First phase of campaigning ends in Bihar

বিহারে প্রথম দফার প্রচার শেষ

জাতীয়

একদিকে বিভাজনের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক উসকানি, অন্যদিকে বিহারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার, কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি। শাসক এনডিএ এবং বিরোধী মহাগঠবন্ধন—বিবাদমান দু’পক্ষের প্রচারের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবেই ধরা পড়েছে গত কয়েকদিন ধরে। মঙ্গলবারই শেষ হলো প্রথম দফা নির্বাচনের প্রচার। ভোটগ্রহণ ৬ তারিখ, বৃহস্পতিবার। এদিন সেজন্য বিহারে শেষ পর্যায়ের ‘হাই ভোল্টেজ’ প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন দু’পক্ষেরই ‘তারকা’ প্রচারকরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন অবশ্য ছিলেন না, তবে বিজেপি’র হয়ে বিদ্বেষ প্রচারে ব্যস্ত থাকলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। এই প্রশ্নে অবশ্য এদিন শাহকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন আদিত্যনাথ। তিনি জানিয়ে দিলেন, এবার এনডিএ ক্ষমতায় ফিরলে বিহারের যে সমস্ত জায়গার নামের সঙ্গে মুসলিম বিষয়টি জড়িত, সেগুলি একবারে বদলে দেওয়া হবে। উত্তর প্রদেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘‘যেমন ‘মহিউদ্দিননগর’-এর নাম বদলে ‘মোহননগর’ করা হবে। সমস্ত ধরনের দাসত্বের চিহ্ন মুছে ফেলা হবে।’’ শাহ আবার বিহারের সমস্যাকে দূরে সরিয়ে রেখে এদিন তাঁর প্রচারে টেনে আনলেন পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রসঙ্গ। গলার শির তুলে শাহ হুঙ্কার দিলেন, ‘‘আবার হামলা করতে এলে উপযুক্ত জবাব পাবে। গুলির জবাব গুলিতেই দেওয়া হবে।’’ আবার মহাগঠবন্ধন’র তরফে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ফের প্রধানমন্ত্রীকে তোপ দেগে বললেন, ‘‘উনি বিহার তথা দেশের প্রকৃত সমস্য থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে যুবসমাজকে রিলস, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক’র নেশায় বুঁদ করে রাখতেই চান।’’ এরই সঙ্গে মোদী এবং শাহের বিরুদ্ধে ফের এসআইআর’র নামে ‘ভোট চুরি’র অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘এনডিএ এবার ক্ষমতায় আসতে পারবে না বুঝে গিয়েই ওই দুজন মিলে ‘ভোট চুরি’র চক্রান্ত করেছেন।’’
এদিন আদিত্যনাথ মহিউদ্দিন নগর কেন্দ্রে দাঁড়িয়েই সাম্প্রদায়িক উসকানি ছড়ালেন। বিজেপি যে বিভাজনের রাজনীতিতেই ভোট করতে চাইছে, তা আরও স্পষ্ট করে দিতে আদিত্যনাথ এদিন বলেন, ‘‘এখানকার ভাই-বোনেরা শুনে রাখুন। এনডিএ ক্ষমতায় এলে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা হবে। এটা সম্ভব। মহিউদ্দিন নগরের নাম বদলে মোহন নগর করা হবে। উত্তর প্রদেশে আমরা করে দেখিয়েছি। ফৈজাবাদকে অযোধ্যা এবং এলাহাবাদকে প্রয়াগরাজ করেছি।’’ মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার কিংবা তাঁর দল জনতা দল (ইউ) এই প্রশ্নে সহমত না হলেও মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়াতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করছেন না আদিত্যনাথ বা তাঁর দলের অন্য নেতারা। যেমন বিজেপি নেতারা নীতীশ কুমার জন্মস্থান বক্তিয়ারপুরের নাম বদলে ‘নীতীশ কুমার নগর’ করতে চাইলেও তিনি রাজি হননি।
রাহুল গান্ধী দেরিতে শুরু করলেও প্রথম দফায় ৭টি জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। এদিন আওরঙ্গাবাদ এবল গয়ার জনসভায় তিনি নিশানা করেন মোদীকেই। তাঁর অভিযোগ, ‘প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পিতভাবেই যুবসমাজকে সামাজিক মাধ্যমের নেশায় জড়িয়ে রাখতে চাইছেন। যাতে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, পরিযায়ী, বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো জ্বলন্ত সমস্যা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়।’ তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বিহারে এসে সস্তায় ডেটা চিপ দেওয়ার কথা বললেন। যুবসমাজ খুশি হলো। কিন্তু আসল কথা গোপন করে গেলেন। আপনারা ডেটা ব্যবহার করবেন যত বেশি তত মুনাফা লুটবে বড় বড় টেলিকম কোম্পানিগুলি।’’ মোদী-শাহ জুটি ‘ভোট চুরি’-তে মদত যোগাচ্ছেন অভিযোগ তুলে তিনি উলটে বলেন, ‘‘মোদী-শাহ মিলে ‘ভোট চুরি’ করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছেন। এই কাজ ওঁরা মহারাষ্ট্র, হরিয়ানায় করেছেন। এখন বিহারে করতে চাইছেন।’’ তবে রাহুল গান্ধীর বিশ্বাস, বিহারের মানুষ এই চক্রান্তকে পরাস্ত করবেন। তিনি জানিয়ে দেন, ‘মহাগঠবন্ধন সরকার গড়লে সেই সরকার হবে সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অংশ, সামাজিকভাবে প্রান্তিক এবং দলিতদের।’ বিহারের এনডিএ সরকার যুবসমাজকে ভিন রাজ্যের শ্রমিকে পরিণত করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে বলেন, ‘‘নীতীশ কুমার নামেই মুখ্যমন্ত্রী, ওঁকে চালনা করে বিজেপি।’’
শাহ এদিন তিন জায়গার প্রচারে তাঁর ভাষণে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তোপ যেমন দেগেছেন তেমনই অনুপ্রবেশের জুজু দেখিয়েছেন বিহারবাসীকে। আরজেডি-কংগ্রেস বিহারে অনুপ্রবেশকে মদত জোগাচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন। নির্বাচন বিহারে আর শাহ জানালেন, ‘‘একমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বেই বিহারের সর্বাত্মক বিকাশ সম্ভব।’’ অর্থাৎ শাহ বুঝিয়ে দিলেন যে, নীতীশ কুমার বা তাঁর দল সঙ্গে থাকলেও বিহারের রাশ নিজেদের হাতেই রাখতে চায় বিজেপি।
এদিকে, এদিন বিভূতিপুরে সিপিআই(এম) প্রার্থী অজয় কুমারের সমর্থনে এক বিশাল সমাবেশ হয় তরুণিয়া ময়দানে। গোটা সমাবেশে মানুষের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এই সমাবেশে ভাষণ দেন মহাগঠবন্ধন’র মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদব। তিনি অজয় কুমারেকে জয়ী করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘নীতীশ কুমার সরকার ২০ বছরে যা করতে পারেনি মহাগঠবন্ধন সরকার গড়লে ২০ মাসে তা করে দেখিয়ে দেবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment