General elections 2024

রাজ্যে দ্বিমেরুর ভোট নয়, তাই বাম-কংগ্রেসকে আক্রমণে মোদী,বিমান বসু

কলকাতা লোকসভা ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচন আর বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে দ্বিমেরু নির্বাচন হচ্ছে না। সেই জন্যই মোদীকে এরাজ্যে এসে বাম ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে হচ্ছে। ৪ জুন ভোটের ফল বের হলে বাম কংগ্রেসের ফলাফল দেখে অনেকেই বলতে বাধ্য হবেন, এমনটা তো ভাবতেও পারিনি। শুক্রবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু একথা বলেছেন। 
এরাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি যে মিথ্যাচারের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক এবং লুটের রাজনীতি চাপিয়ে মেরুকরণ করেছিল সেটাকে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস আসন বোঝাপড়া করে নির্বাচনী সংগ্রামে ধাক্কা দিতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন বিমান বসু। তৃণমূল এবং বিজেপি আগে বাম কংগ্রেসকে শূন্য বলে অবজ্ঞা করতো, চোখে দেখা যাচ্ছে না বলতো। এখন চোখে দেখতে পাচ্ছে বলেই বুঝতে পারছে রাজনীতির হিসাব এত সহজ নয়, শূন্য আর শূন্য নেই। 
বিমান বসু বলেন, প্রধানমন্ত্রী অমৃতকালের প্রচার করেছিলেন। বলেছেন ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’। তার নমুনা দেখা যাচ্ছে। মাথাপিছু আয়ে ভারত ২০১৪ সালে ১২০টি দেশের মধ্যে ৫৫ নম্বরে ছিল। এখন নেমে গিয়েছে ১১১ নম্বরে। দেশের ১ শতাংশ মানুষের হাতে দেশের ৪০ শতাংশ সম্পদ। আর নিচের তলার ৫৫ শতাংশের হাতে মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ। তিনি বলেন, মুখে রক্ত জমে থাকলে তাকে অসুখ বলে, উন্নয়ন বলে না। উন্নয়ন করতে হলে সম্পদের বণ্টন দরকার। 
বিমান বসু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এ রাজ্যে তৃণমূলের ইশ্‌তেহারেও মিথ্যার ঝুলি। যে আরএসএস জনসঙ্ঘ এবং বিজেপি’কে তৈরি করেছিল, তারাই পশ্চিমবঙ্গ থেকে বামফ্রন্ট সরকারকে হটাতে পরিকল্পনা ও পরামর্শ দিয়ে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল তৈরি করেছিল। আরএসএস হলো তৃণমূলের দাই মা।
এবারের নির্বাচনে দেশকে বাঁচাতে বিজেপি’কে পরাস্ত করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বসু বলেছেন, মোদী ফের সরকার গড়লে সংবিধান বদলানো হবে। গোয়েবলসীয় প্রচার চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সমাজে বিভাজন করছেন ভোট পাওয়ার জন্য। কৃষ্ণনগরের রাজাকে নিয়ে অনৈতিহাসিক কথা বলছেন। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলও ভিন রাজ্যের মানুষের বিরুদ্ধে, অবাঙালিদের বিরুদ্ধে প্রচার করে ভাষার ভিত্তিতে বিভাজনের চেষ্টা করছে। বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, জনজীবনের সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আর এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে কোনও কথা নেই। আমরাই সেকথা তুলে মানুষকে বলছি, আম আদমির কথা সংসদে তুলে ধরতে বাম কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়ী করুন।
বসু বলেছেন, তৃণমূল যে মিথ্যা প্রচার করছে তা ওদের দলের মুখপাত্রের কথাতেই স্পষ্ট। মুখপাত্র এখন বলছেন যে ২০২১ সালের আগেই চাকরি দুর্নীতি সম্পর্কে দল সব জানত। তাই তখন পার্থ চ্যাটার্জিকে শিক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরানো হয়েছিল। অথচ মুখ্যমন্ত্রী বলছেন তিনি এই দুর্নীতির বিষয়ে জানতেন না। তা’হলে মন্ত্রীসভার বৈঠক করে সুপার নিউমেরিক পদ তৈরি করেছিলেন কেন? নবান্নে বসে অযোগ্যদের চাকরি রাখার জন্য এই ভজঘট বন্দোবস্ত করা হয়েছিল, আর এখন নবান্নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গার জলে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইলেই হবে? 
তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী চাকরি নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। তৃণমূল সন্দেশখালিতে গরিবের জমি কেড়ে নিয়ে ভেড়ি করেছে। রাজ্যজুড়ে বালি কয়লা চাকরি সবকিছু চুরি করেছে। এরাজ্যে তীব্র গরমের এই অবস্থা কেন? সমানে জঙ্গল সাফ করা, জলাভূমি বোজানো, এসব করে আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। তোলাবাজিতে রাজ্য থেকে শিল্প উঠে গিয়েছে। সেই জন্যই আমরা বলেছি, দেশ বাঁচাতে বিজেপি’কে একটি ভোটও নয়, রাজ্যকে বাঁচাতে তৃণমূলকে একটি ভোটও নয়।
অন্যদিকে তৃণমূল এবং বিজেপি বিপাকে পড়ে এখন বাম কংগ্রেসের ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে রাম-বাম বলে কিংবা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরির বয়ান সাজিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে। এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু বলেছেন, অধীর চৌধুরি কখনোই বিজেপি’কে ভোট দিতে বলেননি। বরং মোদী এখানে এসে বাম কংগ্রেসের বিরোধিতা করে গেছেন। আর রাম-বামের প্রচারও তৃণমূল এবং বিজেপি’ই করেছে, আমরা ওদের দুটোরই বিরোধিতা করেছি। 
বামফ্রন্টের এই লড়াইতে তরুণ প্রজন্মের এগিয়ে আসাকে ইতিবাচক লক্ষ্মণ বলে বর্ণনা করেছেন বিমান বসু। তিনি বলেছেন, লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্ম গড়ে উঠছে, তাদের অনেকে এখন লড়াইয়ের সামনের সারিতে আছেন, অনেককে আমরা প্রার্থীও করেছি। সব জেলায় ঘাম ঝরিয়ে লড়াই করছে তারা। 
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এর পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে কিনা সেসব না জেনে আমি কোনও মন্তব্য করবো না। 
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পছন্দমতো নির্বাচন কমিশন গড়ে তোলা হয়েছে। এখন তারা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ শুনেও শুনতে পাচ্ছে না, কানে তুলো গুঁজেছে। ভোটগ্রহণের পরে জানাচ্ছে ভোটের হার বেড়ে গেছে। যদি পরে সংরক্ষিত ইভিএমে ভোট বাড়ানো হয়ে থাকে তাহলে কিন্তু সেটা ভয়ঙ্কর ঘটনা।
 

Comments :0

Login to leave a comment