বামপন্থীরা নেই। ধর্ম নিয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতির সাক্ষী থাকছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা।
মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে ধরনায় বসেন বিজেপি বিধায়করা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলতে থাকেন সরস্বতী পুজো করতে না দেওয়ার প্রতিবাদ করেছেন বলে বিধানসভা থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
সোমবারও শুভেন্দু বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে তিনি হিন্দুর ভোটের জয়ী। তৃণমূলের সরকার মুসলমান সরকার।
বিধানসভায় পালটা বক্তব্য রাখতে উঠে মুখ্যমন্ত্রী আবার বিভিন্ন মন্দির এবং হিন্দু ধর্মস্থানের সংস্কার প্রসঙ্গে তাঁর সরকারের ভূমিকা নিয়ে ভাষণ দিতে থাকেন।
অনেকেই মনে করেছেন যে রাজ্যে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময়েও এমন বহু জায়গায় ধারাবাহিক সংস্কার হয়েছে। কিন্তু কোনও মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের দেখা যায়নি তার জন্য আলাদা কৃতিত্ব দাবি করতে।
মমতা বিধানসভায় বলতে থাকেন যে দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াক, জগন্নাথ মন্দির স্বামী বিবেকানন্দের পৈত্রিক বাড়ি রক্ষার মতো প্রসঙ্গ। টেনে আনেন তারাপীঠ প্রসঙ্গও। তিনি যে হিন্দুদরদি তা প্রমাণে মরিয়া হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে সন্ত্রাসবাদীদের যোগাযোগের অভিযোগকে সমালোচনা করতে থাকেন।
অথচ বিজেপি-তৃণমূলের তরজায় রোজগার, কাজ, শিল্প বা কৃষি নিয়ে তর্ক নেই।
মুখ্যমন্ত্রী যখন বিধানসভায় ভাষণ দিচ্ছেন বাইরে শোনা যাচ্ছে ‘জয় জগন্নাথ’, ‘জয় কালি’।
রাজ্যে বামপন্থীরা শক্তিশালী থাকার সময়ে ধর্ম পালন করতেন ধর্মবিশ্বাসীরা। কিন্তু রাজনীতির মূলস্রোতে তা নিয়ে রাজ্য রাজীনীতিতে শাসক-বিরোধী তরজার জায়গা ছিল না। রাজ্যের বুকে ধর্মীয় বিভাজন করে প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করা যায়নি।
এদিন রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূল বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাজ্য বাজেটে যখন কর্মসংস্থানের কোন দিশা নেই, সেই নিয়ে কথা না বলে সরস্বতী পুজো নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত বিজেপি। মঙ্গলবার বিজেপি বিধায়করা একটি জামা পড়ে বিধানসভায় প্রতিবাদ জানায় যাতে লেখা ‘আমি গর্বিত, আমি হিন্দু’।
মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে শুভেন্দু অধিকারি দাবি করেন রাজ্যে সরস্বতী পুজো করতে দেওয়া হয় না। যোগেশচন্দ্র চৌধুরি কলেজের ঘটনা নিয়ে বিধানসভায় সরব হন তিনি। তার অভিযোগ তিনি এই নিয়ে সরব হওয়ায় তাকে সহ চারজন বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে শুভেন্দু বলেন তিনি বিধানসভায় ভাঙচুর করেছেন। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিধানসভার অধিবেশন চলার সময় দল বল নিয়ে বিধানসভায় ভাঙচুর চালায় তৃণমূল। সেই দৃশ্য সাধারণ মানুষকে দেখার জন্য দুদিন বিধানসভার দরজার সবার জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন তৎকালীন অধ্যক্ষ হাসিম আব্দুল হালিম।
এদিন মমতা বলেন, ‘‘আমি কোন ভাঙচুর করিনি। একটা জিনিসেও হাত দেইনি। আমাকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না বলে দলের বিধায়করা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল।’’
সেই সময় যারা ভাঙচুর চালিয়েছিল তৎকালিন তিনজন তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারি, অর্জুন সিং এবং সোনালী গুহ এখন বিজেপিতে!
Assembly Session
ধর্ম নিয়ে রাজনীতির প্রতিযোগিতা বিধানসভায়

×
Comments :0