Review Petition

রিভিউ পিটিশনে চাকরি ফেরানো সম্ভব নয়, মানছেন মুখ্যমন্ত্রীই

রাজ্য

রিভিউ পিটিশন থেকে যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি ফেরানোর আশায় কার্যত জল ঢেলে দিলেন খোদ মমতা ব্যানার্জি!
সরকারের কাছ থেকেই বিপদটা যে আসবে তা আগাম টের পেয়েই গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন দুর্নীতির বলি যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকরা। পুলিশের মার, একাধিক মিথ্যা মামলার চারদিন পর মমতা ব্যানার্জি বললেন,,‘এখানে বাইরের লোক আছে। টিচারের সংখ্যার থেকে বাইরের লোক বেশি।’ হুমকি দিয়ে স্মরণ করিয়ে রাখলেন আন্দোলন করার ‘লক্ষণরেখা’র কথা। কিন্তু তার থেকেই উল্লেখযোগ্য ‘আমি থাকতে চাকরি যেতে দেব না’ বলা মমতা ব্যানার্জি এখন কোর্টের রায় মানবেন বলে জানাচ্ছেন। 
শিলিগুড়ি যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেখানেই তাঁকে বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষকদের নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘ আমাদের দিক থেকে আমরা রিভিউ পিটিশন করেছি। রিভিউ পিটিশন অনুমোদন হলে ভালো কথা। আমরা চাইবো, আমাদের আইনজীবীরা যাতে চাকরি থাকে চাইবেন।’ এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। তারপরই মুখ্যমন্ত্রী তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলেন,‘কিন্তু আদালত যদি কোনও সিদ্ধান্ত নেয়, আমি বলতে পারি না, মানবো না। কারণ, কোর্টের সিদ্ধান্ত আমরা মানতে বাধ্য।’ 
মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার, রিভিউ পিটিশন থেকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি খোয়ানো ২৫ হাজার ৭৫২ জনের চাকরি ফেরানোর কার্যত কোনো সুযোগ নেই। অথচ গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরপরই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে চাকরি খোয়ানো শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের আশ্বাসে ভরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। এমনকি গত ৭ এপ্রিল ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এসে চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের সামনে একরাশ ভরসা দিয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘আপনাদের(যোগ্য) তো চাকরি থেকে এখনও পর্যন্ত বরখাস্ত হয়নি। করেছে কি? কোনও নোটিস পেয়েছেন? যান না। কে যেতে বারণ করেছে? আপনি আপনার কাজ করুন। ভলান্টিয়ারি সার্ভিস সবাই দিতে পারে। সেখানে আটকানোর জায়গা নেই কারোর।’ শুনিয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ওই সভাতেই একগুচ্ছ দাবি মমতা ব্যানার্জির কাছে পেশ করেছিলেন বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল, সিবিআই চার্জশিটে বৈধ ও অবৈধ ক্যাটাগরি জানিয়েছে। তার ভিত্তিতেই বৈধদের পরিচ্ছন্ন তালিকা নিয়ে রিভিউ পিটিশনে যেতে হবে।  রিভিউ পিটিশনে যাওয়ার আগে রাজ্যের তরফেই যাতে যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা হাতে নিয়ে সরকার যায়, তা ইন্ডোরের সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত প্রস্তাব আকারে জমা দেওয়া হয়েছিল। এমনকি সরকার রিভিউ পিটিশনে যাওয়ার আগে এসএসসি, শিক্ষা দপ্তর যেন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে শীর্ষ আদালতে যান, এমন দাবিও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আলাদাভাবে রায়ের পুনর্বিবেচনার জন্য আদালতে গিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি খোয়ানো যোগ্য শিক্ষকদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি আদায় করে নিয়ে আসে। তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, এরপর রিভিউ পিটিশনে গিয়ে যোগ্য শিক্ষকদের পক্ষে ইতিবাচক রায় বের করে আনার রাস্তা কার্যত আর থাকলো না। তারজন্যই চাকরিহারা শিক্ষকদের সঙ্গে আগাম কোনও আলোচনা ছাড়াই রাজ্য সরকার রিভিউ পিটিশন দাখিল করে দেয়। 
সরকারের মতিগতি যে সন্দেহজনক তা টের পাওয়ার পর থেকেই বিকাশ ভবনের সামনে গত বৃহস্পতিবার থেকে অবস্থান শুরু করেছেন দুর্নীতির কারণে চাকরি হারানো যোগ্য শিক্ষকরা। সেই আন্দোলনকে রুখতে দিনের বেলায় তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্তকে দিয়ে আর রাতে বিধাননগর থানার পুলিশ সাইরেন বাজিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায় শিক্ষক, শিক্ষিকাদের ওপর। ঘটনার পর থেকে টুঁ শব্দটি শোনা যায়নি মমতা ব্যানার্জির কাছ থেকে। পুলিশের বেপরোয়া মার, তারপর একাধিক ধারায় মামলার পর এদিন প্রথম মুখ খুলে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘এখনও পর্যন্ত তো কারুর মাইনে বন্ধ হয়নি। এমনকি গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, যারা টাকা পাবে না, তাদের জন্য স্কিম তৈরি করে টাকা দেওয়া হচ্ছে। ওদের রাজ্য সরকারকে বিশ্বাস করা উচিত ছিল। আমি ওদের সঙ্গে মিটিং করেছি। শিক্ষকদের কাছ থেকে সম্মান, সৌজন্য আশা করি।’
কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে এরাজ্যে আন্দোলনকারীদের যে ভাষায় পরামর্শ দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি ঠিক সেইভাবেই রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের সচিবালয় বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘এখানে (বিকাশ ভবন) না করে আইনি লড়াই করুন। আমরা সাধ্যমতো সাহায্য করবো।’

Comments :0

Login to leave a comment