WPL WOMEN'S DAY

ধর্ষণ-খুনে দোষীদেরও মালা
পরানো হচ্ছে ‘নতুন’ ভারতে

জাতীয় খেলা

WPL WOMENS DAY

দীপাঞ্জনা দাশগুপ্ত দে

টাকার অঙ্ক একটি সূচক তো বটেই। টাকার অঙ্কই বলছে কী বিপুল জনপ্রিয়তা মহিলা প্রিমিয়ার লিগ ডব্লিউপিএল’র। গড়ে একেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির নিলাম হয়েছে ৭৪১ কোটিতে। সবে শুরু, তবে তার মধ্যেই তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন হরমনপ্রীতরা। 

যে দেশে মহিলাদের ক্রিকেট লিগ হয়, বাস্তব হলো, সে দেশেই বিলকিস বানোর ধর্ষণ, তাঁর সন্তানকে খুনে দোষীদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হয়। হাথরসে দলিত কন্যা ধর্ষণে অভিযুক্তরা ছাড়া পায়, সংবর্ধনাও জুটে যায়! 

সে দেশেই, যে দেশের রাষ্ট্রপতি মহিলা। যে দেশে প্রধানমন্ত্রী দিচ্ছেন নতুন ভারতের স্লোগান। দিচ্ছেন ‘বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও’ স্লোগান।

ক্রিকেটে অত্যন্ত জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট আইপিএল। ২০২৩’এ নতুন সংযোজন মহিলা ক্রিকেটারদের জন্য ডব্লিউপিএল বা উইমেন প্রিমিয়ার লিগ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই ভারতীয় মহিলারা দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলেন। ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামী একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন সে সময় খেলার জন্য তাঁদের নিজস্ব জার্সি ছিল না। পুরুষ ক্রিকেটারদের পুরনো জার্সিতে নিজেদের নাম লিখে খেলার মাঠে নামতেন তাঁরা।

 

কিন্তু সেই সময় থেকে অনেকটাই এগিয়েছে মহিলা ক্রিকেট দল। নিজেদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই ক্রিকেট দুনিয়ায় নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটাররা। চলতে চলতে এখন মহিলা ক্রিকেটেও প্রিমিয়ার লিগ। প্রথম বছরেই যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে ডব্লিউপিএল।

কথা হচ্ছে মহিলাদের অগ্রগতী নিয়ে খেলায়, লেখাপড়ায়, গবেষণা, রাজনীতিতে মহিলারা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে জনপ্রিয়তার সঙ্গে কাজ করছেন। সারা বিশ্বে মহিলারা নিজেদের অধিকারের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ইরানে নিজের ইচ্ছেয় স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার লড়াই লড়ছে। হিজাব পড়া বা না পড়া সেটা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হওয়া উচিৎ, সরকার চাপিয়ে দেবে কেন, প্রশ্ন তুলেছেন সে দেশের মেয়েরা। 

বেশ কয়েক বছর আগে দিল্লির শাহিনবাগে ভারত দেখেছে মহিলাদের লড়াই। সেখানে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার লড়াই চেয়েছে শাহিনবাগ, ধর্মের বিচারে নাগরিকত্বের শর্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে। 

আফগানিস্থানে মহিলারা ভয়ঙ্করভাবে নিপীড়িত, শোষিত। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনার স্বাধীনতা টুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তারই মধ্যে আন্তর্জাতিক মহিলা শ্রমজীবী দিবসে রাস্তায় নেমে নারী বিরোধী তালিবান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামলেন বেশ কয়েকজন মহিলা। যে তালিবান পুরুষ সঙ্গী ছাড়া মহিলারা রাস্তায় বেরলে তাঁদের চাবুক মারে, সেই তালিবান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস, কম কথা! ভয় সন্ত্রাস যে কখনও আটকে রাখতে পারে না ব্যক্তিসত্ত্বাকে।

এত প্রতিবাদ, আন্দোলনের মধ্যেও আছে হতাশা। 

যেরকম জ্বলন্ত প্রদীপের নিচে থাকে অন্ধকার তেমনি ভারতবর্ষের সাম্প্রতিকতম নজির যথেষ্ট উদ্বেগে ও আতঙ্কের ছাপ ফেলেছে। ২০২২র ১৫ আগস্ট গুজরাট গণহত্যার সময় ধর্ষিত বিলকিস বানোর ১১ জন ধর্ষণকারীরকে মুক্তি দিল গুজরাট সরকার। 

শুধু বিলকিসকে ধর্ষণই নয়। তার চোখের সামনে তাঁর তিন বছরের শিশু কন্যাকে মাটিতে আছড়ে হত্যা করেছিল ওই ১১ জন। বিলকিস বানোর পুরো পরিবারকে খুনও করেছিল তারা। তারপরও বিশেষ আইনি অধিকারে সেই ১১ জনকে মুক্তি দেয় গুজরাটের বিজেপি সরকার। সহায়তা করে কেন্দ্রে তাদেরই সরকার। 

এমনকি একজন বিজেপি বিধায়কের নেতৃত্বে ওই ১১জন ধর্ষণকারীকে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। তাদের কৃতিত্ব গুজরাট গণহত্যায় একজন মুসলিম মেয়েকে ধর্ষণ করার! বিজেপি আরএসএস’র প্রকট হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার এমনই। মুসলিম দলিতদের ওপরে অত্যাচার জারি করা ও ব্রাক্ষ্মণ্যবাদ কায়েম রাখা।

সেই একই ছবি উত্তর প্রদেশে হাথরসেও। হাথরসে দলিত কন্যা ধর্ষণকারীদের মধ্যে তিনজনকে মুক্তি দিয়েছে আদালত। তাদেরও মালা পড়িয়ে মহাসমারোহে বরণ করা হয়। বার্তা এই যে দলিত তরুণীকে ধর্ষণ করে ‘বীরত্ব’ দেখিয়েছে উচ্চবর্ণের এই যুবকরা। 

৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে পালন করতে দু’দিন আগে থেকেই ময়দানে নেমে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। হোয়্যাটসাপ, টুইটার, ফেসবুকে মেসেজ স্টিকারের ছড়াছড়ি। নারী আমি সব পারিগোছের কবিতা, ছড়ায় ছড়াছড়ি। 

প্রশ্ন হলো, নারী দিবস পালনের এমন সমারেহে বিলকিস বানো বা হাথরসের নিহত কন্যাদের ভুলে থাকা যাবে কিনা।

Comments :0

Login to leave a comment