওয়া। গরিব-প্রান্তিক পরিবারের পড়ুয়াদের সেই আর্থিক অবস্থা আছে? এক বছর বা দুই বছর পরে যে ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেই সার্টিফিকেট জীবিকার ক্ষেত্রে কতটা মান্যতা পাবে? আসলে সস্তায় শ্রমিক জোগান দিয়ে কর্পোরেটের জন্য ফায়দার ব্যবস্থা করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র আছে এর পিছনে। এটা মানা হবে না। 

এসএফআই’র রাজ্যা সভাপতি প্রতীক-উর রহমান এদিন বলেন, তৃণমূল ক্ষমতায় এসে শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এবার মোদী সরকারের নয়া শিক্ষা নীতির মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেক পোঁতার চেষ্টা চালাচ্ছে। নয়া এই জাতীয় শিক্ষা নীতি বাতিল করতে হবে। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের গণতান্ত্রিক অধিকার সুনিশ্চিত করার দাবিতে এসএফআই ধারাবাহিক লড়াই চালিয়ে যাবে।

এদিন ধরনামঞ্চে ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির প্রতি সংহতি জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন শিক্ষা ও সংস্কৃতি জগতের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র, নাট্যকার চন্দন সেন, কবি মন্দাক্রান্তা সেন প্রমুখ। জাতীয় শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে তাঁরা এদিন বলেছেন, মোদী সরকারের মূল লক্ষ্য হলো, বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো শিক্ষা ব্যবস্থাকেও বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া। পাশাপাশি আরএসএস নির্দেশিত মনুবাদী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের মগজে ঢুকিয়ে দিয়ে যুক্তিবাদের বিষয়টিকে দুরমুশ করতে চাইছে কেন্দ্রের বর্তমান সরকার। আগামী প্রজন্মকে অবচেতন করার ষড়যন্ত্রের এই নয়া জাতীয় শিক্ষা নীতি রুখে দেওয়ার লড়াইকে আরও জোরালো করতে হবে। এদিন রাতে ধরনা মঞ্চে ছিলেন দেবাঞ্জন দে, মহম্মদ আতিফ নিসার সহ এসএফআই নেতৃবৃন্দ।


এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে নয়া শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে পোস্টারিং চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বহিরাগত গুন্ডারা রড, লাঠি, উইকেট নিয়ে আক্রমণ চালায় এসএফআই কর্মীদের উপর। গুরুতর আহত হন কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের এসএফআই কর্মীরা। 

এদিন তার প্রতিবাদে গোটা ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী মিছিল সংগঠিত করা হয়। ডেপুটেশন দেওয়া হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে। এসএফআই’র দাবি, ক্যাম্পাসে বহিরাগত তৃণমূল গুন্ডাদের ঢোকা বন্ধ করতে হবে এবং এই ঘটনায় জড়িত বর্তমান ছাত্রদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের দাবিও জানিয়েছে এসএফআই।

{ad
 

Comments :0

Login to leave a comment