আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস মিলিয়ে হুগলি জেলায়তেও বৃষ্টি হচ্ছে। কামারকুণ্ডু মোড়ের একটি চায়ের দোকানে কয়েক জনের সঙ্গে বসে ছিলেন রাজকুমার মালিক। তিনি ‘ইচ্ছুক’ কৃষক। জমি দিয়েছিলেন ন্যানো কারখানার জন্য। টাটা বিদায়ের প্রসঙ্গ উঠতেই হাতের চায়ের কাপটা রেখে বছর ৪০ এর ওই ব্যাক্তি বলে ওঠেন, ‘‘এখনও আমার বিশ্বাস করি কৃষি ভিত্তি আর শিল্প ভবিষ্যৎ। আমরা চক্রান্তের শিকার। আজ আমার একটা ভালো চাকরি হতো, সব শেষ হয়ে গেলো।’’
২০০৮ 'র ৩ অক্টোবর সিঙ্গুর থেকে কারখানা সরিয়ে নেওয়ার কথা মহাকরণ থেকে ঘোষণা করেছিলেন রতন টাটা। মমতা ব্যানার্জি বললেন, ‘‘আমার কিছু যায় আসে না।’’ তার ১৫ বছর পরেও সিঙ্গুরের অলিতে গলিতে আক্ষেপের সুর শোনা যাচ্ছে।
রাজকুমার মালিকের পরিবার বিডিও অফিসে গিয়ে দরখাস্ত জমা করে জমি দিয়েছিল কারখানার জন্য। স্বপ্ন ছিল কারখানা হবে। কাজ করবেন। সেই স্বপ্ন আস্তে আস্তে পূর্ণতা পাচ্ছিল। ২০০৬-র ২৬ অক্টোবর সিঙ্গুরের কৃষক পরিবারের যুবকরা প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। প্রথমে বেলুড় রামকেষ্ণ মিশন, ব্যান্ডেল আইআইটি হয়ে পুনে টাটা প্ল্যান্টে গ্রামের যুবকদের সঙ্গে প্রশিক্ষণের জন্য গিয়েছিলেন রাজকুমার। কিন্তু প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ হওয়ার তিন মাস বাকি থাকতে কারখানা পশ্চিমবঙ্গ থেকে গুজরাটে নিয়ে চলে যায় টাটা গোষ্ঠী। এখন কেউ দিন মজুর বা কেউ পরিযায়ী শ্রমিক।
রাজকুমারের কথায়, ‘‘আজ আমি একপ্রকার বেকার। মাঝে মাঝে হাতে কাজ থাকে। বাকি সময়টা বসে থাকতে হয়। এই ভাবে বাঁচা যায়?’’ তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘ভাই বাইরে চলে গিয়েছে। গ্রামের বেশির ভাগ ছেলে এখন বাইরে কাজ করছে।’’
রাজকুমারের পাশেই বসে ছিলেন স্বপন ব্যানার্জি। তিনিও ইচ্ছুক কৃষকদের একজন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আজ হতাশ। জমি দিয়েছিলাম ভালো কাজের জন্য। তা হয়নি। মমতা জমি ফেরত দিলেন, কিন্তু কি ভাবে ওখানে চাষ করব? যান গিয়ে দেখে আসুন কী অবস্থা। আমরা চাই শিল্প হোক।’’
সিঙ্গুরের যে এলাকায় কারখানা হয়েছিল তা হলো বেড়াবেড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত। যাঁর মৃত্যু ঘিরে দোষারোপ করা হয়েছিল সিপিআই(এম)'কে। সেই তাপসী মালিকের বাড়ি ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যেই। তাপসী মালিকের পাড়ার পাশেই কারখানার জমি।
এ পাড়ার বাসিন্দা শেখ জালাউদ্দিন। তিনি ‘অনিচ্ছুক’ কৃষক। সত্তর পার বৃদ্ধ বাড়ির সামনে রঙ চটা একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে ছিলেন। জমি ফেরত পেয়েছেন?
- হ্যাঁ।
চাষ করেন?
- না। করে কি হবে? ওই জমিতে আর কিছু হবে না। যদি সরকার জমি বিক্রি করে দিতে চায় তবে করে দিক। কারখানা করতে হলে করুক।
Comments :0