JBCSSR North Bengal

বাঁচাতে হবে উত্তরবঙ্গকে: অঙ্গীকার জেবিসিএসএসআর’র মতবিনিময় চর্চায়

রাজ্য জেলা

দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি

উত্তরবঙ্গের জল জমি জঙ্গল চা বাগানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করেই উত্তরবঙ্গের অর্থ সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। 
শনিবার জলপাইগুড়ি শহরের রবীন্দ্র ভবনে জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় জানিয়েছে এই লক্ষ্য। আলোচনা করেছেন জেতা সাংকৃত্যায়নের মতো বিশেষজ্ঞরা, পরিবেশবিদরা। থেকেছেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরাও।
কেবল বিশেষজ্ঞদের আলোচনাই নয়। ছিল যোগ দেওয়া বিভিন্ন অংশের আলাদা করে ‘গ্রুপ ডিসকাশন’। মতবিনিময় হয়েছে অভিজ্ঞতার, আন্দোলনেরও। 
মুনাফার লোভে প্রকৃতির লুট চলছে বিশ্বে, দেশে, রাজ্যে। সেই পটভূমিকায় এই উদ্যোগে লুট রোখার লক্ষ্য জানান চা-বাগান আন্দোলনের নেতা এবং সিআইটিইউ রাজ্য সম্পাদক জিয়াউল আলম। 
আর সমাপ্তি ভাষণে জ্যোতি বসু সমাজচর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষে দেবাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছে যে সব অংশকে জুড়ে নিয়ে তাঁদের কথা শোনার চেষ্টা হয়েছে। তার মধ্যে বনবস্তির বাসিন্দারা রয়েছেন। রয়েছে ‘প্ল্যান্টার্স’-রা। চা বাণিজ্যের পরিচালকদের মতামতও শোনা হয়েছে। 
চা বাগানের মালিক থেকে শ্রমিক, পরিবেশ প্রেমী, অধ্যাপক, গবেষক, সমাজকর্মী  সকলেই একবাক্যে স্বীকার করলেন যে পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন নয়। গণ প্রতিরোধের মধ্য দিয়েই রুখতে হবে উন্নয়নের নামে উত্তরবঙ্গের জল জমি জঙ্গল লুট। পাথর পাহাড় বনভূমি কৃষি জমি লুঠেরাদের রুখতে প্রয়োজনে গণপ্রতিরোধকে গণআন্দোলনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। 
আলোচনায় এসেছে যে উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে বাঁচাতে হলে বাঁচাতে হবে এখানকার বন্যপ্রাণ, বনবস্তি, নদীর পাড়ের গ্রামবাসীদের জীবন, নদীয়ালি মাছ, কিট,পতঙ্গ সহ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষাকারী সকল উপাদানকে। শ্রমিকদের ভিন রাজ্যের এমনকি ভিন দেশে কাজে যাওয়ার হিড়িক আটকাতে, উত্তরের জনগোষ্ঠীর বিস্তারকে ধরে রাখতে, বাঁচাতে হবে ২০০ বছরের পুরনো  চা শিল্পকে। পাশাপাশি সহনশীল পর্যটনের পর্যটনের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বক্তব্য রাখেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রফেসর জেতা সাংকৃত্যায়ন, কনজারভেটর অফ ফরেস্ট বালামুরুগান কালিয়ামূর্থি, চা শিল্পের সাথে জটিত জীবন চন্দ্র পান্ডে, সুভাষ মুখার্জি, ইন্ডিয়ান চেম্বারস অফ কমার্সের প্রবীর ভট্টাচার্য প্রমুখ।


উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক পরিবেশের তারতম্য এবং আর্থসামাজিক পরিবেশে চাহিদাকে মাথায় রেখে কখনো আনারস কখনো চা কখনো পাট কখনো ধান কখনো ভুট্টা সহ বিভিন্ন ফসল শাকসব্জি চাষ হয়েছে। আবার কখনো এই সমস্ত চাষ থেকে সরে এসে চা চাষের এলাকা বলে পরিচিত তরাই ডুয়ার্সের পাহাড়ি ঢালু জমি ছেড়ে কৃষক অন্যান্য চাষ থেকে সরে এসে চা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এক সময় উত্তরবঙ্গের বিরাট সংখ্যক চা বাগান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন কারণে তখন অনেকেই মনে করেছিলেন চা শিল্পে আকাল শুরু হয়েছে সময়টা ছিল ৯০-র দশকের শেষের দিক থেকে শুরু করে ২০০৩ সাল পর্যন্ত।। আবার ধীরে ধীরে সরকারি নীতি চা শিল্পের সাথে যুক্ত চা শ্রমিক মালিক সকল পক্ষকে একত্রিত করে পরিকাঠামগত ও বাজারগত উন্নয়নের পরিকল্পনাকে বাস্তবের মাটিতে সফল রূপে রূপায়িত করে। ২০০৪ সাল থেকে পরিস্থিতির ধীরে ধীরে বদল ঘটানো সম্ভব হয়। বর্তমানে উত্তরবঙ্গের ৪২ ডিগ্রি থেকে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা পৌঁছে যাওয়া চা গাছ চাষ শ্রমিক এবং চায়ের সাথে যুক্ত সমস্ত অংশের মানুষের চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। ক্রমাগত উত্তরবঙ্গের নদী থেকে বালি পাথর লুট করা, ভুটান থেকে পাহাড়‌ ফাটিয়ে ডলোমাইট নিষ্কাশন হচ্ছে। নদীর জলে মিশে ক্ষতি করছে উত্তরবঙ্গের চাষবাস এবং নদীতে বসবাসকারী কীটপতঙ্গ নদীয়ালী মাছ সহ হারিয়ে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গের পরিচিত জীব বৈচিত্র্য।

Comments :0

Login to leave a comment