Post editorial

একই ধারাপাতে আর জি কর থেকে মেদিনীপুর

উত্তর সম্পাদকীয়​

দীপ্তজিৎ দাস

সন্তান প্রসবের দু’দিনের মাথায় মৃত্যু হয়েছে প্রসূতি মা মামনি রুইদাসের। মামনির সন্তান বেড়ে উঠবে মাতৃস্নেহ ছাড়া, বিপন্ন শৈশবের প্রতীক হয়ে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগ ‘মাতৃমা’-তে গত ১০ জানুয়ারি মৃত্যু হয়েছে মামণি রুইদাসের। ৯ জানুয়ারি থেকেই গুরুতরভাবে অসুস্থ ছিল মামণি রুইদাস সহ আরও ৪ জন প্রসূতি মা। তারা এখনও সঙ্কটজনক অবস্থায় মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন। অথচ গর্ভাবস্থার শুরু থেকে সন্তান প্রসবের সময় পর্যন্ত প্রত্যেকেই ছিলেন নিরোগ। সরকারি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার পর হঠাৎ এমন মর্মান্তিক পরিণতি কাদের বদান্যতায় জানতে চায় আমজনতা।
          যদিও সমস্ত প্রশ্নের কিনারা করে ফেলেছে রাজ্য সরকার! ঠিক যেমন তিলোত্তমা কাণ্ডের পরপরই সমস্ত হিসাব মিলিয়ে সঞ্জয় রায়কেই একমাত্র অপরাধী চিহ্নিত করেছিল রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, ‘গাফিলতি হয়েছে। যারা জানে না তারা গেছে সিজার করতে। উলটোপালটা অ্যানাস্থেসিয়া দিয়েছে।’ স্বাস্থ্য দপ্তরের ১৩ জন বিশেষজ্ঞের টিম এবং সিআইডি যে প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছে তার বয়ান মোটামুটি কাছাকছি। দোষী সাব্যস্ত করে নিলম্বিত করা হয়েছে ১২ জন চিকিৎসককে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী সেদিন রাতেই কোতোয়ালি থানায় চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা করেছে সিআইডি। সিনিয়র ডাক্তারদের অনুপস্থিতিতে জুনিয়র ডাক্তাররা অপারেশন করাতেই এই দুর্ঘটনা। দায়ী জুনিয়রদের ব্যর্থতা এবং সিনিয়রদের উদাসীনতা। 
        আসলে মেদিনীপুর কাণ্ডে ডাক্তারদের দোষারোপ করা যে শ্যাডো ব্লেমিংয়ের চেষ্টা তা প্রমাণিত হয়ে গেছে মামণি রুইদাসের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট জানাচ্ছে প্রসূতির মৃত্যু কারণ সেপটিক শক। অর্থাৎ শরীরে কোনও সংক্রমণ থেকে প্রদাহ জনিত কারণে রক্তচাপ কমে শকে চলে যান তিনি। পাশাপশি মামণির শরীরে মিলেছে ডিআইসি (ডিসেমিনেটেড ইন্ট্রাভাসকুলার কোয়াগুলেশন) অর্থাৎ বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার নমুনা। আবার জরায়ুর বর্ণনায় বলা আছে সেখানে কোনও বাহ্যিক আঘাতের চিহ্ন নেই। ক্ষতস্থান পরিষ্কার এবং পোক্তভাবে সেলাই করা। অর্থাৎ সংক্রমণের কারণ অপারেশনে ত্রুটি নয়। 
     এই ধরনের সংক্রমণ এবং ডিআইসি সাধারণত ঘটে থাকে কোনও ওষুধ বা রাসায়নিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়। এই কারণেই গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন রোগীকে দেওয়া সমস্ত ওষুধ এবং স্যালাইনের গুণমান। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা শুরু থেকেই আঙুল তুলে এসেছিলেন ব্যবহৃত স্যালাইন রিংগার ল্যাক্টেটের প্রতিক্রিয়ায় দিকে। এছাড়াও সন্দেহের তালিকায় আছে অক্সিটোসিন নামক ড্রাগও।
      সাধারণভাবে ডিহাইড্রেশন কাটাতে এই স্যালাইন সকল মেডিক্যাল ফেসিলিটিতেই বহুল ব্যবহৃত হয় রিঙ্গার লাক্টেট। তবে এই স্যালাইনের গুণগত মান তারতম্য হলে তা কিডনি, লিভার, ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরেই রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে ব্যবহৃত পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস নামক কোম্পানির তৈরি রিঙ্গার ল্যাকটেট নিয়ে একাধিক অভিযোগ এসেছিল। বিভিন্ন ওয়ার্ডে এই স্যালাইন চালানোর পরই রোগীদের কাঁপুনি হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। গত এপ্রিল মাসে ডায়মন্ডহারবার, মালদহ, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে রিঙ্গার ল্যাক্টেট ব্যবহারের ফলে প্রসূতিদের অবস্থার অবনতির কথা সামনে আসে। নভেম্বর মাসেও রানাঘাট এবং বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে এই স্যালাইনের বোতলে ছত্রাক ভাসতে দেখে যায়। ৭ ডিসেম্বর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেই। নভেম্বর মাসে কর্নাটকের বেল্লারি জেলা হাসপাতালে পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের সরবরাহ করা এই স্যালাইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ৪ জন প্রসূতির মৃত্যু হলে কর্নাটক সরকার এই সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করে এবং সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের কাছে অভিযোগ জমা করে।
        প্রসব চলাকালীন রক্তপাত নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বহুল ব্যবহৃত ড্রাগ হলো অক্সিটোসিন। কিন্তু অক্সিটোসিনের মান ঠিক না হলে তা হিমোলাইসিস, কিডনি নেক্রোসিসের মতন মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। কেন্দ্র সরকারের পলিসি অনুযায়ী কর্নাটকের নির্দিষ্ট একটি সংস্থা এই ওষুধ তৈরি করত। কিন্তু এর গুণমান নিয়ে একাধিক প্রশ্ন ওঠায় ২০১৯ সালে দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের পর অন্যান্য সংস্থা এই ওষুধ তৈরির সুযোগ পায় কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখনো কর্নাটকের সংস্থার অক্সিটোসিনই ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এক সমীক্ষায় দেখা যায় কেবল এই নির্দিষ্ট অক্সিটোসিন ব্যবহারের ফলে ১৮ বছরের নিচে ১৮ শতাংশ এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ১২ শতাংশ প্রসূতির মৃত্যু ঘটছে যারা পুরো গর্ভাবস্থায় সুস্থ ছিল।
        দাগী স্যালাইন, দাগী ওষুধ থেকেই প্রশ্নের তির ঘুরছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের দিকে। স্যালাইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে মে মাসে স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল কলকাতায় ড্রাগ কন্ট্রোলের সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরিতে। কয়েকটি ব্যাচের স্যালাইন সেই সময় গুণমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় কিন্তু সবকটি ব্যাচের পরীক্ষার ফলাফল তখন জানানো হয়নি। যে ‘৩২৯৬ নং’ ব্যাচের স্যালাইন ব্যবহারের ফলে এই মৃত্যু সেই ব্যাচের পরীক্ষার ফলাফলও জানানো হয়নি হাসপাতালগুলোকে। সময়ে পরীক্ষা করা গেলে মৃত্যুর মুখে পড়তে হতো না ২৫ বছরের তরতাজা তরুণীকে। 
     বেল্লারির ঘটনার পর সিডিএসসিও (সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন) এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর যৌথ পর্যবেক্ষণ চালায় পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের চোপড়ার কারখানায়। পর্যবেক্ষণে গুণমান এবং জীবাণুমুক্তকরণের অটোক্লেভ প্রক্রিয়ায় গুরুতর ত্রুটি ধরা পড়ে। যৌথ সিদ্ধান্তে ১০ ডিসেম্বর থেকে সংস্থাটির উৎপাদন এবং সরবরাহ বন্ধের নোটিস জারি হয়। কিন্তু তখনও রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা পৌঁছায়নি। নতুন বছরের ৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বিভিন্ন হাসপাতালের এমএসভিপি এবং জেলাগুলোর মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে নোটিস পাঠিয়ে বলা হয় পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদন, সরবরাহ বন্ধ থাকায় হাসপাতালে তাদের সরবরাহ করা ১৪টি ওষুধের কোনও ঘাটতি দেখা দিলে তা যেন লোকাল পার্চেসের মাধ্যমে স্থানীয় দোকান থেকে কিনে নেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে মজুত অভিযুক্ত কোম্পানির প্রোডাক্ট ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা তখনো দেওয়া হয়নি। কিসের জন্য গুণমান পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়া ওষুধ কোম্পানির ওষুধ এবং স্যালাইন এক মাস পরেও হাসপাতালগুলোতে বন্ধ করার প্রয়োজন বোধ করল না রাজ্য সরকার? অবশেষে মামণি রুইদাসের জীবনের বিনিময়ে ১০ জানুয়ারি বিভিন্ন হাসপাতালে হোয়াটসঅ্যাপ মারফত বার্তা পাঠিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রোডাক্ট সিল করে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ আসে স্বাস্থ্য দপ্তরের থেকে। তার আগে পর্যন্ত  রিঙ্গার ল্যাক্টেট ছাড়াও নরমাল স্যালাইন, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল ইনফিউশন, সংক্রমণ কাটানোর ওফ্লক্সাসিন, লিভোফ্লক্সাসিন সহ পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি করা ১৪টি ওষুধ সমস্ত সরকারি হাসপাতালে ব্যবহৃত হয়েছে। কালো তালিকাভুক্ত করার পরও দীর্ঘদিন সরকারি হাসপাতালে সেই কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার কি স্রেফ উদাসীনতা ? নাকি এর পিছনেও লুকিয়ে রয়েছে ‘ঘোষ্ট শিল্ডিং’? জবাব দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
      পর্দার পিছন থেকে উঠে এসেছে বিভিন্ন রহস্যময় সংযোগ। ফারিস্তা বাণিজ্য লিমিটেড ওষুধ তৈরির কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল তৈরি করে ২০১৪ সালে। ২০১৫ সালেই থেকে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহের বরাত জোটে তাদের। বর্তমানে এই সংস্থার ৪ জন ডিরেক্টরই বোর্ডে যোগ দেন ২০১১ সালের পরে। তাদের দু’জনের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাজ্যের শাসক দলের। অভয়াকাণ্ড থেকে শিরোনামে থাকা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকদের নর্থ বেঙ্গল লবির বিভিন্ন মাথার সাথেও সখ্যতা ছিল শিলিগুড়ির এই সংস্থার। সখ্যতা থেকেই তৃণমূল এখন ব্যস্ত পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসকে বাঁচাতে। সেই লক্ষ্যই বিস্তর অভিযোগের পরও সিআইডি’র তদন্তের তালিকায় নেই দাগী ওষুধ কোম্পানি। এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি এই সংস্থার বিরুদ্ধে।
      ২০০৮ সালে ওষুধের টেন্ডারের জন্য বামফ্রন্ট সরকার বেস প্রাইস সিস্টেম চালু করে। কোনও ওষুধ তৈরির উপকরণের দাম, বাজারজাতকরণের খরচ, পরিবহণের খরচ নিয়ে রাখা ধার্য টেন্ডারের বেস প্রাইসের কম দামে কোনও টেন্ডার এলে তা নির্দ্বিধায় খারিজ করা হতো। কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫-১৬ সাল থেকে তুলে দেয় বেস প্রাইস সিস্টেম। ফলে অনেক কম দামে টেন্ডার ধরে নিম্নমানের ওষুধ জোগান দিচ্ছে কিছু মুনাফাখোর কোম্পানি। তৃণমূল জমানায় একাধিকবার সামনে এসেছে সরকারি হাসপাতালে জাল ওষুধের সন্ধানের ঘটনা। গত বছর এপ্রিল মাসে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে এসএনসিইউতে বাচ্চাদের শ্বাসকষ্টের ওষুধ সিলডেনাফিল দিতে গিয়ে ওষুধের ভায়ালে ছত্রাক আবিষ্কার করেন এক নার্স। যদিও সেই ওষুধের জোগান দেওয়া বেলেঘাটার কোম্পানির বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। আর বিজেপি আমলে জাল ওষুধের করবার ছড়িয়েছে সারা দেশজুড়েই। 
      মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় দায় এড়াতে পারে না কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। কর্নাটকের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিডিএসসিও এবং রাজ্যে ড্রাগ কন্ট্রোলের যৌথ পর্যবেক্ষণের পরই উৎপাদন বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসকে। কিন্তু তৎক্ষণাৎ যদি কেন্দ্রীয় সংস্থা অভিযুক্ত কোম্পানির সমস্ত ওষুধ বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিতো তাহলে হয়তো এড়ানো যেতো প্রসূতি মৃত্যু। 
       গতবছর আর জি করে মেডিক্যাল কলেজে অভয়ার খুন বেআব্রু করেছিল রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা দুর্নীতিকে; সামনে এসেছিল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে কুখ্যাত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের নেতৃত্বে ঘটে চলা দুর্নীতির কাহিনি। বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য, মৃতদেহ পাচার থেকে টেন্ডার, পার্কিং লট থেকে কাটমানি নেওয়া উন্মোচিত হয়েছিল নিকৃষ্ট ভ্রষ্টাচারের ছবি। এই দুর্নীতির জাল ছড়িয়ে ছিল গোটা সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাতেই। দুর্নীতি চর্চায় সামনে এসেছিল শাসক দলের ডাক্তারদের উত্তরবঙ্গ লবির কথা। কোভিডকালে পিপিই কিট, জীবনদায়ী ওষুধের দুর্নীতি, ওষুধের টেন্ডারে দুর্নীতি, চিকিৎসকদের পছন্দের জায়গায় বদলির বিনিময়ে টাকা তোলা, পড়ুয়াদের পাশ করিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে টাকা তোলা, কার্যত বাংলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পরিণত হয়েছে দুর্নীতির স্ফিয়ারে। এই দুর্নীতিরই অংশ জাল ওষুধের কারবার। 
     সন্ত্রাসের রাজত্বেই ফুলেফেঁপে ওঠে দুর্নীতির বহর। তাই হাসপাতালগুলোতে দুর্নীতির পান্ডাদের অধিকাংশই যুক্ত ছিল ‘থ্রেট কালচার’-এর সাথে। এই মাফিয়াদেরই দেখা গিয়েছিল অভয় হত্যার পর ক্রাইম সিনে তথ্য প্রমাণ লোপাটের উদ্যোগে। এদের হাত ধরেই হাসপাতালগুলোতে রমরমা দুর্নীতিচক্রের। বাংলাজুড়ে নাগরিক সমাজ যখন উত্তাল অভয়ার ন্যায় বিচারের দাবিতে তখনই স্লোগান উঠেছিল থ্রেট কালচারের অবসানের।      

বিগত ১৪ বছর পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এসেছে তৃণমূল। তারই ফসল হিসাবে বেড়েছে হুমকির সংস্কৃতি, চলেছে অবাধ লুট। সমাজ জুড়ে যখন অবাধ দুর্বৃত্তায়ন তার ছায়া স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পড়তে বাধ্য। অন্ধকাররাজের এফেক্ট আর জি কর হাসপাতালে পৌঁছালে চিকিৎসারত ডাক্তারকে ওয়ার্ডেই ধর্ষণ করে খুনের সাহস পায় মাফিয়ারা। দুষ্কৃতীরাজের দৌরাত্ম্য অবাধ হলেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে বিষাক্ত স্যালাইন সরবরাহের সাহস পায় দুর্বৃত্তরা। এই দুষ্কৃতীরাজকে বৈধতা দিতেই বিচারকে প্রভাবিত করতে চায় তৃণমূল। তাই প্রথম থেকেই সঞ্জয় রায়কে দোষী দাগিয়ে অভয়া কাণ্ডের ফ্রেমওয়ার্ক করে তৃণমূল। সেই ভাষ্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অদৃশ্য সেটিংয়ে প্লট সাজায় সিবিআই। পরিণামে কেবল সঞ্জয়ের যাবজ্জীবনেই অভয়ার বিচারের যবনিকা পতন ঘটাতে চায় রাষ্ট্রব্যবস্থা। এই ধারাপাতেই পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে না কেন্দ্রের নিয়ামক সংস্থা এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। অভয়ার বিচারের দাবিতে এক গণজাগরণের সাক্ষী থেকেছিল বাংলা। বিচারকে ব্যবহার করে সেই উত্তাপ থিতিয়ে দেওয়াই দুই সরকারের উদ্দেশ্য।

 

Comments :0

Login to leave a comment