নিজেকে, পরিবারকে, দলের কিছু বাছাই করা নেতাকে বাঁচাতে রাজ্যকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বাজি খেলছেন। রাজ্যের মানুষের ঐক্য, রাজ্যের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এমনকি রাজ্যের ঐক্য নিয়েও বাজি খেলছেন উনি। শুক্রবার বর্ধমানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিযোগ করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
উত্তরবঙ্গকে আলাদা করে ভাগ করবে বলে মোদী, অমিত শাহ’র ইচ্ছাকে সফল করতে দার্জিলিংয়ে মমতা প্রাক্তন রাজ্যপালকে নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। জম্মু-কাশ্মীরের মতো উত্তরবঙ্গকে কাঁটা ছেড়া করে ঔপনিবেশিক কায়দায় দেশের ঐক্যকে ভাঙার চেষ্টা করছে। মিডিয়াও রাজ্য ভাগ নিয়ে নানা ভাবে প্রচার করে। নিজের শাসন ও শোষণ বজায় রাখার জন্যই রাজ্য ভাগ করতে চায় শাসক। আমরা রাজ্য ভাগের বিরোধী।
সেলিম প্রশ্ন তোলেন যে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে কী হলো? তিনি বলেন, একমাত্র দেখা গেলো পরের দিন ইডি, সিবিআই’র হাত থেকে অনুব্রত রাজ্য পুলিশের হেফাজতে। লক্ষ্য অনুব্রতের দিল্লি যাওয়া আটকানো। কারণ জেরা করলে অনেক কিছু বের হয়ে যাবে। রাজ্য নিরাপত্তার জন্য নয়, মানুষের নিরাপত্তার জন্যও নয়। উনি নিজে ও তাঁর পরিবারের জন্য আপস করছেন।
আমরা মানুষের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছি। বিজেপি-তৃণমূলের মিডিয়া বাইনারি, নকল যুদ্ধ আমরা ফাঁস করব। আগামী দু-মাস ধরে আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামে আরো তীব্র হবে বড় রাস্তা থেকে ছোট রাস্তা, সাঁকো, গ্রামীণ পথ পেড়িয়ে মানুষের উঠানে পৌঁছে যাবো।
তিনি বলেন, চোর ধরো জেল ভরো এই স্লোগান নিয়ে আমরা মানুষের কাছে গিয়ে ছিলাম। আমরা চোরের নাম বলিনি। কিন্তু মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। চোরকে বাঁচানোর জন্য বিজেপি’র ভূমিকা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, মোদীর শাসনে অপরাধীরা কেউ শাস্তি পায়নি। তোলাবাজদের কাছ থেকে বাড়তি তোলা আদায় করেছে বিজেপি। এমএলএ, এমপি কেনাবেচা হচ্ছে। পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে টাকার হাত বদল সঙ্গে সঙ্গে নেতা বদলও চলবে।
মহম্মদ সেলিম এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, আরএসএস’র কর্মসূচিই মমতা এ রাজ্যে প্রয়োগ করছেন। গোটা দেশের সমস্ত নদীর, নাব্যতা, সেচের টাকা নিয়ে একটা দপ্তর গঙ্গা দপ্তর করা হয়। আমাদের রাজ্যে মালদায়, জলঙ্গী নদীতে ভাঙনে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁদের পুর্নবাসন দেওয়া হচ্ছে না। সমস্ত টাকা নিয়ে বেনারসে ট্যুরিস্ট স্পট করেছে। ২২ হাজার কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে। সংসদে তদন্ত কমিটি এ নিয়ে রিপোর্টও দাখিল করে। কিন্তু সেই রিপোর্ট গায়ের জোরে পাস করতে দেয়নি সংসদে। সেই মোদীর সাথেই আপোস করে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, লোক দেখানো গঙ্গা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। কলকাতায় এর বৈঠক হবার কথা। আমরা রাজ্য জুড়ে ভাঙন রোধে আন্দোলন করছি। নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। নদী বাঁচানোর জন্য মানুষকে সংগঠিত করব। কারণ নদী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে, নদী বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। রাজ্যে সর্বত্র দামোদর সহ একাধিক নদীতে অবৈধ বালি খাদান করে বালি লুঠ হচ্ছে।
গত ১১ বছরে পরপর কৃষক আত্মহত্যা করেছেন ঋণের দায়ে, কাজ না পেয়ে যুবকও মরছেন। তিনি বলেন, বিধবা, বার্ধক্য সহ সব ভাতা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। এমনকি ইমাম ভাতা নিয়েও শাসকদল দুর্নীতি করেছে।
তিনি জানান, রাজ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়িতেই পৌঁছেছেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। মানুষের জীবন যন্ত্রনার কথা শুনতে সব মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা হবে।
তিনি বলেন, গ্রামকে জাগানো ও চোরকে তাড়ানো এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। দুর্নীতির বিরুদ্ধে গ্রামকে জাগাতে গিয়ে যদি দু-চারটে বিজেপি জেগে যায় তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তৃণমূল-বিজেপি’র সঙ্গে একসঙ্গে আন্দোলন করার কোন প্রশ্নই নেই।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও ছিলেন পার্টির পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন, পার্টি নেতা অপূর্ব চ্যাটার্জি প্রমুখ।
Comments :0