জানা অজানা — নতুনপাতা
শিক্ষকরা সম্মানীয় কল্পনা থেকে বাস্তবে
তপন কুমার বৈরাগ্য
আন্তর্জাতিক শিক্ষকদিবস পালিত হয় ৫ই অক্টোবর। একশোটা দেশে এই আন্তর্জাতিক শিক্ষকদিবস পালিত হয়।
আমাদের প্রাচীন অনেক কাহিনি আছে।যে গুলো
শিশুর অনেক শিক্ষনীয় বিষয় হতে পারে।এর মধ্যে
আছে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ,রামায়ণ,মহাভারত,বেদ পুরাণ
এবং আরো কতো কিছু। আমাদের পুরাণে আছে
বৃহস্পতি ছিলেন দেব -দানবের শিক্ষাগুরু।তাঁর মনটা ছিলো ফুলের মতন নরম। তিনি ছিলেন নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রতীক।
তিনি শুধু শিক্ষাগুরুই ছিলেন না।তিনি ছিলেন বাগ্মীতার
প্রতীক।দেবতাদের পরামর্শদাতা।তাঁর পিতা ছিলেন অঙ্গিরা
এবং মাতা ছিলেন সুরূপা। ছেলেকে তাঁরা আদর্শ ছেলেরূপে
গড়ে তুলেছিলেন।তখনকার শিক্ষা ছিলো আশ্রমিক।
গুরুগৃহে থেকেই শিক্ষালাভ করতে হতো। একজন উপযুক্ত
শিক্ষক হবার পর তিনি আশ্রমিক শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে
মন দিলেন।অচিরেই তাঁর নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
দেব-দানব সকলেই তাঁর কাছে শিক্ষা নিতে এলেন।
তিনি কাউকে ফিরালেন না। আরিষ্টাসুর নামক এক দানবশিশু
তাঁর কাছে শিক্ষা নিতে এলো।বড্ড অহংকারী ছিলো।
সকলকেই তিনি অসম্মান করতেন।তাঁর এই আচরণ নিবৃত্তির
জন্য বৃহস্পতি অনেক করে চেষ্টা করলেন;কিন্তু কোনো ফল
হলো না। একদিন বৃহস্পতি আরিষ্টাসুরকে বললেন--দেখো
বাবা সত্যিকারের মানুষ হতে হলে সবার আগে শান্ত, নম্র,ভদ্র
হতে হবে।দেখছো তো আশ্রমের গাভীগুলো কতো শান্ত।
তাইতো সবাই তাঁদের পূজো করে।
আরিষ্টাসুর জবাবদিলো --আমি গাভী নই,আমি ষাঁড়।আমি
শান্ত নয়,আমি উগ্র।
সেদিন ছাত্রের কথা শুনে- বৃহস্পতি খুব ব্যথা পেলেন।
মুখ দিয়ে নিজের অজান্তেই বেড়িয়ে এলো--তুমি ষাঁড়
হয়েই ভবিষ্যতে জন্ম নেবে।
আরিষ্টাসুরের কথাটা কানে গেল।সে বুঝতে পারলো
গুরুকে এইভাবে অপমান করা তাঁর উচিত হয় নি।
তিনি গুরুদেবের পায়ে পড়ে বললেন--জানি আপনি সত্যবাদী।
তাই এই অভিশাপ কখনো মিথ্যা হবার নয়। এখন বলুন
আমি ষাঁড়ের জীবন থেকে কিভাবে মুক্তি লাভ করবো।
বৃহস্পতি বললেন--তুমি বৃন্দাবনে ষাঁড়রূপে জন্মগ্রহণ
করবে। সেখানে কৃষ্ণের হাতে মৃত্যুর পর তুমি সত্যিকারের
সৎ মানুষ হিসাবে জন্মগ্রহণ করবে।
এরপর আরিষ্টাসুরের মৃত্যু হলে ষাঁড়রূপে বৃন্দাবনে জন্ম
নিলেন।ষাঁড়টা যখন পূর্ণবয়স্ক হয়ে উঠল ,তখন শিং দিয়ে
মানুষকে আঘাতকরে অনেক মানুষকে মৃত্যুর মুখে
ঠেলে দিলো। কেউ ষাঁড়কে বশে আনতে পারল না।
সকলে যশোদা ও নন্দের বাড়ি এলেন। ছোট্ট কৃষ্ণকে
দেখে বলে উঠলেন- হে প্রভু তুমি আমাদের রক্ষা করো।
কৃষ্ণ সব কথা তাঁদের মুখ থেকে শুনে পরমবিক্রমে
ষাঁড়রূপী আরিস্টাসুরকে বধ করলেন।তারপর আরিষ্টাসুর
সৎ মানুষ হিসাবে বৃন্দাবনে জন্মনিয়েছিল
এই পুরাণের গল্প থেকে আমরা শিক্ষা পাই শিক্ষককে
কখনো অসম্মান করতে নেই। অসম্মান করলে তাঁর
ফল আমাদের পেতেই হবে। সত্য বলেন যারা তাঁদের
কথা কখনো মিথ্যা হয় না।আর শেষে যে শিক্ষা পাই
অত্যাচারী একদিন সাজা পাবেই।
মন্তব্যসমূহ :0