SITARAM YECHURY

অযোধ্যায় ধর্মের রাজনীতি হচ্ছে, তাই বিরোধিতা

জাতীয়

ফাইল চিত্র

ধর্ম এবং রাজনীতির মধ্যে একটা লাইন আছে। সেই লাইন অতিক্রম করে যাওয়া লক্ষ্ণণ রেখাকে অতিক্রম করে যাওয়ার মতো বিষয়। অযোধ্যায় মন্দিরের উদ্বোধন নিয়ে ধর্মের রাজনীতিকরণ হচ্ছে। সেই কারণে আমরা এর বিরোধিতা করছি। শনিবার এক ভিডিও বার্তায় এ কথা স্পষ্ট করে বলেছেন সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। উল্লেখ্য, সিপিআই (এম) পলিট ব্যুরো আগেই বলেছিল অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণ নিয়ে ধর্মের রাজনীতিকীকরণ হচ্ছে। সিপিআই (এম) এর পরে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অযোধ্যায় মন্দির উদ্বোধনে না যাওয়ার কথা ঘোষণার পরে বিরোধীদের উপরে হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণ তীব্র হয়েছে। এরমধ্যেই এদিন সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য সামনে এসেছে। 
সিপিআই (এম) অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যাবে না বলে জানানোর পরেই হিন্দুত্ববাদীরা ‘সীতারাম’ নাম নিয়েও কটূক্তি করেছিলেন ইয়েচুরিকে। সম্ভবত সেই কারণেই এদিন ভিডিও বার্তা শুরুতেই সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, নাম আমার সীতারাম, সেই কারণেই জানি ধর্মের অর্থ কী। ধর্ম এক আত্মা ও পরমাত্মার সম্পর্ক। কোনও ব্যক্তির কাছে পরমাত্মা কী সেটা স্থির করবে সেই ব্যক্তির আত্মা, হিন্দু-মুসলিম-শিখ-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ যা সেই ব্যক্তি চান। একবার সেই ব্যক্তি এটা স্থির করার পরে অন্য কারো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। সেই কারণে ধর্ম ও রাজনীতির মধ্যে একটা লাইন আছে। সেই লাইনকে লঙ্ঘন করা লক্ষ্মণ রেখাকে লঙ্ঘণ করার মতোই বিষয়। অযোধ্যায় মন্দিরের উদ্বোধন ধর্মের রাজনীতিকরণ। ধর্মের রাজনীতিকীকরণের বিরোধিতা করেই আমরা অযোধ্যায় যাচ্ছি না। ধর্মের স্থান তার জায়গায়, যে ভাবনাকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে জুড়ে যেন খেলা না হয়। 
উদ্ধব থ্যাকারে এদিন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ২২ জানুয়ারি নাসিকের কালারাম মন্দিরে পুজো দিতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এটা অযোধ্যার রামমন্দিরের ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’র মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিনে নাসিকে রাম মহারাত্রি এবং মহাপূজার আয়োজন করা হয়েছে কালারাম মন্দিরে। সেখানে রাষ্ট্রপতি আসুন, কারণ তাঁকে অযোধ্যায় রামমন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানের দিন আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এই নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই হই হট্টগোল হওয়ার পরে শুক্রবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং মন্দির নির্মাণ ট্রাস্ট্রের নৃপেন্দ্র মিশ্র দ্রৌপদী মুর্মুকে রামমন্দিরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। যথারীতি রাষ্ট্রপতি সেই দিন যাবেন না। পরে কোনও সময়ে দিন স্থির করে যাবেন। এই নিয়েই সমালোচনা করেছেন উদ্ধব। তিনি আগেই দাবি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি থাকুন প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে।

আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের অভিষেক অনুষ্ঠানে সভাপতির আসনে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের তালিকায় রয়েছেন দেশ-বিদেশের নামজাদা ব্যক্তিত্বরা। মূল অনুষ্ঠানের এক সপ্তাহ আগেই, ১৬ জানুয়ারি থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে নানা ধরনের বৈদিক অনুষ্ঠান। টানা মহাযজ্ঞ হবে বলে জানা গেছে। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ পাত পেতে খাবেন। ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের সমাগম হবে এই উপলক্ষে। তাঁদের থাকা ও খাওয়ারও ব্যবস্থা করছে শ্রীরাম জন্মভূমি ট্রাস্ট। অযোধ্যাজুড়ে ১৪ থেকে ২২ জানুয়ারি অমৃত মহোৎসব।
উত্তর প্রদেশের আযোধ্যায় মন্দির উদ্বোধন ঘিরে এমন সাজ সাজ রবের মধ্যে তাল কেটে দিয়েছেন শঙ্কারচার্যরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে নানা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ৪ শঙ্কারচার্যকে। কিন্তু তাঁরা ওই দিন উপস্থিত থাকবেন না বলে সটান জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, মন্দির নির্মাণের কাজ এখনও অনেকটাই বাকি রয়েছে। এই অবস্থায় অসমাপ্ত মন্দিরে ভগবানের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা সনাতন ধর্মের বিরোধী।
হিন্দুদের চারটি পীঠস্থান উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠ, গুজরাটের দ্বারকা, ওডিশার পুরীর গোবর্ধনপীঠ এবং কর্নাটকের শ্রীঙ্গেরির প্রধান। তাঁরা জানিয়েছেন, সনাতন ধর্মের নিয়ম লঙ্ঘিত হওয়ায় হিন্দু ধর্মীয় গুরুরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না। কারণ অসমাপ্ত মন্দিরে ভগবান রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হিন্দু ধর্মের বিরোধী। একই সঙ্গে তাড়াহুড়ো করে রামমন্দির উদ্বোধনের বিরোধিতাও করেছেন। অসমাপ্ত মন্দির উদ্বোধন করাকে ভুল পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেছেন। শঙ্করাচার্যদের অনুপস্থিতি ঘিরে হিন্দুদের মধ্যে বিরূপ মানসিকতা তৈরি হতে পারে এই আশঙ্কা করে মোদীর হয়ে গলা ফাটাতে কয়েকজন ধর্মীয় গুরুকে এদিন ময়দানে নামিয়ে দিয়েছে বিজেপি-আরএসএস। চিদানন্দ সরস্বতী, স্বামী অবদেশানন্দ গিরি এদিন একসুরে বলেছেন, মোদীর মতো প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে আমরা গর্বিত। তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
 

Comments :0

Login to leave a comment