দলবদলে মানুষের লাভ হচ্ছে না। বরং, সবচেয়ে ক্ষতি হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকারের। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে শিলিগুড়িতে এই মন্তব্য করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। দার্জিলিঙ পৌরসভায় দলবদল নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। রাজ্য, দেশ বা পাহাড়ের ভালোর পক্ষে পাহাড়ের মানুষকে অবস্থান নেওয়ার আবেদনও জানান তিনি।
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় সেলিমকে। তিনি পার্টির অবস্থান সাফ জানিয়ে বলেন যে দুর্নীতির অভিযোগ তৃণমূলের মতো শুভেন্দুর বিরুদ্ধেও আছে। এমনকি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতেও বড় অভিযোগ উঠেছে। সেলিম বলেন, মমতা ব্যানার্জি, অভিষেক, শুভেন্দু- সকলেরই গাঁটছড়া বাঁধা রয়েছে।
রবিবার শিলিগুড়িতে অনিল বিশ্বাস ভবনে সিপিআই(এম)’র বৈঠকে যোগ দেন সেলিম। বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি। সেলিম বলেছেন, ‘‘কেন্দ্র আর রাজ্য সরকারের দুর্নীতি, জনস্বার্থবিরোধী পদক্ষেপে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয় উঠেছে, রোজগারহীন মানুষ অসহায় অবস্থায় পড়েছিলেন। এখন গোটা রাজ্য জুড়েই লাল ঝান্ডার নেতৃত্বে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। মানুষ হিসেব বুঝে নিতে চাইছে।’’
নভেম্বরেই হামরো পার্টির হাতছাড়া হয়েছে দার্জিলিঙ পৌরসভা। ৬ জন কাউন্সিলর দলবদল করায় পৌরসভার দখল নেয় অনীত থাপার ভারতীয় গণতান্ত্রিক গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (বিজিপিএম)।
তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়েই অনীত থাপা পৌরসভার দখল নেন। রাজ্যজুড়ে পঞ্চায়েত, পৌরসভায় এমন বহু দলবদল এবং বোর্ড দখল চলছে সরকারে তৃণমূল কংগ্রেসের মেয়াদে। বিরোধীরা জয়ী হলেও সেই বোর্ড নানাভাবে দখল নিচ্ছে তৃণমূল। জাতীয় স্তরে বিভিন্ন রাজ্যে ঠিক একই ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে বিজেপি’কে।
দলবদল প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষ অসহায়। দলবদলে মানুষের লাভ হচ্ছে না। তাঁদের প্রতিদিনের সমস্যার সমাধান হয়নি। কিন্তু দলবদলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকারের।’’
রাজনৈতিক দলের দায়িত্বের প্রসঙ্গে জোর দেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলির দায়িত্ব রয়েছে। গণতন্ত্রে একটা কাঠামো থাকে। পৌরসভা, পঞ্চায়েত বা জিটিএ- যে কোনও প্রতিষ্ঠান চালানোর পদ্ধতি থাকে। গণতান্ত্রিক পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক দলগুলিকেও গণতান্ত্রিক মনোভাব দেখাতে হয়। সেখানে প্রতিদিন কেনাবেচা, দলবদল, টাকা পয়সার লেনদেনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্ষতি হচ্ছে।’’
পাহাড় প্রসঙ্গেই সেলিম বলেন, ‘‘অনীত থাপাকে সামনে রেখে তৃণমূল গুটি সাজানোর চেষ্টা করে থাকতে পারে। তবে কে যে কার লোক বুঝতে সময় লাগে। তবে এসবে মানুষের কোনও লাভ হচ্ছে না।’’
দোতলা তিনতলা বাড়ির মালিকের নাম আবস যোজনায়, আর গৃহহীন গরিবের নাম নেই। তৃণমূলী প্রধান উপপ্রধান, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি, ব্লক সভাপতিরা টাকা নিয়ে নাম ঢুকিয়েছে। আর প্রবল শীতে গরিব মানুষ গাছের তলায় দিন কাটাচ্ছে। বিডিও’র কাছে গিয়ে ঘরের দাবি করলে উল্টে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। নন্দকুমারে পুলিশ দিয়ে মারধর করেছে।
গত অক্টোবর নভেম্বর মাস থেকে সিপিআই(এম)’র ডাকে শুরু হওয়া গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও অভিযান কর্মসূচী ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সেলিম বলেন, রাজ্য সরকার দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকেই তছনছ করে দিচ্ছে, সাধারণ মানুষকে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকার রেশনের অধিকার সঙ্কুচিত করছে। খাদ্যের অধিকার আইনকে ঘনঘন বদলাচ্ছে। একইভাবে বামপন্থীদের দাবিতে ১০০দিনের কাজের অধিকার প্রথম ইউপিএ সরকার চালু করেছিল, সেটাকেও বাড়ানোর পরিবর্তে সঙ্কুচিত করেছে। সরকারের বরাদ্দ কমাচ্ছে। এরাজ্যের সরকার মানুষকে ১০০দিনের কাজের প্রকল্পে ৩০ দিনের বেশি দিতে পারছে না। সেখানেও দুর্নীতি হচ্ছে।
Comments :0