Opposition meet in Bengaluru

‘আমরা ঐক্যবদ্ধ’ স্লোগানেই শুরু হলো বিরোধীদের বৈঠক

জাতীয়

‘আমরা ঐক্যবদ্ধ’ স্লোগানকে সমানে রেখেই বিজেপি বিরোধী দলগুলির দু’দিনের বৈঠক শুরু হলো বেঙ্গালুরুতে। সোমবার একপ্রস্থ আলোচনা করেছেন দেশের ২৬ বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ। আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি-কে হটাতে যৌথ কর্মসূচি নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তাই হয়েছে এদিন। এনিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হবে মঙ্গলবার। বিজেপি বিরোধী দলগুলির দ্বিতীয় বৈঠকের আহ্বায়ক কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এদিন পরিষ্কার বলা হয়েছে, বিরোধীদের এই ঐক্য ভারতীয় রাজনীতির ‘খেলা ঘুরিয়ে দেবে’ সম্পূর্ণভাবে।
বিরোধীদের বৈঠককে ঘিরে সাজ সাজ রব বেঙ্গালুরু জুড়ে। সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরি সহ একাধিক বিরোধী নেতা এবং বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের ছবি সংবলিত বিরাট বিরাট কাটআউট ছেয়ে গিয়েছে শহরময়। এরই সঙ্গে ২৬ দলের নেতাদের ছবি সহ ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ’ লেখা লম্বা ব্যানারও চোখে পড়ছে সর্বত্র। এবারের বৈঠকের বাড়তি আকর্ষণ কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর উপস্থিতি। পাটনায় প্রথম বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী না থাকলেও এবারে তিনি বিরোধী নেতাদের এদিন নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এই নৈশভোজের আগেই বিরোধী নেতারা ঘরোয়াভাবে আলোচনা সেরে নেন। এমনিতেই এদিন সকাল থেকে একে একে বিরোধী নেতারা বৈঠকে যোগ দিতে হাজির হতে থাকেন বেঙ্গালুরুতে। সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বিশেষ বিমানে সকালে এখানে এসে পৌঁছান। সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সকালে এসে তৃণমূল কংগ্রেস নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবও দেন। বিজেপি বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীরাও চলে এসেছেন। অসুস্থতা উপেক্ষা করে বৈঠকে হাজির হয়েছেন আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবও। এদিন এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার আসতে না পারলেও জানা গিয়েছে মঙ্গলবার সকালে মেয়ে সুপ্রিয়া সুলেকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হবেন বৈঠকে। উল্লেখ্য, পাটনার বৈঠকে ১৫ দল উপস্থিত থাকলেও এবারে হাজির হয়েছেন ২৬ দলের নেতৃবৃন্দ। বিজেপি বিরোধিতার পরিসর বাড়ছে, তা এই উপস্থিতি থেকেই স্পষ্ট। এমনকি কংগ্রেসের সঙ্গে দিল্লির অর্ডিন্যান্স নিয়ে মতভেদ থাকলেও পরে শতাব্দী প্রাচীন দলটি আপ’র পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বৈঠকে যোগ দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও।
জানা গিয়েছে, এদিন ঘরোয়া আলোচনায় সিপিআই(এম) সহ বামপন্থীদের আনা অভিন্ন কর্মসূচির প্রস্তাবে সম্মতি জানান সমস্ত বিরোধী নেতারা। প্রস্তাবে স্পষ্টতই ‘দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান এবং ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষায়’ দেশজুড়ে ‘রাজনৈতিক প্রচার’ চালানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্বের মতো জীবন জীবিকার জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলার কথাও বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যের রাজনৈতিক বাস্তবতার ভিত্তিতে আসন সমঝোতার কথাও বলেছে বামপন্থীরা। বিভিন্ন নেতারা বামপন্থীদের প্রস্তাবে সায় দেওয়ার পাশাপাশি বিজেপি-কে হটাতে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের লক্ষ্যে যতটা সম্ভব বিরোধী ভোট ভাগাভাগি প্রতিরোধের ওপর জোর দেন। একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মসূচিভিত্তিক পৃথক পৃথক সাব কমিটি তৈরি করা হবে। এর মধ্যে অভিন্ন কর্মসূচির খসড়া তৈরি, বিভিন্ন দলের মধ্যে সমন্বয়, যৌথ প্রচার কর্মসূচি (যার মধ্যে সমাবেশ বা কনভেনশন থাকবে) নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এসব নিয়ে আলোচনা হবে মঙ্গলবার। তবে একটা বা দুটো বৈঠকেই সব বিষয়ে সর্বসম্মত হয়ে যাবেন সবাই, এমনটা মনেও করছেন না বিরোধী নেতারা। এপ্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল বলেছেন, ‘‘কোথাও কোন দল কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তা ঠিক করতে আরও আলোচনা করতে হবে।’’ আসন সমঝোতা কিংবা একের বিরুদ্ধে এক লড়াই করা সম্ভব কী না, তা নিয়েও আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন। এই বৈঠকে যোগ দিয়েছে এমন অনেক দলের মধ্যে রাজ্যস্তরে তীব্র মতভেদ আছে। সেসব মতানৈক্য যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রূপরেখা রূপায়ণে বদ্ধপরিকর বিরোধীরা বলে জানাচ্ছে কংগ্রেস।
পাটনার বৈঠকে যে ১৫টি দল উপস্থিত ছিল তাদের সঙ্গে এই বৈঠকে আরও ১১ দল যুক্ত হয়েছে। এমডিএমকে, কেডিএমকে, এমএমকে, ভিসিকে, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, আইইউএমএল, কেরালা কংগ্রেস (যোসেফ), কেরালা কংগ্রেস (মানি)-র পাশাপাশি আরও কয়েকটি ছোট দলকে ডাকা হয়েছে বৈঠকে।
ওদিকে, বিরোধীদের বৈঠকের দিনই এনডিএ’র বৈঠক ডাকার ঘটনাকে কটাক্ষ করে এদিন কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে বলেছেন, ‘কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী রাজ্যসভায় বুক ফুলিয়ে দাবি করেছিলেন যে, বিরোধীদের সামলাতে তিনি একাই যথেষ্ঠ। তিনি একাই যদি সামলে নিতে পারতেন তাহলে বিরোধীদের আটকাতে এখন ৩০ দলকে নিয়ে এনডিএ’র বৈঠক ডাকতে হচ্ছে?’ খাড়গে এরই সঙ্গে ওই ৩০ দলের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, এরা কারা? ওদের নাম জানাক। আমরা নির্বাচন কমিশনে খোঁজ নিই ওই দলগুলি আদৌ আছে কী না? একই দিনে বিজেপি’র বৈঠক ডাকা নিয়ে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের শ্লেষাত্মক মন্তব্য ‘‘আসলে ওই বৈঠক ডেকে এনডিএ’র নতুন জীবন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এনডিএ অচিরেই ‘ভূত’ হয়ে যাবে।’’

 

Comments :0

Login to leave a comment