Election commission

নজরে আরও দুই কেন্দ্র ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম ৪ আধিকারিককে সাসপেন্ড

রাজ্য


ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম 
৪ আধিকারিককে সাসপেন্ড 
নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা, ৫ আগস্ট— ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম নথিভুক্ত করার অভিযোগে রাজ্যের চার আধিকারিককে সাসপেন্ড করার চিঠি পাঠালো নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের নজরে আছে রাজ্যের আরও দুই বিধানসভা কেন্দ্রের সরকারি আধিকারিকরাও।
রাজারহাট-গোপালপুর ও নন্দকুমার এই বিধানসভা কেন্দ্রের প্রায় শতাধিক ভুয়ো ভোটারের অস্তিত্বের প্রমাণ হাতে এসেছে কমিশনের। ফলে এই দুই কেন্দ্রের নির্বাচনের কাজে যুক্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কমিশনের ব্যবস্থা গ্রহণ শুধু সময়ের অপেক্ষা। 
মঙ্গলবার মুখ্যসচিবকে লেখা চিঠিতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সরকার তা কীভাবে কার্যকর করলো তা দ্রুত লিখিতভাবে কমিশনের সদর দপ্তর নয়াদিল্লিতে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। এসআইআর শুরুর আগে কমিশনের এই কড়া অবস্থানকে নজিরবিহীন পদক্ষেপ বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসন। এতদিন বিভিন্নভাবে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা মন্তব্য করে আসছিলেন মমতা ব্যানার্জি। কমিশনের এই চিঠি আসার পর সরকার কী ভূমিকা পালন করে সেটাই দেখার। 
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পূর্ব বারুইপুর ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়না বিধানসভা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে তদন্ত করে ভুয়ো ভোটারের সন্ধান পেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ময়না কেন্দ্রে ৮৭ ও বারুইপুর পূর্ব কেন্দ্রে ৩৮ জন ভুয়ো ভোটারের সন্ধান পেয়েছিল কমিশন। ওই দুই বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও’দের (ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার) তলব করেছিল কমিশন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার সেই রিপোর্ট কমিশনের সিইও দপ্তর থেকে পাঠানো হয়েছিল দিল্লিতে। মঙ্গলবার নয়াদিল্লি থেকে নির্বাচন কমিশনের সচিব সুজিত কুমার মিশ্রের চিঠি এসে পৌঁছায় নবান্নে। মুখ্যসচিবের উদ্দেশ্যে লেখা সেই চিঠি ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের কথা জানিয়ে ময়না ও পূর্ব বারুইপুর—এই দুই বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও এবং এইআরও (অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার)-দের বিরুদ্ধে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চাকরি থেকে সাসপেনশনের পাশাপাশি অভিযুক্ত চার আধিকারিকের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করার নির্দেশ রাজ্যে পাঠিয়েছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বারুইপুর ও ময়না এই দুই বিধানসভা কেন্দ্রের সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার রাজারহাট-গোপালপুর ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দকুমার বিধানসভা কেন্দ্রে গত তিন চার মাস আগে ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত হওয়া ভোটারদের মধ্যে থেকে তথ্য যাচাই করার জন্য নমুনা সমীক্ষা করেছিল কমিশন। সেই নমুনা সমীক্ষাতেও ফের অস্তিত্বহীন ভুয়ো ভোটারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজারহাট-গোপালপুর ও নন্দকুমার বিধানসভায় প্রায় শতাধিক অস্তিত্বহীন ভুয়ো ভোটারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। একটি আধার কার্ড ব্যবহার করে একাধিক অস্তিত্বহীন ভোটারের নাম ‘ফরম ৬’ পূরণ করে নথিভুক্ত করে নেওয়া হয়েছে। রাজারহাট-গোপালপুর ও নন্দকুমার এই দুই বিধানসভা কেন্দ্রের অভিযুক্ত ইআরও’দের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা জানতে চেয়ে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরের চিঠি পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুত এই দুই বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনী কাজের সঙ্গে যুক্ত সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে কমিশন।
এরাজ্যে অতীতে ভোটের সময় আদর্শ আচরণবিধি চালু থাকে। তখন নির্বাচনের কাজে যুক্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কমিশনের বিভিন্ন সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নজির আছে। মূলত নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে আধিকারিকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এবার প্রথম নির্বাচন তো দূর অস্ত, ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজ চালু হওয়ার আগে রাজ্য প্রশাসনের চার আধিকারিককে নির্বাচনী কাজ থেকে সরানো নয়, চাকরি থেকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ পাঠালো কমিশন। চিঠি নবান্নে আসার পর এখনও রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী এদিনই হুগলী হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সফরে বেরিয়ে গিয়েছেন। রাজ্য প্রশাসনের চার শীর্ষ আধিকারিককে সরানো নিয়ে সরকার কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। 
মুখ্যসচিবকে লেখা চিঠিতে কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছে রাজ্য সরকারের কর্মচারী হলেও নির্বাচনী কাজে যুক্ত সরকারি আধিকারিকরা নির্বাচনের কমিশনের আওতাভুক্ত। ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১৩ নং ধারার কথা জানানো হয়েছে। মুখ্যসচিবকে কমিশনের সচিব চিঠি দিয়ে চার অভিযুক্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৩২ নং ধারার ১ নং উপধারার কথা উল্লেখ করেছেন। যাতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনের কাজে যুক্ত আধিকারিকদের কোনও বিচ্যুতি প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে জেলযাত্রার মতো শাস্তির ব্যবস্থা আছে। 
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সাসপেন্ড করার কথা বলা হয়েছে বারুইপুর-পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও দেবত্তম দত্ত চৌধুরিকে। ২০১২ ব্যাচের ডব্লিউবিসিএস আধিকারিক বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার গ্রামোন্নয়ন সেলের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর পদে ছিলেন। ওই একই কেন্দ্রের এইআরও তথাগত মণ্ডল জয়নগর ১ ব্লকের রেগা সেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম অফিসার। এছাড়াও সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও বিপ্লব সরকার এবং ওই বিধানসভা কেন্দ্রেরই এইআরও সুদীপ্ত দাসকে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সংখ্যালঘু বিষয়ক দপ্তরের জেলা অফিসার পদে কর্মরত বিপ্লব সরকার। সুদীপ্ত দাস তমলুক ব্লক পঞ্চায়েত অ্যাকাউন্টস ও অডিট অফিসার হিসাবে কর্মরত। এই চার সরকারি আধিকারিক ডেপুটেশনে নির্বাচন কমিশনের কর্মী হিসাবে কাজ করছিলেন। তাই তাঁরা নির্বাচন কমিশনের আইন মেনে এবং তত্ত্বাবধানে কাজ করবেন এমনটাই দস্তুর। এই চার সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে অবিলম্বে এফআইআর দায়ের করার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসাবে কর্মরত ক্যাজুয়াল কর্মী সুরজিৎ হালদারের বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 
গত শনিবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এর দপ্তরে অভিযুক্ত ইআরও এবং এইআরও দের নিয়ে বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। এরপর সংশ্লিষ্ট দুই জেলা পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা ডিইও-দের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়। জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের রিপোর্ট সহ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরের রিপোর্ট যায় দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে। সমস্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখে অবশেষে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন অভিযুক্ত দুই ইআরও এবং দুই এইআরও-কে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment