Bangladesh

শেখ মুজিবের জন্মদিনে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল

আন্তর্জাতিক

মীর আফরোজ জামান- ঢাকা 
শেখ মুজিবুর রহমান-এর ১০৫তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ১৭ মার্চ। ১৯২০ সালের এই দিনে তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিব নামের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুন। চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়।
শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গিপাড়ার চিরায়ত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আবেগ-অনুভূতি শিশুকাল থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাঁকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতো। শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজ জীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা পীড়ন দেখে চরমভাবে ব্যথিত হতেন। কিশোর বয়সেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় আজীবন সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রা। তিনি সারাজীবন এদেশের মাটি ও মানুষের অধিকার আদায় ও কল্যাণের জন্য সংগ্রাম করেছেন। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জীবনের ১৪টি বছর পাকিস্তানি কারাগারের বন্দি থেকেছেন, দুই বার ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু আত্মমর্যাদা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কখনো মাথা নত করেননি। দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪- এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২- এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬- এর ছয়-দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তাঁর সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপোষহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে শত বছরের নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করলেন, ‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’’
৭ মার্চে শেখ মুজিবুর রহমান এই ঐতিহাসিক ঘোষণার পর দেশজুড়ে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন শেখ মুজিবুর রহমান। মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মদান ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রাতে নির্মম বুলেটে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির দূত এবং স্বাধীনতা ও শান্তির প্রতীক। 
শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫ তম জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকায় ঝটিকা মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সোমবার সকালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে আয়কর বিভাগ কর অঞ্চলের সামনে দিয়ে এই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মিছিল শেষে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিলে ‘শুভ শুভ শুভ দিন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন’, কে বলে রে মুজিব নাই, মুজিব সারা বাংলায়’, ‘এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে’, ‘শেখ শেখ শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু সহ নানান স্লোগান দিতে থাকেন। মিছিল শেষে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বলেন, এই অবৈধ সরকারের গ্রেপ্তারের আতঙ্কে আমরা ঝটিকা মিছিল করতে বাধ্য হয়েছি। দেশব্যাপী আমাদের হাজারও নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তবে এই সরকার যাই করুক, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে। এছাড়া ও বাংলাদেশের অনেক স্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ঝটিকা মিছিল হয়েছে।
মিছিলকে কেন্দ্র করে এদিন দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতি তারেকুল ইসলামের বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। যদিও  পরিস্থিতি সামাল দেন স্থানীয়রাই।
আওয়ামী লীগের মিছিলের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ছয় নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। পুলিশের পক্ষথেকে বলা হয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ঝটিকা মিছিল করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জনসাধারণকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করেছে। আটক ৬ জনসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় সন্ত্রাসবিরোধী মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।
বর্তমান ইউনুস সরকারের ও সমন্বয়কদের হুমকির কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাইরে এসে অনুষ্ঠান পালন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাও হুমকির মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। সেই ক্ষেত্রে ১৭ মার্চ পালন হচ্ছে না। রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অসীম কুমার পাল অজ্ঞাত স্থান থেকে জানান, তাদের নেতাকর্মীরা ভয়ে কেউ বের হতে পারছেন না।

Comments :0

Login to leave a comment