Adenovirus

একদিনে রাজ্যে মৃত্যু ৮ শিশুর

রাজ্য

Adenovirus


ক্রমশ আরও ভয়াল ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে ভাইরাস সংক্রমণ। ব্যাপক আকারে শুরু হয়েছে শিশু মৃত্যুর মিছিল। গত ৭ দিনেই ২২ টি শিশু মারা যাওয়ার খবর মিলেছে। বুধবার কলকাতা ও বাঁকুড়া মিলে আরও ৮টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিভাবকদের কান্না আর হাহাকারে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। সরকারি হাসপাতালগুলির বেহাল পরিকাঠামোকে দায়ী করেছেন তাঁরা। চলতি মরসুমে অর্থাৎ গত ২ মাসে অ্যাডিনো ভাইরাসের আধিক্যে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ৫০-এর আশেপাশে বলে জানা যাচ্ছে। সরকারিভাবে মোট শিশু মৃত্যুর কোনো পরিসংখ্যান সামনে না এলেও বিভিন্ন বেসরকারি সূত্রে বর্তমানে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। 


কলকাতা সহ জেলায় প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই অত্যধিক ভিড়। একইভাবে চলছে বেডের হাহাকার। বেড মিলছে না শিশুদের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটগুলিতে। বেশিরভাগ সময়ে একই বেডে থাকতে হচ্ছে ২-৩ জনকে। বিভিন্ন হাসপাতালে চরম অভাব দেখা দিচ্ছে ভেন্টিলেটর সহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের। ফলে তীব্র শ্বাসকষ্টের কোনো সুরাহা হচ্ছে না শিশুদের, ফুসফুস ও শ্বানালী সংক্রমিত হয়ে নিউমোনিয়ায় পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে ঘরে ঘরে জ্বর ও কাশি নিয়ে শয্যাশায়ী অসংখ্য মানুষ। কবে মিলবে সম্পূর্ণ পরিত্রাণ তা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা।  


মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত কলকাতায় ৬টি ও বাঁকুড়া থেকে ২টি শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে। মঙ্গলবার রাতে বিসি রায় হাসপাতালে মারা গেছে এক আড়াই বছরের এক শিশু। এই মৃত্যুর পরেই উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা হাসপাতাল চত্ত্বর। ক্ষোভে ফেটে পড়েন ওই শিশুর অভিভাবক পরিজন সহ অশোক নগরের বাসিন্দারা। হাসপাতালে সুষ্ঠু পরিকাঠামোর অভাবের অভিযোগ করেন তাঁরা। অবস্থা খতিয়ে দেখতে বুধবার তড়িঘড়ি বিসি রায় হাসপাতালে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব। এছাড়া সাড়ে ৩ বছরের এক শিশু এদিন মারা গেছে বিসি রায় হাসপাতালে। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকায় শিশুটিকে প্রথমে ভর্তি করা হয় হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। পরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় কলকাতায় বিসি রায় শিশু হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানেই বুধবার সকালে তার মৃত্যু হয়। 


এদিন বিসি রায় শিশু হাসপাতালে মারা গেছে বারাসাতের এক সদ্যোজাত শিশু। তাকেও বারাসাতের একটি হাসপাতাল থেকে রেফার করে দেওয়া হয় শ্বাসকষ্টের সমস্যা অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ার ফলে। বুধবার ভোরে তার মৃত্যু হয়েছে। কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে নিউমোনিয়া। জানা গেছে বুধবার দুপুরে আরও একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে এই হাসপাতালে। ক্যানিং-এর বাসিন্দা এই শিশুটিও ভুগছিল তীব্র শ্বাসকষ্টে। অন্যদিকে এদিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে হুগলির এক ৭ মাসের শিশু। বেশ কিছুদিন ধরেই জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল সে। সমস্যা ছিল হার্টেরও। প্রথমে ইমামবাড়া হাসপাতালে ও পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। এছাড়া এদিন হাওড়া বাগনানের বাসিন্দা এক শিশু মারা গেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। এক মাসও পার হয়নি তার বয়স। জানা গেছে উলুবেড়িয়ার হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছিল শিশুটিকে। তার নমুনা পরীক্ষায় অ্যাডিনো ভাইরাস পজিটিভ মিলেছে। 


অন্যদিকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই শিশুর মৃত্যু হল। তাদের বয়স ১ ও ৫ মাস। এদিন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডাঃ সপ্তর্ষী চ্যাটার্জি এ খবর জানান। তিনি জানান, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে এই ঘটনা ঘটেছে। শিশু দুটির পরিচয় জানা যায়নি। এদিন জানা গেছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৬৬ জন অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৮জন ‘পিকু’তে ভর্তি আছে। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই বাঁকুড়ায় একটা আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। এদিন হাসপাতালের সুপার জানান, শিশু মৃত্যুর ঘটনায় শিশু বিভাগের সমস্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বুধবার থেকেই বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ আর আই ক্লিনিক খোলা হল। আগামী দু তিন দিনের মধ্যে বহির্বিভাগেও এ আর আই এর জন্য পৃথক টিকিট কাউন্টার খোলা হবে।

 জানানো হয়েছে ওন্দা, ছাতনা, বড়জোড়া সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল গুলির উপরও নজরদারী চালানো হবে। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত এখান থেকে অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত কোন শিশুকে বাইরে পাঠানো হয়নি। যদি পাঠাতেই হয় তাহলে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপারের মাধ্যমেই পাঠাতে হবে। অন্য হাসপাতাল গুলি থেকে হলে সংশ্লিষ্ট ব্লক স্বাস্থ্যআধিকারিকদের মাধ্যমে যেতে হবে। এর পাশাপাশি জনগনের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উপরও জোর দেওয়া হচ্ছো বলে জানানো হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment